gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ২৪ এপ্রিল ২০২৫ ১১ বৈশাখ ১৪৩২
gramerkagoj

❒ ওএমএস পাইলট কার্যক্রম স্থগিত

যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে পড়ে আছে ১৭ হাজার কার্ড
প্রকাশ : বুধবার, ৫ মার্চ , ২০২৫, ০৮:৫৯:০০ এএম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম:
GK_2025-03-05_67c7be2d3e5b4.jpg

# সংগ্রহ করা হয় এনআইডি ও ছবি
# তালিকায় ছিল যশোরের ৫টিসহ দেশের ৪শ’ কেন্দ্র
# প্রতি কেন্দ্রের জন্য বাছাই করা হয় ২১৩ জন
# দলীয়করণ হয়েছে কিনা যাচাই বাছাই হবে
শুধুমাত্র দরিদ্রদের হাতে পৌঁছাতে এবং সরকারি ভর্তুকির দামে কিনে বাইরে বেশি দামে বিক্রি রোধে খাদ্য বিভাগের হাতে নেয়া ওএমএস পাইলট কার্যক্রম স্থগিত করা করা হয়েছে। ওএমএস কেন্দ্রে চাল আটা কিনতে গেলেই খাদ্য বিভাগ প্রদত্ত কার্ড প্রদর্শন কর্মযজ্ঞে যশোর পৌসভার ৫টি কেন্দ্রসহ দেশের যে ৪শ’ ওএমএস কেন্দ্র আওতায় আনা হয় তা কার্ড ছাপার পর স্থগিত করা হয়েছে।
পাইলটিং কার্যক্রমের আওতায় ছাপা হওয়া ১৭ হাজার কার্ড যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে অলস পড়ে আছে। গত বছরের ১ জুলাই থেকে প্রতি কেন্দ্রে ২১৩ জন কার্ডধারী এই ওএমএস সুবিধার আওতায় আসার টার্গেট ছিল। ওই কর্মকান্ড ফলপ্রসু হলে একে একে দেশের সব কেন্দ্র আওতায় আনার ঘোষণা ছিল অধিদপ্তরের।
সূত্রের দাবি, ওই বাছাই কার্যক্রমে বিগত সরকারের দলীয়করণ কিংবা ঘাপলা থাকতে পারে এমন বিবেচনায় স্থগিত করা হয়েছে। নতুন করে যাচাই বাছাই কার্ডধারীর তালিকা করা হতে পারে।
খাদ্য বিভাগের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, ওএমএস (ওপেন মাকেটিং সেল, খোলাবাজার) চাল আটা বিক্রি ব্যবস্থাপনার ঘাটতি নজরে পড়ায় কার্ডের মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনা করার নির্দেশনা দেয়া হয় বিগত সরকারের পক্ষে। ওএমএসের পণ্য কিনতে ক্রেতাদের ঘন্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে হচ্ছে, দীর্ঘ অপেক্ষার পরও পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে অনেককে, আবার এক ব্যক্তি একাধিক কেন্দ্র থেকে চাল আটা কেনায় অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন এমন সব কারণ সামনে এনে ওএমএস চাল কার্ডের মাধ্যমে দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়। ঘোষণায় বলা হয়, লোকজনকে অহেতুক দীর্ঘ ভিড়ের মধ্যে থাকতে হবে না, শৃঙ্খলা ফিরে আসবে।
২০২৩ সালের ২৯ মে খাদ্য অধিদপ্তরের এক সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ওএমএস পাইলট প্রকল্পের। ওই বছরের জুলাই থেকে কার্ডের মাধ্যমে চাল আটা বিক্রির লক্ষে আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সকল প্রস্তুতি স¤পন্ন করতে বলা হয়। আর সে লক্ষে দেশের সকল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের মাধ্যমে পাইলটিং কার্যক্রম শুরু হয়। কর্মকর্তা কর্মচারী ডিলারগণ ১ জুন থেকে প্রচারের কাজ শুরু করেন জনপ্রতিনিধি ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে। যশোরের ৫টি ওএমএস কেন্দ্রেও কাজ শুরু হয়। কেন্দ্রগুলোতে আটা বিক্রির সাথে সাথে নিম্ম আয়ের ভোক্তাদের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকটি ও স্ট্যাম্প সাইজের ছবি গ্রহণ করা হয়।