gramerkagoj
শুক্রবার ● ১০ মে ২০২৪ ২৭ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj

❒ সাবেক জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশ জড়িত

ভাতা দেয়ার নামে দরিদ্রদের কাছ থেকে অর্থবাণিজ্য
প্রকাশ : শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪, ০৯:৪৭:০০ পিএম , আপডেট : শুক্রবার, ১০ মে , ২০২৪, ১২:০৫:৩৫ এ এম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম:
GK_2024-04-27_662d1e5eda493.jpg

যশোরের সিরাজসিংহা এলাকায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়ার নাম করে অনেক দরিদ্রের কাছ থেকে অর্থ বাণিজ্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সাবেক এক জনপ্রতিনিধির নির্দেশনায় স্থানীয় এক গ্রাম পুলিশ দরিদ্র লোকপ্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ভাতা সংশ্লিষ্টদের নাম ভাঙিয়ে। কিন্তু ওই টাকা সাবেক জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশ পকেটস্থ করেছেন। আর টাকা দিলেও ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগ এখনও ভাতার আওতায় আসেননি।
এ ঘটনায় ওই এলাকায় হৈচৈ শুরু হয়েছে। অর্থ আদায়ে ওই অভিযুক্তরা জড়িত নয় বলে জানালেও স্থানীয় রামনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফ জানিয়েছেন, তার কাছে কমবেশি অভিযোগ এসেছে। এ ঘটনায় খোঁজখবর নিয়ে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, সাবেক এক জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা দেয়ার নামে এলাকায় নানামুখি অর্থবাণিজ্য করেছেন। শুধু ভাতা নয় আর্সেনিক মুক্ত টিউবয়েল দেয়ার নামেও ৮/১০ হাজার টাকা হাতিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। রামনগর ইউনিয়নের সিরাজসিঙ্গা গ্রামের সাবেক এক জনপ্রতিনিধির নির্দেশে গ্রাম পুলিশ ভাতা পেতে আগ্রহীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন।
তথ্যানুযায়ী, হাতিয়ার হাটের মসজিদের মোয়াজ্জিন ওমর বিশ্বাসের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা, সাধন কুমার তরফদারের কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা, দক্ষিণপাড়ার সলেমান গোলদারের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা, রফিক গাজীর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা, খোকন সরদারের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা, করিমন নিসার কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা, মিস্ত্রি পাড়ার গোনু কামারের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা, বিধবা ভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে তরফদার পাড়ার আব্দুল কাদেরের স্ত্রী কদভানুর কাছ থেকে ৪ হাজার টাকা, মানিক হোসেনের স্ত্রী হাসিনা ভানুর কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা, হজরত আলীর স্ত্রী জহুরা বেগমের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা, হাকিম মাস্টারের স্ত্রী আয়েশা বেগমের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ওই সাবেক জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশ চক্রটি। এছাড়া পঙ্গু ভাতার কার্ড করে দেয়ার নামে উসমানের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেয়ার নামে অর্থ হাতালেও এদের মধ্যে বেশিরভাগই ভাতার আওতায় আসেননি। তারা টাকা ফেরত চাইলে সাবেক জনপ্রতিনিধি ও গ্রাম পুলিশ ভুক্তভোগীদের হয়রানী করছেন এবং নানামুখি তালাবাহানা করছেন। আর্সেনিক মুক্ত টিউবয়েল দেয়ার নামে ৮/১০ হাজার টাকা আদায় করে আত্মসাতের ঘটনায় এসেছে নানা তথ্য। মিস্ত্রি পাড়ার উত্তম কুমারের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা, দক্ষিণপাড়া আবুল হোসেনের কাছ থেকে ১২ হাজার টাকা, তরফদারপাড়ার মফিজুর রহমানের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা, উত্তরপাড়ার মাসুদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে চক্রটি।
এদিকে, অভিযুক্ত ওই পুলিশ স্থানীয় বিল্লাল হোসেন হত্যাকান্ডে অভিযুক্ত বলেও তথ্য মিলেছে। সাবেক জনপ্রতিনিধির পরামর্শে এলাকায় পুলিশ এনে নানা ফন্দিফিকির করে চাঁদাবাজি করেছেন এমন অনেক অভিযোগ রয়েছে ওই গ্রাম পুলিশের বিরুদ্ধে।
ভাতা করে দেয়ার নামে টাকা আদায়ের সময় ওই গ্রাম পুলিশ ভুক্তভোগীদের অনেককে জানিয়েছেন, এসব টাকা সমাজসেবা অফিসার, চেয়ারম্যান, সচিব ও মেম্বারদের দিতে হয়। ওই গ্রাম পুলিশের বাড়িতে একটি আস্তানা রয়েছে। যেখানে এলাকার অনেক বিতর্কিত লোকজন আসা যাওয়া করে ওই সাবেক জনপ্রতিনিধির নেতৃত্বে। ভুক্তভোগীদের অনেকের সাথে কথা বললে তারা স্বীকার করেছেন, ঘুষ হিসেবে তাদের টাকা দিতে হয়েছে। তবে বেশিরভাগের ভাতা মেলেনি। হাতেগোনা কিছু লোকের ভাতা হয়েছে।
স্থানীয় লোকজন দাবি করেছেন, হাতিয়ে নেয়া টাকা ভুক্তভোগীর কাছে ফেরত দিতে হবে। এছাড়া বিষয়টি তদন্তের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তর ও স্থানীয় চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজলা সমাজসেবা অফিসার আশিকুজ্জামান তুহিন জানিয়েছেন, কোনো ভাতার কার্ড করতে একটি টাকাও লাগে না। যদি কেউ টাকা নিয়ে থাকেন সেটা ঘোর অন্যায় ও শাস্তিযোগ্য। এ ব্যাপারে তার দপ্তরে অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। ভাতার জন্য কাউকে কোনো টাকা না দেয়ার পরামর্শও দেন তিনি।
এদিকে, রামনগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাহমুদ হাসান লাইফ জানিয়েছেন, সিরাজসিংহাসহ আরো কয়েকটি এলাকায় ভাতার কার্ড দেয়ার নামে চিহ্নিত কেউ কেউ টাকা পয়সা নিয়েছেন বলে তিনিও জানতে পেরেছেন। এ ব্যাপারে তিনি খোঁজখবর নিচ্ছেন। রামনগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠির কাউকে সরকারি যে কোনো সুযোগ সুবিধা পেতে টাকা লাগে না। যদি কেউ টাকা নেয় তাহলে তার কাছে অভিযোগ করলে তিনি ব্যবস্থা নেবেন।
এদিকে অভিযোগের ব্যাপারে মাঠ পর্যায়ে প্রত্যক্ষভাবে অনৈতিক পন্থায় টাকা আদায়ে অভিযুক্ত গ্রাম পুলিশের সাথে কথা বললে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তার নামে রটনা করা হচ্ছে। এর আগেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে অনেকে, কিন্তু প্রমাণ মেলেনি। তার বিরুদ্ধে সংবাদ না লেখার অনুরোধও করেন তিনি।

আরও খবর

🔝