
ঝিনাইদহের হরিনাকুন্ডু উপজেলা সদরেরআবুল হোসেন মালিতার স্ত্রী রুসিয়া বেগম। ছোটবেলায় গ্রামে স্কুল না থাকায় করতে পারেন নি পড়ালেখা। দেখেও দেখেও কোন কিছু পড়তে পারতেন না। তাই ধর্মীয় বিষয়ে কিছু পড়তেও বেগ পেতী হত তার। কিন্তু পড়ালেখার যে কোন বয়স নেই তা আবারও প্রমাণ করলেন রুসিয়া। তাই তো ৬৭ বছর বয়সেও চালিয়ে যাচ্ছেন পড়ালেখা।
বর্তমানে শিশুকলী বিদ্যানিকেতন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণীতে পড়ছেন তিনি। ক্লাসে অন্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পড়ালেখা নিয়ে প্রতিযোগিতাও আছে তার। ক্লাস পরীক্ষায় কখনও এগিয়ে যাচ্ছেন, আবার কখনও একটু পিছিয়ে পড়ছেন। গত বছর তৃতীয় শ্রেণীর পরীক্ষায় রুসিয়াকে টপকে তারই সহপাঠী ১০ বছর বয়সের জান্নাতুল ফেরদৌস প্রথম হয়েছেন। রুসিয়া হয়েছেন দ্বিতীয়। এর পূর্বের বছর রুসিয়ায় ছিলেন প্রথম। রুসিয়া অবশ্য দাবি করলেন ৫ম শ্রেণীর সমাপনী পরীক্ষায় তিনি ভালো ফল করবেন। সে লক্ষ্য দিয়ে পড়ালেখা করে যাচ্ছেন।
রুসিয়া বেগম জানান, কুষ্টিয়ার বৃত্তিপাড়া এলাকার ভগবাননগর গ্রামের তাহাজ উদ্দিনের কন্যা তিনি। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তার বিয়ে হয়। সেই সময়ে মেয়েরা বেশি দুরে গিয়ে পড়ালেখা করতো না। পরিবার থেকে দূরে পাঠাতেন না। তাদের গ্রামে কোনও প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল না, যে কারণে তিনিও স্কুলে যেতে পারেননি। তিনি আরও জানান, বিয়ের পর সংসার করেছেন। স্বামী একটি চাকুরী করেন। তাদের সংসারে ছেলে-মেয়ে, নাতি-নাতিন সবই আছে।
স্বামীও কিছুটা পড়ালেখা জানেন। শুধু নেই তার মধ্যে কোনও বিদ্যা। নিজে কোনও চিঠি পড়তে পারেন না। এমনকি কুরআন শরিফ পড়েও তার অর্থ বোঝেন না। যে কারণে তিনি সিদ্ধান্ত নেন পড়ালেখা শিখবেন। নিরক্ষর হয়ে মৃত্যুবরণ করতে চান না। রুসিয়া বেগম জানান, ২০১৫ সালে তিনি শিশু শ্রেণীতে ভর্তি হন। একবছর পর প্রথম শ্রেণী। এভাবে নিয়মিত ক্লাস করে বছর শেষে পরীক্ষা দিয়ে ক্লাসে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ইতিপূর্বে তার সব ক্লাসে রোল নম্বর ছিল এক, এবছর হয়েছে দুই। তিনি জানান, নিয়মিত ক্লাস করেন, বাড়িতেও ঠিকমতো পড়ালেখা করেন। এভাবে পড়ালেখা চালিয়ে যাবেন।
রুসিয়ার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ জানান, রুসিয়া তার বিদ্যালয়ের নিয়মিত ছাত্রী। অন্যদের মতো তিনিও ক্লাস করেন। বিদ্যালয় থেকে দেওয়া পড়া বাড়ি থেকে করে আসেন। এভাবে তিনি পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই বয়সের একজন ছাত্রী পেয়ে তারাও খুশি। চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস জানায়, সহপাঠী হলেও বয়সের কারণে তারা রুসিয়াকে দাদী বলে ডাকেন। এবার তিনি দাদীকে পেছনে ফেলে প্রথম হয়েছেন। আরেক ছাত্রী রিমি রহমান জানায়, দাদী তাদের অনেক ভালোবাসেন, তারাও দাদীকে ভালোবাসেন।