gramerkagoj
রবিবার ● ২০ এপ্রিল ২০২৫ ৭ বৈশাখ ১৪৩২
gramerkagoj
অধম নিশ্চিন্তে চলে উত্তমের সাথে
প্রকাশ : রবিবার, ১৬ মার্চ , ২০২৫, ১০:০৮:০০ এএম
মাহমুদা রিনি:
GK_2025-03-16_67d64ec2813f0.jpg

ছোটো বেলায় পড়েছি "তুমি অধম বলিয়া আমি উত্তম হইব না কেন!" অথচ বর্তমান বাস্তবতা হলো তুমি অধম হইলে আমাকে অধিকতর অধম হইতে হইবে।
উত্তম হওয়ার জন্য অন্তরে আলো প্রয়োজন। যা কর্মে কথায় বা শব্দে প্রকাশ পায়। মননে আঁধার বা ঝাপসা আলোয় শব্দের প্রতিফলন পরিষ্কার হয় না। তবু কথা বলা থেমে নেই, আমরা কথা বলছি, বলেই চলেছি-- শুধু মনন থেকে আলোর প্রতিফলন হচ্ছে না।
চাওয়ার সাথে পাওয়ার দ্বন্দ্ব চিরকালের। আমরা যখন যেটা চাই তা প্রাণপণে চাই, এবং মনে করি সেটা পেলেই লক্ষ্যের শীর্ষে পৌঁছে যাব। কিন্তু পাওয়ার পর মনে হয় যেটা চেয়েছি এ ঠিক সেটা নয়! এমন ঘটনা বার বার ঘটে আমাদের সাথে। এবারও তেমনই ঘটেছে। কোটা সংস্কারের দাবি থেকে চাওয়া গড়িয়েছে সরকার পতনের আন্দোলনে। মানুষ মুক্তি চেয়েছে দূর্নীতি থেকে, দুঃশাসন থেকে। স্বৈরাচার মুক্ত দেশ চেয়েছে। ভোটের অধিকার ও জানমালের নিরাপত্তা চেয়েছে। নিরাপদ সড়ক চেয়েছে। সুস্থ ও গ্রহণযোগ্য স্বাস্থ্যসেবা চেয়েছে। শিক্ষিত, সুস্থ সমাজ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয়ক্ষমতার নাগালে থাকুক আর প্রত্যেক অভিভাবক চেয়েছে সন্তানের জন্য লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ। সর্বোপরি মানুষ স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চেয়েছে। সাধারণ মানুষের শুধু গায়েখাটা উপার্জনে দুমুঠো খেয়ে পরে সন্তান সন্ততি নিয়ে একটু স্বস্তিতে ঘুমানোর নিশ্চয়তাটুকুই ছিল চাওয়া। এই চাওয়ার সাথে পাওয়ার ব্যত্যয় হলেই মানুষ অস্থির হয়ে ওঠে, পরিবর্তন চায়। এটা গণতান্ত্রিক দেশ, গণমানুষের ইচ্ছার বা মৌলিক চাহিদার প্রতিফলন দেখতে চায়, যারা ক্ষমতার ধারক বাহক তাদের কর্মে, কথায়, চরিত্রে।
কিন্তু কী হলো? যে উদ্যম, উচ্চাশা নিয়ে দেশের মানুষ পরিবর্তন চেয়েছে, সেই চাওয়ার সাথে এই পরিবর্তনের সামঞ্জস্য কতখানি? পরিবর্তন আনতে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা কী কী পরিবর্তন করতে চেয়েছেন তা কী দেশের জনগণ ওয়াকিবহাল ছিল? জনগণ জানতে চাওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি কারণ তারা বিশ্বাস করেছিল। এই আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবর্তন আসবে ভেবে জনগণ সুস্থ আন্দোলনের ধারাকে সমর্থন করেছিল, এখনো করে। তারা যে কোনো হত্যাকা-ের তীব্র বিরোধিতা করেছে, প্রতিবাদ করেছে এবং দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে সমর্থন করেছে। তাদের স্বপ্ন ছিল দেশে আইনের শাসন প্রতিস্থাপন হবে। বিচার তার নিজস্ব গতিতে চলবে, অপরাধী সে যত বড়ো হোক তার কৃতকর্মের সাজা পাবে বিচারিক প্রক্রিয়ায়। যতদূর বুঝেছি তাদেরকে ইতিহাস মুছে ফেলা বা পরিবর্তন করার দায়িত্ব জনগণ দেয়নি। নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার বিশ্বরেকর্ড অর্জনের দায়িত্বও জনগণ দেয়নি। অন্যায়ের শূন্যস্থান অন্যায় দিয়ে পূরণ করার অভিপ্রায় টিকসই করার অনুমোদন জনগণ দেয়নি।
