gramerkagoj
বুধবার ● ৮ মে ২০২৪ ২৫ বৈশাখ ১৪৩১
gramerkagoj
কুয়াকাটা সৈকত ছেয়ে যাচ্ছে জেলিফিশে, মাছ ধরা ব্যাহত
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ , ২০২৪, ০৯:১৫:০০ এ এম , আপডেট : বুধবার, ৮ মে , ২০২৪, ০১:২৬:৪৫ পিএম
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি:
GK_2024-03-26_66023b0335f6b.jpg

কুয়াকাটা সংলগ্ন গভীর বঙ্গোপসাগর থেকে উপকূলে ভেসে আসছে অসংখ্য জেলিফিশ। গত কয়েকদিন ধরে সমুদ্র সৈকতের বিভিন্ন স্থানে মৃত ও অর্ধমৃত জেলিফিশ দেখা যাচ্ছে। সমুদ্রের জোয়ারের সঙ্গে এগুলো ঝাঁকে ঝাঁকে তীরে এসে বালুতে আটকে পড়ায় বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। এ ছাড়া জেলিফিশ আটকে জাল ছিঁড়ে যাচ্ছে এবং মাছ শিকারে দেখা দিয়েছে প্রতিবন্ধকতা। ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন ট্রলার মালিক ও জেলেরা।
গত ২০-২৫ দিন ধরেই সাগরের উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে আসা এসব জেলিফিশ ছড়িয়ে পড়ছে সৈকতের বিশাল এলাকাজুড়ে। গত ১০-১৫ দিন ধরে এর পরিমাণ আশঙ্কা জনক হারে বেড়েছে। জেলিফিশের উপদ্রব জেলেদের সমুদ্রে মাছ ধরা ব্যাহত হচ্ছে।
সরেজমিন কুয়াকাটার বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, বিস্তীর্ণ সৈকত-জুড়ে পড়ে আছে মৃত জেলিফিশ। দখিনা বাতাস এবং জোয়ারের পানির সঙ্গে ভেসে আসছে অসংখ্য জেলিফিশ। কুয়াকাটা লেম্পুচর, ঝাউবনসহ সৈকতের বিভিন্ন স্থানে সেগুলো আটকে আছে। এগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পর্যটকরাও এতে চরম বিরক্ত।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সমুদ্রের পানির তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং সামুদ্রিক কচ্ছপের সংখ্যা কমে গেলে জেলিফিশের উপদ্রব বাড়ে। কেননা সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রধান খাবার জেলিফিশ।
কুয়াকাটা এলাকার জেলে রব কাজী বলেন, 'প্রায় ২০-২৫ দিন ধরে সৈকতে দেখা মিলছে মৃত জেলিফিশের। কুয়াকাটা সৈকতের পশ্চিম দিকে লেম্বুর চর এলাকা থেকে পূর্বে গঙ্গামতি পর্যন্ত মরা জেলিফিশ পড়ে রয়েছে। এগুলোর একেকটির ওজন ১০ থেকে ১৫ কেজি।' 'আমরা এখন সাগরে মাছ ধরতে পারছি না। জাল ফেললেই মরা জেলিফিশ উঠছে। এগুলো শরীরে লাগলে অসহনীয় চুলকানি হচ্ছে। তাই মাছ ধরা বন্ধ রেখেছি', বলেন তিনি।
অপর জেলে হেল্লাল হোসেন বলেন, 'সামনে ঈদ, সাগরে মাছ ধরতে পারছি না। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কীভাবে ঈদ করব, এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি। প্রতি বছরই এ সময়ে জেলিফিশ দেখা যায়। তবে এবারের পরিমাণ খুব বেশি।'
কুয়াকাটার জেলে মো. দেলওয়ার বলেন, ‘আমাদের মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে গত দুই সপ্তাহ ধরে। মাছ ধরতে না পারায় হাজার হাজার টাকা ঋণগ্রস্থ হয়ে পড়েছি।’
ট্রলার মালিক মো. মজিবর বলেন, ‘জেলিফিশ আটকে আমার আটটি জাল নষ্ট হয়ে গেছে। মাছ ধরতে না পারায় এবং জাল ছিঁড়ে যাওয়ায় হাজার হাজার জেলে কয়েক কোটি টাকার লোকসানে পড়েছেন।’
আলীপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মো. শাকিল আহমেদ বলেন, 'সাগরে জেলিফিশের আধিক্যের কারণে জেলেরা মাছ ধরতে পারছেন না। তাই সামুদ্রিক মাছ আহরণের পরিমাণও কমে গেছে। স্থানীয় বাজারেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।'
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, 'রমজান মাসে কুয়াকাটায় এমনিতেই পর্যটকের সংখ্যা কম। তার ওপর সৈকতের বিশাল অংশজুড়ে মরা জেলিফিশের দুর্গন্ধে পর্যটকরা বিরক্তিবোধ করছেন। যদিও স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকার জেলিফিশগুলো মাটি চাপা দিয়ে দুর্গন্ধ কিছুটা কমানোর চেষ্টা করছেন। তারপরও সৈকত-জুড়ে মরা জেলিফিশের উপদ্রবে গোটা পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে।'
কলাপাড়া উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা জানান, প্রতি বছর এ সময়টাতে সাগরে জেলিফিশের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। মূলত ছোট ছোট মাছ ও মাছের ডিম খাওয়ার জন্য এসব জেলিফিশ উপকূলের কাছা কাছি আসে। তখন বালিয়াড়িতে আটকে এগুলো মারা যায়। মাসখানেক পর এগুলো কমে গেলে জেলেরা আবার সমুদ্রে স্বভাবিকভাবে মাছ আহরণ করতে পারবেন।
সামুদ্রিক মাছের প্রজননসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান 'ইকোফিশ'র কলাপাড়ার সহযোগী গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, 'মূলত সাগরের পানির তাপমাত্রা ও গভীর সাগরে লবণাক্ততার পরিমাণ বেড়ে গেলে জেলিফিশের পরিমাণও বেড়ে যায়। সামুদ্রিক কচ্ছপের সংখ্যা কমে গেলেও জেলিফিশের আধিক্য ঘটে। কেননা জেলিফিশ সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রধান খাবার।'

আরও খবর

🔝