gramerkagoj
রবিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৫ ৭ বৈশাখ ১৪৩২
gramerkagoj

❒ আওয়ামী লীগ এখন অদৃশ্য

সবুজ সংকেত দেননি শেখ হাসিনা
প্রকাশ : মঙ্গলবার, ১ এপ্রিল , ২০২৫, ০৪:০৬:০০ পিএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2025-04-01_67ebba990fad6.jpg

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে ছোট বোন শেখ রেহেনাকে নিয়ে সামরিক হেলিকপ্টারে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের সব শাখা অচল, কোনো শাখাই এখন আর সচল নেই।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখনো সবুজ সংকেত না দেয়াতে আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনের আওয়াজ এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। তিনি বলেননি কীভাবে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠিত করা হবে। বলাবলি ছিল আওয়ামী লীগ পুনর্গঠনে সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও সাবের হোসেন চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। দুজনেরই রয়েছে অপেক্ষাকৃত ক্লিন ইমেজ। আওয়ামী লীগ যেখানে নাই হয়ে গেছে সেখানে তারা আছেন, ভালো আছেন। শিরীন শারমিন নিজেই পদত্যাগ করে নিরাপদ ঠিকানায় রয়েছেন।
সাবের চৌধুরী স্বল্পদিন জেলে ছিলেন। তার পর মুক্তি দেয়া হয় তাকে। যাইহোক, পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ ভিন্ন। তবে বোমায় নয়, শব্দেই আওয়ামী লীগ এখন অদৃশ্য হয়ে গেছে। এক সময় আওয়ামী লীগ নামে যে একটা রাজনৈতিক দল ছিল তা নিয়ে হয়তো গবেষণা হতে পারে। বিগত মাসগুলোতে নানা ষড়যন্ত্রের মধ্যে আওয়ামী লীগের নাম এসেছে। কিন্তু বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
শেখ হাসিনা এখন ভারতে আছেন। তার দলের বেশির ভাগ নেতা রয়েছে পলাতক, আবার অনেকে রয়েছে বিদেশে। বর্তমানে আওয়ামী লীগের ঘরে বাতি জ্বালানোর মতো কেউ রইল না। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হলো ৩২ নম্বর। আশপাশে একজন নেতা বা সমর্থকের দেখা মেলেনি। এমনকি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তারা অনুপস্থিত আছেন। এর কারণ কী? দল আর সরকার এক হয়ে গিয়েছিল? যার ফলে সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে দলেরও পতন হয়ে গেছে! সরকার ও দল দুটিই সমানভাবে দুর্নীতি আর লুটের মধ্যেই বিভোর ছিল। নৈতিকভাবে মনোবল হারিয়ে ফেলেছিল। যে কারণে কোথাও কোনো আওয়াজ ছিল না। হয়তো ভবিষ্যতে এ নিয়ে গবেষণা করবেন ইতিহাসবিদরা।
আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে বারবার একই ঘটনা ঘটেছে। কারণ ক্ষমতায় এসেই চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের জন্য দেশটাকে নিজেদের মনে করে ঘুঁটি সাজিয়েছিল। '৭৫ সনের পট পরিবর্তনের পর একই ঘটনা ঘটেছিল। দলের দায়িত্ব নেয়ার মতো কেউই ছিলেন না। তখন অবশ্য সব নেতা নাই হয়ে যাননি। বেগম জোহরা তাজউদ্দিন না থাকলে কী যে হতো !
শেখ হাসিনা ভারত থেকে ফিরে বিদায় নিশ্চিত করেছিলেন সেই জোহরা তাজউদ্দিনের। ইডেন গার্ডেনের সেই সম্মেলনে শেখ হাসিনাকে দায়িত্ব দেয়ার যারা বিরোধিতা করেছিলেন তারা পরবর্তীতে চড়া মূল্য দিয়েছেন। ড. কামাল হোসেন শেখ হাসিনাকে দিল্লি থেকে নিয়ে আসার অন্যতম কারিগর হলেও মূল্যটা ঠিকই দিয়েছেন।
ওয়ান-ইলেভেনের পর আওয়ামী লীগ সংকটে পড়েছিল, কিন্তু হাল ধরেন জিল্লুর রহমান। শেখ হাসিনা একাধিক দুর্নীতি মামলায় তখন জেলে ছিলেন। দেশি-বিদেশি নানা খেলায় সোজা ক্ষমতার মসনদে পৌঁছে যাওয়ার গল্প সবার জানা। বাংলাদেশি রাজনীতির জন্য এটা ছিল এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। ষড়যন্ত্রের পথে না হাঁটলে হয়তো শেখ হাসিনার ভাগ্যে এমনটা ঘটতো না। বঙ্গবন্ধুর পরিণতিই-বা এমন হবে কেন? তর্কের খাতিরে যদি বলা হয়, হাসিনা দল পুনর্গঠনের দায়িত্ব কারো কাছে দিতে রাজি হয়ে গেলেন তাহলে কী ঘটবে? পরিবারের বাইরে যাওয়ার চিন্তা কি তিনি করতে পারবেন? তার কাছে আগে পরিবার, তারপর দেশ- তেমনটাই গত ৫ই আগস্ট প্রকাশ পেল।
তিনি বিমানে চড়ার আগে নিশ্চিত করলেন যে, তার সব আত্মীয়স্বজন দেশ ছাড়তে পেরেছেন কিনা। অথচ দলের অন্যসব নেতাবো কর্মীদের কথা একবারও ভাবেননি। ঠিকই তার কোনো আত্মীয়স্বজন গ্রেপ্তার হলেন না। ৫ তারিখের আগেই তাদেরকে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছিল। পরিবারের মধ্যে তিনি কাকে দায়িত্ব দেবেন। সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নাকি রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। এসবই এখন জল্পনা-কল্পনার মধ্যে রয়েছে। আওয়ামী লীগ পুনর্গঠন করতে ভারতেরও একটা হিস্যার ব্যাপার রয়েছে।
মামলা-মোকদ্দমায় হাসিনা বিপর্যস্ত। তার বিরুদ্ধে শত শত মানুষ হত্যা, গুম, হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ। তাছাড়া পারিপার্শ্বিক অবস্থাও তার অনূকূলে নয়। জাদুমন্ত্র এবং নিখুঁত কোনো ষড়যন্ত্র ছাড়া তার ভাগ্যে কী ঘটবে এটা কেউই হলফ করে বলতে পারবেন না।

আরও খবর

🔝