gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১০ বৈশাখ ১৪৩২
gramerkagoj

❒ ওএমএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনা

মামলায় থমকে গেছে যশোরে ডিলারশিপ
প্রকাশ : রবিবার, ১৬ মার্চ , ২০২৫, ১১:৫৯:০০ পিএম
জাহিদ আহমেদ লিটন:
GK_2025-03-16_67d6f32385373.jpg

খুলনায় দায়েরকৃত একটি মামলার কারণে থমকে গেছে যশোরের ২৭৬ জন ডিলারের লাইসেন্স বাতিল প্রক্রিয়া। আগামী জুন মাস নাগাদ তাদের বিষয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। আর সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জুলাই মাস থেকে নতুন ডিলার তাদের কার্যক্রম শুরু করবে বলে খাদ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে।
এসব ডিলাররা হচ্ছেন, যশোর শহরের পৌর এলাকার ১৪ জন ওএমএস (ওপেন মার্কেট সেলিং) ডিলার এবং ৮টি উপজেলা এলাকার ২৬২ জন খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে এ দুটি কর্মসূচির ডিলার নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন নিয়ম মানা হয়নি। দলীয় নেতাকর্মীদের ওএমএস এবং খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ডিলারশিপ ভাগ বাটোয়ারা করে দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বাইরে ডিলারশিপ গ্রহণের জন্য কেউ আবেদন পর্যন্ত করতে পারেননি। এ কারণে অভিযোগের প্রেক্ষিতে বর্তমানে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নিয়োগকৃত ডিলারশিপ বাতিল করার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় উদ্যোগ গ্রহণ করে। সেই হিসেবে গত বছরের ডিসেম্বর মাসে সরকার সারাদেশে নতুন করে ডিলার নিয়োগের জন্য আবেদন আহ্বান করে। এসময়ে উচ্চ আদালতে ডিলারদের পক্ষে রিট করা হয়। কিন্তু সেই রিট আদালত খারিজ করে দেয়। পরবর্তীতে ডিসেম্বর মাসের শেষ নাগাদ খুলনার আদালতে একজন ডিলার মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।
তাতে তিনি জানান, যেহেতু তাদের ডিলারশিপ লাইসেন্স গত বছরের জুন মাসে তারা নবায়ন করেছেন এবং ২০২৫ সালের জুন মাস নাগাদ তার মেয়াদ রয়েছে। কোন অভিযোগ ছাড়াই তারা সকল কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। সে কারণে পুরনো অভিযোগে তাদের ডিলারশিপ কোনভাবেই বাতিল করা আইনত বৈধ হবে না। এ মামলার কারণে আদালত তাদের লাইসেন্স বাতিল প্রক্রিয়া আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত স্থগিত করেছেন। এর ফলে খাদ্য বিভাগ এসময়ের মধ্যে ডিলার নিয়োগ সংক্রান্ত কোন কার্যক্রম করতে পারছে না। তারপরও তারা আগামী ৩০ জুনের মধ্যে পুরনো ডিলারদের লাইসেন্স নবায়ন করবে না এবং তাদের ডিলারশিপ ৩০ জুনের পর থেকে বাতিল করবেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে। এরমধ্যে জুন মাসের শেষ নাগাদ তারা নতুন ডিলার নিয়োগের সকল কার্যক্রম চুড়ান্ত করে রাখবেন এবং তারাই আগামী জুলাই মাস থেকে ওএসএস এবং খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি পরিচালনা করবেন বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা যায়।
এদিকে, নতুন ডিলার হবার জন্য গত ডিসেম্বর মাসের নির্ধারিত সময়ে যশোর সদর উপজেলা এলাকায় ২৪৩ জন আবেদন করেছেন। তাদের আবেদন কর্তৃপক্ষ যাচাই-বাছাই করে রেখেছেন। আগামী জুন মাস নাগাদ বর্তমান ২৭৬ জনের ডিলারশিপ বাতিল করে নতুন আবেদনকৃতদের ডিলার নিয়োগ করা হবে বলে যশোর খাদ্য বিভাগ সূত্র জানিয়েছে। এরই মধ্যে মণিরামপুর উপজেলার চারজন তাদের ডিলারশিপ সারেন্ডার করেছেন। তারা আবেদনে কর্মসূচির চাল বিতরণে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে উপজেলায় নতুন করে আবেদনকৃত চারজনকে ডিলারশিপ প্রদান করা হয়েছে। তারাই বর্তমানে স্বল্পমূল্যে কার্ডধারীদের মাঝে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিক্রি করছেন।
সূত্র জানায়, যশোর সদর উপজেলা এলাকায় ওএমএস এবং খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক আজহারুল ইসলাম ও সদস্য সচিব জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সেফাউর রহমান। এছাড়া, উপজেলা পর্যায়ে নিয়োগ কর্মকর্তা হলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তাগণ।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দেশব্যাপী খাদ্য বান্ধব ও পৌর এলাকায় ওএমএস কর্মসূচি চালু করা হয়। এতে গরীব মানুষেরা কমদামে চাল ও আটা কিনতে পারছিলেন। কর্মসূচিতে শহর এলাকায় প্রতিদিন ৯ মেট্রিক টন চাল ও আটা এবং উপজেলাসহ ইউনিয়ন পর্যায়ে মাসে তালিকাভুক্ত প্রতিটি পরিবারকে ৩০ কেজি হারে চাল বিতরণ করা হয়। এ চাল ইউনিয়ন পর্যায়ে জনগণ ১৫ টাকা কেজি দরে কিনতে পারছেন। এছাড়া শহরের পৌর এলাকায় ওএমএস কর্মসূচির চাল ৩০ টাকা ও আটা ২৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন ডিলাররা। যশোর জেলাও এ কর্মসূচির বাইরে নয়। জেলার আটটি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্ধারিত ২৬২ জন ডিলারের মাধ্যমে চাল আটা বিক্রি করা হচ্ছে। ইউনিয়ন পর্যায়ে একজন ডিলারের খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির পাঁচশ’ জনের কার্ডের মাধ্যমে চাল বিতরণের ব্যবস্থা থাকে। মার্চ মাস থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল বিতরণ করা হবে।
এদিকে, যশোর পৌর এলাকার নয়টি ওয়ার্ডে ১৪ জন ডিলারের মাধ্যমে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। বাকি দু’দিন শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটি থাকায় বিক্রি বন্ধ থাকে। এর মাধ্যমে গরিব মানুষেরা কম দামে চাল-আটা কিনতে পেরে উপকৃত হচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে জেলা খাদ্য কর্মকর্তা সেফাউর রহমান বলেন, যশোরের ওএমএস এবং খাদ্য বান্ধব কর্মসূচির ২৭৬ জন ডিলার রয়েছেন। তাদের লাইসেন্স গত জুন মাসে এক বছরের জন্য নবায়ন করা হয়েছে। এর মেয়াদ আগামী জুনে শেষ হবে। এরপর আবেদনকৃত ২৪৩ জনের মধ্য থেকে নতুন ডিলার নিয়োগ করা হবে। এক্ষেত্রে সমস্ত রকম স্বচ্ছতা বজায় রেখে নতুন ডিলার নিয়োগ করা হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

 

আরও খবর

🔝