এই কথাগুলো সবই সাধারণ মানুষের কথা। খেটে খাওয়া নি¤œবিত্ত, মধ্যবিত্ত মানুষের, যারা রাজনীতির কূটকৌশল বোঝে না। যাদের চাহিদা খুব সামান্য। নিরাপদ জীবন আর সন্তানের নিশ্চিত ভবিষ্যৎ মোটা দাগে এটুকুই তাদের প্রত্যাশা। অথচ তারাই বর্তমানে আতংকিত এবং বিভ্রান্ত সবচেয়ে বেশি। নারীর অবস্থা আরও শোচনীয়। দুধের শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউই নিরাপদ নয়। ধর্ষণের সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করে স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। তরুণ সমাজের একটা বৃহত্তর অংশ যথেষ্ট বিভ্রান্ত এবং মনে হয় সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে এক অদৃশ্য চালিকাশক্তির ইশারায় উন্মাদনায় মত্ত। তারা হুজুগ এবং সিদ্ধান্তে দোদুল্যমান।
প্রকৃত ছাত্রদের কিছু বলা আমার উদ্দেশ্য নয়, তারা নিশ্চয় নিজেদের ভবিষ্যৎ বুঝে নেবে। কিন্তু যারা বিভিন্ন নামের বা দলের লেজুড়বৃত্তিক হয়ে উচ্ছৃঙ্খলায় মত্ত, যাদের পরিবার খুব সাধারণ, তাদের জীবন ধ্বংস হওয়ার পথে। এরা কখনো ছাত্র নামে, কখনো উচ্ছৃঙ্খল জনতা সেজে বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত হচ্ছে। নিজেদের সময়, পরিবারের শান্তির সাথে ভবিষ্যৎটাও নষ্ট করছে। এই বিশৃঙ্খল তরুণ, যুবসমাজকে সঠিক দিকনির্দেশনায় মানবিক মূল্যবোধে ফিরিয়ে না আনতে পারলে আগামী পঞ্চাশ বছরও জাতির জন্য সুখকর হবে না। কারণ এই তরুণরাই আগামীতে নেতৃত্বে আসবে।
ভবিষ্যতের দায়িত্ব নিতে হলে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে সংরক্ষণ এবং বর্তমানকে ইতিহাসের জন্য গ্রহণযোগ্য করে তোলার দায়িত্ব মাথায় রাখতে হবে। তরুণ সমাজ দেশের ভবিষ্যৎ। লেখাপড়া শিখে সঠিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমেই সুনাগরিক ও দেশের সম্পদ হয়ে ওঠা তাদের কাজ। ছাত্রদের মূলধারা লেখাপড়ায় মনোযোগী তৈরি করার দায়িত্ব শিক্ষক, অভিভাবক এবং সরকারের প্রথমত কর্তব্য। তাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করতে চাইলে আমাদের অবস্থা লেখাপড়া ছাড়া ডাক্তারের হাতে চিকিৎসার মতো নেতৃত্ব সংকটে পড়তে হবে।
তাদের ভিত্তিহীন উচ্চাভিলাষী স্বপ্নকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে প্রত্যেককে সচেষ্ট হওয়া দরকার। মনে রাখা উচিত এই দেশটা আমাদের। এখানেই আমাদের এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বসবাস করতে হবে। তাই কোনো হুজুগে মেতে নিজের মাতৃভূমিকে অস্থিতিশীল করলে আমাদেরই তার ফল ভোগ করতে হবে। বাংলাদেশ স্বমহিমায় মাথা উঁচু করে বাঁচুক... শুভকামনা সবসময়।
# লেখক: কবি, প্রাবন্ধিক, নারী নেত্রী

আরও খবর

🔝