gramerkagoj
রবিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৫ ৭ বৈশাখ ১৪৩২
gramerkagoj
পয়লা বৈশাখ শুভ নববর্ষ
প্রকাশ : রবিবার, ১৩ এপ্রিল , ২০২৫, ০৯:৫৫:০০ পিএম
মাহমুদা রিনি:
GK_2025-04-13_67fbdeb151876.jpg

পয়লা বৈশাখ মানেই নতুন বছরে পদার্পণ। পিছনে ফেলে আসা সুখ-দুঃখ মিশ্রিত পুরাতন স্মৃতি যত সযত্নে তুলে রেখে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো আবহমান কাল ধরে বাঙালির ঐতিহ্য। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনটি একান্তই এদেশের নিজস্ব সংস্কৃতির উপস্থাপন। দিনটিকে নানারকম মাঙ্গলিক কার্যক্রমের মধ্যদিয়ে বরণ করে নেয়াও আমাদের বাঙালীআনার অংশ হিসেবে মনে করা হয়। গৃহস্থের নিকানো আঙিনা ভরে উঠুক ফলে ফসলে বছরের প্রথম দিনটিতে তেমনই কামনা সবার।
বাঙালি সংস্কৃতি ঐতিহ্যকে ধারণ করে রাজধানী ঢাকার রমনা বটমূল থেকে শুরু করে গ্রাম বাংলার প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বর্ষবরণ উৎসব ও বিভিন্ন স্থানে বৈশাখীমেলার আয়োজন চোখে পড়ে। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো বাঙালি সংস্কৃতির পুরাতন ঐতিহ্যকে তুলে ধরে নতুন আঙ্গিকে নতুন প্রজন্মের কাছে এই নববর্ষ উদযাপন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। নতুন পোষাকে সজ্জিত হয়ে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নবউদ্যোমে রংবাহারী আয়োজনের মধ্য দিয়ে বরণ করে নতুন বছরকে। শিশুদের আনন্দ, হাসি-গান কলরোলের সাথে সকল বয়সী জনমানুষের উদ্বেলিত পদচারণায় সরগরম হয়ে ওঠে পয়লা বৈশাখের প্রভাতী আয়োজন। বিভিন্ন প্রকার মিষ্টান্ন, পান্তা-ইলিশ, দই-চিড়া, নানান পদের ভর্তাসহ এই দিনের খাবার তালিকায় বহন করে পুরনো দিনের ঐতিহ্য। মাটির গানে, দেশীয় বাদ্যযন্ত্রের সুরে তালে মুখরিত হয় মেলা প্রাঙ্গণ। সেই সাথে থাকে ব্যবসায়ীদের হালখাতার আয়োজন। মূলত ব্যবসায়ীদের নতুন খাতা হালনাগাদ করার আয়োজন থেকেই নববর্ষ উৎসবের সূচনা। পুরনো বছরের দেনা-পাওনার হিসেব মিটিয়ে নতুন খাতা নবায়ন উপলক্ষে মিষ্টি মুখের আয়োজন করা হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ধীরে ধীরে নববর্ষ উদযাপন উৎসবের আমেজে পালিত হয় এবং মানুষের আন্তরিক হৃদ্যতা বিনিময় হয় নতুন করে।
নতুন সুরে বাঁশি বাজে। প্রাণে প্রাণ মিলে গেয়ে ওঠে নতুনের আগমনী গান "এসো হে বৈশাখ এসো এসো---" শিশুর গালে আঁকা শিল্পীর তুলিতে নববর্ষের ছবি, বিভিন্ন রঙের মুখোশ, হাতপাখা, বেলুন রংবাহারি সব খেলনার ভীড়ে শিশুদের জমজমাট আনন্দ এক দৃষ্টিনন্দন অনুভূতির সৃষ্টি করে। জমে ওঠে মাটির সরায় পান্তা-ইলিশ। বন্ধ জানালা খুলে প্রবেশ করে নতুন আলো। ঝলমলে আলোয় রাঙা প্রভাত আমাদের জন্য নিয়ে আসে নতুন বছর।
