শিরোনাম |
❒ বিশ্ব কিডনি দিবসের আলোচনায় প্রকাশ পেলো ভয়ংকর তথ্য
যশোর জেনারেল হাসপাতালের সামনে রোগ নির্ণয় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওটা বেসরকারি কতিপয় ডায়াগনস্টিক সেন্টারে প্রতারণার মহোৎসব চলছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগের পরিদর্শনে প্রমাণ মিলেছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ল্যাব টেকনোলজিস্ট হিসেবে পরিচয়দানকারী রক্তের সিবিসি (CBC) টেস্ট করতে পারলেও জানেন না সিবিসি’র পুরো অর্থ কি। এমনকি রক্তের ইএসআর (ESR) টেস্টের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে।
টেকনোলজিস্ট পরিচয়দানকারী টেস্টের নামের পুরো অর্থ না জানার কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন দীর্ঘদিন পড়াশুনা না করায় পুরো অর্থ কি তা ভুলে গেছেন। স্বয়ং সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে থাকা পরিদর্শন টিম ওই টেকনোলজিস্ট পরিচাদানকারী ব্যক্তির সনদপত্র ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকপক্ষের কাছে তলব করেন। সার্টিফিকেট পর্যালোচনা করে দেখা যায় তা ভুয়া। ১৩ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস উপলক্ষে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আয়োজিত আলোচনা সভায় সিভিল সার্জন ডাক্তার মোঃ মাসুদ রানার বক্তব্যে নির্মম এ বাস্তবতা প্রকাশ পেয়েছে।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা সিভিল সার্জন ডাক্তার মাসুদ রানা বলেন, অনভিজ্ঞ এবং ভুয়া সার্টিফিকেটধারীদের দিয়ে রোগ নিরুপণের জন্য করানো বিভিন্ন টেস্টের রিপোর্ট বিশ্বাস করে প্রতিনিয়ত শতশত মানুষের চিকিৎসার দেয়া হচ্ছে। হয়তো এরমধ্যে অনেকেই প্রকৃত রোগী না হয়েও ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করে শারিরিক ও আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এমনকি দীর্ঘ মেয়াদী জঠিল রোগে আক্রান্ত হওয়াসহ মৃত্যুর ঝুঁকিও বাড়ছে। স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুতি নিয়েছে প্রতিটি বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করার। ভুয়া সার্টিফিকেটধারী টেকনোলজিস্ট নামক প্রতারকদের দ্বারা প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করানো প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে। অন্যথায় যশোরের মানুষকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা দেয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।
বিশ্ব কিডনি দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘আপনার কিডনি কি সুস্থ্য? সচেতন হোন, কিডনি রোগ প্রতিরোধ করুন’ বিষয়ে দুপুর ১২ দিকে অনুষ্ঠিত আলোচনায় সভায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাক্তার মোঃ হুসাইন শাফায়াতের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন যশোর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার আবু হাসনাত মোঃ আহসান হাবীব। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার গৌতম কুমার আচার্য্য। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নেফ্রোলজিস্ট ডাক্তার শরিফুল ইসলাম শরিফ, ডাক্তার উবাদুল কাদির উজ্জল ও ডাক্তার বিদার উদ্দিন। নেফ্রোলজিস্ট ডাক্তার তৌফিক পারভেজের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন নেফ্রোলজিস্ট ডাক্তার শরিফুল ইসলাম শাপলু।
আলোচনা সভায় জানানো হয়, দেশে প্রায় তিন কোটি ৮০ লাখ লোক কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। যাদের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার কিডনি রোগী ডায়ালাইসিসের ওপর নির্ভরশীল হয়। শহর ও গ্রামাঞ্চলে সমানভাবে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। সুচিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর ঘটনাও আশংকাজনক। যশোরে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ডায়ালাইসিসের সুযোগ নেই। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ সরকারের উর্ধ্বতন পর্যায়ে তদবির তাগাদা চালিয়ে ডায়ালাইসিস সেবা চালু করার জন্য জোর চেষ্টা করছে।
আলোচনা সভায় উপস্থিত ছিলেন, হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাক্তার হিমাদ্রি শেখর সরকার, নিউরো মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডাক্তার এস এম শফিকুর রহমান, সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক শরিফুল আলম, মেডিকেল কলেজের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার এস এম নাজুমল হক, হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হাবিবা সিদ্দিকা ফোয়ারাসহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকবৃন্দ।
এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে সচেতনতামূলক র্যালি বের করা হয়।