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রের দাবি, ওই সময় দেশের ৫২টি জেলা সদরের পৌরসভায় ৫টি করে মোট ২৬০টি ওএমএস কেন্দ্র আওতায় রাখা হয়। ঘনবসতি ৪ জেলা ঢাকা, নরসিংদী, নারায়নগঞ্জ ও গাজীপুর জেলায় ১০টি করে ৪০টি ওএমএস কেন্দ্র কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়। এছাড়া দেশের ১০টি সিটি কর্পোরেশনের ১শ’টি কেন্দ্রেও এই কার্ডের মাধ্যমে চাল আটা বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। যশোর পৌরসভার ৫টি ওএমএস কেন্দ্রর আওতায় আনা হয়। এসব ওএমএস ডিলারগন হচ্ছেন, ঢাকা রোড পূর্ববারান্দীপাড়ায় আবুল কাশেম, ঘোপ সেন্ট্রাল রোডে রবিউল ইসলাম, খড়কী কবরস্থান এলাকায় রোকন ব্যাপারি, চারখাম্বা মোড়ে তোতা মিয়া ও বেজপাড়া গুলগুল্লা মোড়ে গোলাম মোস্তফা। এই ৫টি ওএমএস কেন্দ্র ঘিরে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ শুরু হলেও শেষমেশ কার্ড ছাপা পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়েছে।
যদিও ওই ৫ ওএমএস কেন্দ্রে চাল আটা কিনতে আসা লোকজনের কাছ থেকে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা হয়। ভোক্তা সাধারণ ওএমএস কেন্দ্রে দায়িত্ব প্রাপ্ত তদারকি কর্মকর্তার কাছে এনআইডি কার্ডের ফটোকপি ও ১টি স্ট্যাম্প সাইজের ছবি জমা দেন।
এ ব্যাপারে পাইলটিং কার্যক্রমের আওতায় আসা ওএমএস ডিলার বেজপাড়ার গোলাম মোস্তফার ছেলে ইমরান রশীদ গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, তার বাবার ডিলার ব্যবসা তিনিই দেখাশুনা করেন। তার কেন্দ্রটিও পাইলটিং কার্যক্রমের আওতায় এসেছিল। তালিকার কাজও শেষ হয়েছিল। যাতে শুধু গরীব মানুষই ওএমএস সুবিধার জন্য ছিল ওই পাইলট কার্যক্রমে। কিন্তু সরকার পতনের পর তা স্থগিত করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা মেনে তারা চাল আটা বিক্রি করছেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া ও তালিকায় নাম ওঠা অনেক দরিদ্র মানুষের দাবি, ওএসএস-এর কার্ড দেয়ার যে কার্যক্রম চলছিল সেটি বাস্তবায়ন হলে দরিদ্রদের জন্য ভাল হত। অনেক অবস্থাশালী মানুষ একাধিক কেন্দ্র থেকে চাল আটা তুলে গোপনে তা বিক্রি করতে পারতো না। আবার কোনো ডিলার গোপনে চাল আটা কালোবাজারেও বিক্রি করতে পারতো না। কাজেই এটি স্থগিত হলেও দ্রুত ফের যাচাই বাছাই করে চালু করার দাবি তাদের।
এদিকে, খাদ্য বিভাগের একটি সূত্রের দাবি, ওই প্রকল্পটি ছিল বিগত সরকারের। তাতে দরিদ্র বাছাইয়ে ঘাপলা কিংবা দলীয়করণ হয়েছে অনেক। কাজেই ৫ আগস্টের পর হালনাগাদ বাছাই করে তালিকা হওয়া জরুরি। যে কারণে ওই ওএমএস পাইলট কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে পরীক্ষামূলক ওই ওএমএস পাইলট প্রকল্পের ব্যাপারে যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেফাউর রহমান দৈনিক গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, এই পাইলটিং কার্যক্রম যশোরে বেশ এগিয়ে ছিল। যশোরে ৫টি ওএমএস কেন্দ্র এর আওতায় ছিল। ভোটার আইডিকার্ড ও ছবি সংগ্রহ করে দরিদ্র ভোক্তা সাধারণ বাছাই করে ১৭ হাজার কার্ড ছাপানো হয়েছিল। ওই কার্ড এখন তার কার্যালয়ে রক্ষিত আছে। প্রতিদিন একটি কেন্দ্রে ২১৩ জন কার্ডধারীকে এর আওতায় আনা হয়েছিল। তবে বর্তমান সরকার তা স্থগিত করেছে। পরবর্তী সরকারি নির্দেশনায় এই পাইলটিং কার্যক্রম হয়ত চলতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে যাচাই বাছাই ফের হতে পারে।

আরও খবর

🔝