সত্যি বলতে বাঙালি যেন আজ তার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি রক্ষায় খানিকটা বিপর্যস্ত। কোথায় যেন ভয়, দ্বিধা ভর করেছে সর্বত্র, বিশেষ করে যখন সাংস্কৃতিক সংগঠন, সংস্কৃতিমনা মানুষ নিরাপত্তার অভাব বোধ করে। নানান রকম সহিংসতার শিকার হতে হয় সংস্কৃতি কর্মীদের। রমনার বটমূলে বোমা হামলা থেকে শুরু করে যশোর উদীচী বোমা হামলা, বাউলদের উপর হামলা সহ দেশব্যাপী ছোটো বড়ো নানান বিধ্বংসী কর্মকাণ্ড এবং এর সুষ্ঠ, দৃষ্টান্তমূলক বিচার না হওয়ায় সংস্কৃতি অঙ্গনের স্বতস্ফুর্ততা ব্যহত হতে শুরু করে। নানান অপসংস্কৃতি, অপপ্রচার, কুসংস্কার দেশজসংস্কৃতির প্রতি অনীহা সৃষ্টি করছে। আমরা বিদেশি সংস্কৃতিতে অভ্যস্থ হয়ে পড়ছি। অথচ আমাদের রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ইতিহাস।
একটি দেশকে বিশ্বে সম্মানিত অবস্থান তৈরি করতে সেদেশের ঐতিহ্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি প্রধান ভূমিকা পালন করে। ইদানিং আমাদের ভিতর পাঁচমিশালি সংস্কৃতির মিশ্রণ মানুষকে দ্বিধান্বিত করে। দেশপ্রেম, দেশাত্মবোধ, মানবিক মূল্যবোধ না থাকলে শুধু সম্পদ, পুঁথিগত বিদ্যা আর প্রাচুর্য দিয়ে সুন্দর সমাজ নির্মাণ সম্ভব নয়। তা সে যত অর্থবিত্ত থাক না কেন! সেখানে না থাকে দায়িত্ববোধ, না থাকে কর্তব্যনিষ্ঠা। আগামী প্রজন্মের জন্য আমরা কতটুকু দৃষ্টান্ত রেখে যাচ্ছি তেমন ভাবনা কাজ করে না বিধায় দেশে এত অনিয়ম, দুর্নীতি, অনাচার হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়।
যে তরুণ প্রজন্ম স্বপ্ন দেখবে জ্ঞান বিজ্ঞানের উৎকর্ষে দেশকে আলোকিত করার- তারাও যেন নানারকম বিভ্রান্তির শিকার। একরকম দিকনির্দেশনাহীন ভাবে বেড়ে উঠছে তারা। মুষ্টিমেয় কিছুর বাইরে সাধারণ যুবসমাজ বিভ্রান্ত বেকারত্ব সহ ভবিষ্যতের স্বপ্নহীনতায়। যে শিশু বড়ো হয়ে সমাজ বিনির্মান করবে, ধনী গরীব নির্বিশেষে সে শিশুর স্বপ্ন হতে হবে আগামী সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে। তাই নতুন বছরে সকলের প্রতি আহ্বান শিশুদের দিকে বিশেষ নজর দিন। তাদেরকে প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলুন। গ্রন্থগত বিদ্যার বাইরেও মানবিকতা, মানুষের প্রতি সহমর্মিতা, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি ও মূল্যবোধ শিখতে সাহায্য করুন। আগামীর জন্য শিশুদের ভালো মানুষ তৈরির লক্ষ্য নিয়ে যদি এগোনো যায় অচিরেই একটি বৈষম্যহীন সৃষ্টিশীল সমাজ নির্মাণ আমাদের জন্য সহজ হবে। নতুন বছর সকলের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি বয়ে আনুক। আনন্দময় হোক জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত। নিরাপদ হোক দেশ।

আরও খবর

🔝