শিরোনাম |
❒ অভিযান অব্যাহত রাখার দাবি
যশোর শহরের আলোচিত তিনটি খাবার প্রতিষ্ঠান ‘কাচ্চি ভাই’, ‘জনি কাবাব’ ও ‘অনন্যা ঘোষ ডেয়ারির বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে দায়ের করা মামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই শহরজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে ক্রেতা ও সচেতন নাগরিকরা বিস্ময় ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। অভিযান-সংক্রান্ত প্রতিবেদনটি ‘গ্রামের কাগজ’-এর ফেসবুক পেজে প্রকাশ হওয়ার পর তা মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়। এক ঘণ্টার মধ্যে ভিডিওটি দেখে ফেলেন ২৮ হাজার ব্যবহারকারী। ২৪ ঘণ্টায় এ সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় ১ লাখ ৩৫ হাজারে। মন্তব্যের স্রোতে ৯৯ ভাগ মানুষ অভিযুক্ত তিন প্রতিষ্ঠানের তীব্র সমালোচনা করেন এবং অভিযান পরিচালনাকারী কর্মকর্তাদের প্রশংসা করেন।
অন্যদিকে, এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহুদিনের জমে থাকা অভিযোগগুলোও উঠে আসতে শুরু করেছে। ভুক্তভোগীরা একের পর এক অভিযোগ উত্থাপন করেছেন। অভিযোগ রয়েছে, ‘কাচ্চি ভাই’ প্রতিষ্ঠানটি অসুস্থ ও খাবার অনুপযোগী ছাগল জবাই করে । ‘জনি কাবাব’-এর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত দামের মাধ্যমে ক্রেতাদের ঠকানোর অভিযোগ তো রয়েছেই, সঙ্গে আছে বাজে ব্যবহার ও মানহীন খাবারের প্রসঙ্গ। ‘অনন্যা ঘোষ ডেয়ারি’র বিরুদ্ধে উঠে এসেছে কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার, নোংরা পরিবেশ, এমনকি খাবারে মরা মশা পাওয়ার মতো অভিযোগ। এই তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেই শুধু নয়, আরও অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা ক্রেতাদের জিম্মি করে টাকা আদায়, নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্য বিক্রিসহ নানামুখী অনিয়মে লিপ্ত রয়েছে। ভুক্তভোগীদের ভাষ্যমতে, প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রভাবশালী অবস্থানের কারণে এতদিন মুখ খুলতে পারেননি তারা।
আদালত সূত্র জানায়, ৬ মে যশোরের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফাহমিদা জাহাঙ্গীর এক আদেশে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শান্তনু কুমার মন্ডলকে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার দায়িত্ব দেন। পরদিনই নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও স্যানিটারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মাঠপর্যায়ে অভিযানে নামেন তিনি। অভিযানে উল্লিখিত তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অসংখ্য অনিয়ম ধরা পড়ায় তাৎক্ষণিকভাবে মামলা দায়ের করা হয়।
এদিকে, ওই তিন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান ও মামলা সংক্রান্ত গ্রামেরকাগজের ভিডিও প্রতিবেদনটি মুহুর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়। আসে নানা অভিযোগ।
অসংগতির বিষয়ে কমেন্টে মুখ খুলতে শুরু করে ক্রেতারা। আবার কেউ কেউ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে নানা তথ্য দেন।
প্রকাশিত ভিডিও প্রতিবেদনের কমেন্টস বক্সে কামরুল হাসান লিখেছেন, কাচ্চি ভাই অধিকাংশই অসুস্থ্য ছাগল জবাই করে যা খাবার উপযেগী না। খন্দকার নীদ লেখেন, এরআগেও কাচ্চিভাইতে আর্টিফিশিয়াল কালার মেশানোর মামলা হয়েছিলো যা তারা স্বীকার করেছে। সুমন আদনান লেখেন, কাচ্চি ভাইয়ের ব্যবহার এতো বাজে তা কল্পনা করা যায়না। এর বাইরেও অনেকেই কাচ্চি ভাই সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেন ।
অন্যদিকে কমেন্ট বক্সে শ্রাবনী রায় লেখেন, অনন্যার ভাবের জন্য কথাই বলা যায়না। তাদের কর্মচারীদের ব্যবহার চামারের মতন। নাজনীন রিমিও একই অভিযোগ করেন। সাইদুর রহমান লেখেন, মনোপলি ব্যবসা তাদের অহংকারী করে তুলেছে। জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চল মন্তব্য করেন, অনন্যা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া জরুরী। ফারিয়া ইসলাম নামের আরেকজন লেখেন, অনন্যার স্টাফদের ব্যবহার অনেক খারাপ। নোংরা পরিবেশ। খাবারের মধ্যে মরা মশা পাওয়া যায়। এমডি আব্বাস আলী লেখেন , অনন্যা বন্ধ করা হোক। জাকির পারভেজ রিপন লেখেন, দূর্ব্যবহার ও খারাপ ব্যবহারের জন্য বিখ্যাত অনন্যা ঘোষ ডেয়েরি। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসনের সব সময় নজরদাবি দাবি করেন তিনি। আবু সিয়াম লেখেন, অনন্যা কাস্টমারদের মানুষ মনে করে না।
এছাড়া, জনি কাবাব সম্পর্কে আবু সিয়াম লেখেন, জনি কাবাব ডাকাতের মত দাম রাখে। এদের ১০ গুন জরিমানা করা উচিৎ। সিরাজুল ইসলাম লেখেন, জনি কাবাব পুরোটাই দুই নাম্বার। কাস্টমার ঠকিয়ে ওরা ব্যবসা করে। এছাড়াও জনি কাবাব সম্পর্কে অনেক নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়।
এর বাইরেও নানা ধরনের মন্তব্য করেন অনেকেই। তাদের মধ্যে এমডি রিপন আলী লেখেন, এদের থেকেও বেশী খারাপ অবস্থা আরেক প্রাচীন প্রতিষ্ঠান জলযোগে। তিনি জলযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান। একই দাবি জানান, নুসরাত জামান।
মারুফ হোসেন নামের একজন লেখেন যশোরের কাচ্চি কুইনে অভিযান চালানো হোক।
মোহাম্মদ সামী নুর লেখেন, এসব অভিযান চালিয়ে কিছুই হবেনা,দুইদিন চালাবেন আর দুই বছর অভিযানের নাম নেই।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, এসব অভিযোগের বিপরীতে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি মন্তব্য পাওয়া গেছে যেগুলো অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে কথা বলেছে। তাদের দাবি , সবাই একইরকম, তাই এটা পরিকল্পিত আক্রমণ হতে পারে। তবে বেশিরভাগ মন্তব্যকারীই বলছেন, এই অভিযান চলমান থাকতে হবে, না হলে দুই দিনের হইচইয়ের পর আবার আগের মতোই চলবে সব অনিয়ম।
এছাড়া শহরের দড়াটানা, বড়বাজার, কাঠেরপুল, চুয়াডাঙ্গা বাসস্টান্ড, রেলেগেট, মনিহার, নিউমার্কেটের বেশকয়েকটি এমন প্রতিষ্ঠান রয়েছে বলে দাবি করা হয়। ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।