gramerkagoj
শুক্রবার ● ১৭ জানুয়ারি ২০২৫ ৩ মাঘ ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
ভাঙনরোধে দেড় হাজার কোটি টাকার প্রকল্প অনিশ্চিৎ!
প্রকাশ : শনিবার, ১১ জানুয়ারি , ২০২৫, ০৯:১৯:০০ পিএম
কুষ্টিয়া প্রতিনিধি:
GK_2025-01-11_67828c4fe4b10.jpg

পানি উন্নয়ন বোর্ডের চরম অবহেলা, গাফিলতি ও অনিয়মে অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয়ের প্রকল্পটি। অবৈধ সুবিধা নিয়ে কর্মকর্তারা দণ্ডপ্রাপ্ত অযোগ্য ও কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠাকে কাজ দিয়ে অনিয়ম-ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করায় কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।
যার ফলে দখলে বাধা পেয়ে পদ্মার গতিপথ বদলে ভয়াবহ ভাঙন বিপর্যয় ও আগ্রাসন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নেওয়া ‘পদ্মা নদীর ভাঙন থেকে কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া এবং কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের কোমরকান্দি রক্ষা বাঁধ শীর্ষক প্রকল্প’ এর অর্থ পানিতে ভাসতে চলেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে।
তাদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কতিপয় অসাধুদের অবৈধ সুবিধা দিতে এমন অনিয়ম-ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নাধীন জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পটিকে অনিশ্চয়তার মুখে ঠেলে দিয়েছে। তবে কিছু অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করলেও অবৈধ সুবিধার বিনিময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো দণ্ডপ্রাপ্ত অযোগ্য ও কালো তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠান বিডিপিএলকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কাজ দেওয়ার চেষ্টাকে অস্বীকার করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
সরেজমিনে দেখা যায়, জাতীয় মহাসড়ক (কুষ্টিয়া-পাবনা), বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, সেচ প্রকল্প (গঙ্গা-কপোতাক্ষ), ৪১০ মেগা কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, সরকারি-বেসরকারি নানা গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও অবকাঠামো, ঘরবাড়ি, কৃষিজমিসহ বিস্তীর্ণ এলাকাকে পদ্মা নদীর ভয়াল ভাঙনের কবল থেকে রক্ষায় ডান তীরে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্পটির আংশিক কিছু স্থানে ইতোমধ্যে বাঁধ নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে।
তবে একযোগে কাজ না হওয়ায় চরম বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দারা। তাদের অভিযোগ, এভাবে বিচ্ছিন্ন ও বিক্ষিপ্ত স্থানে কাজ করার ভয়াবহ পরিণতি ঘটেছিল শিলাইদহ রক্ষা বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে। এমন দৃষ্টান্ত থাকার পরও পানি উন্নয়ন বোর্ড কার স্বার্থে আবার সেই একই ঘটনার সম্ভাবনাকে তুচ্ছ করে দেখছে। অবিলম্বে জরুরি ভিত্তিতে সৃষ্ট জটিলতার নিরসন করে অদক্ষ প্রতিষ্ঠানকে বর্জন করে একযোগে কাজ শুরুর দাবি স্থানীয়দের।
মতিন কন্সট্রাকশন লিমিটেডের সাইট ম্যানেজার রুপম হোসেন বলেন, পদ্মা নদীর ডান তীরে প্রায় সাড়ে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের প্রকল্পটির অতি জরুরি ভিত্তিতে আংশিক কিছু স্থানে ইতোমধ্যে কার্যাদেশপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করেছে। আমরা আশঙ্কা করছি, নিয়ম বহির্ভূত এ প্রক্রিয়ায় আংশিক স্থানগুলোতে যে কাজগুলো হচ্ছে এবং সরকারের অর্থ ব্যয় হচ্ছে তা পুরোটায় গচ্চা যেতে পারে। এতে সময়মতো এবং সঠিক পদ্ধতিতে মানসম্মত কাজ অনিশ্চিত হয়ে যাবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
অভিযোগ রয়েছে, ২০১৬ সালে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়নে ১৭৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ‘কুষ্টিয়া জেলায় বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী সংলগ্ন এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্পের সুলতানপুর অংশে ২ হাজার ৭২০ মিটার এবং শিলাইদহ অংশে ১ হাজার মিটার সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণকাজে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেড বা বিডিপিএলের সঙ্গে যোগসাজশে অবৈধ সুবিধা লাভের বিনিময়ে প্রকল্প কর্তৃপক্ষের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ওই বাঁধটি নির্মাণকালেই ধসে যায়। এতে সরকারের কোটি কোটি টাকার কাজ বিফলে যায়। বিষয়টি মূল্যায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির (আইএমইডি) প্রতিবেদনে সত্যতা উঠে আসায় তাৎক্ষণিক প্রকল্প পরিচালককে ভর্ৎসনা করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিডিপিএলকে ক্ষতিপূরণ বাবদ ২ কোটি টাকা জরিমানা করা হয়। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিকে অযোগ্য বা কালো তালিকাভুক্ত করেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ। বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের সঙ্গে ৭ বছর আগে ধসে যাওয়া এবং অসম্পূর্ণ প্রায় ১.৫৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের কাজও সংযুক্ত রয়েছে।
ঠিকাদার জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজ করি। একচুয়ালি নদী বা পানির মধ্যে কাজ করা খুব কঠিন ও জটিল। সাধারণত পানির মধ্যে কাজ করার ক্ষেত্রে প্রকল্পাধীন আয়তনের পুরোটাই নির্ধারিত অ্যালাইনমেন্ট ধরে একসঙ্গে কাজ করতে হয়। না হলে আগে-পিছে খালি থাকলেই সমস্যা, যেকোনো মুহূর্তে ওয়াস আউট হয়ে যায়। নির্মাণ শেষের আগেই এমন ঘটনা ঘটলে বিশাল আর্থিক ক্ষতি শিকার হতে হয়। অথচ তালবাড়িয়া পদ্মা নদীর বাঁধ নির্মাণের ক্ষেত্রে পানি উন্নয়ন বোর্ডের চরম অবহেলার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। নদীর মধ্যে কাজের উপযুক্ত শুষ্ক মৌসুমের দেড় মাস সময় ইতোমধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে। অথচ এখনও বাকি সাড়ে ৫ কিলোমিটার কাজ শুরু করতে পারেনি। কবে পারবে তারও কোনো লক্ষণ দেখছি না।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাশিদুর রহমান বলেন, ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয়ে ২ বছর বাস্তবায়নকাল ধরে শুরু হওয়া পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা বাঁধের কাজ ৩২টি প্যাকেজে দরপত্র আহ্বান করা হয়। ইতোমধ্যে ১৮টি প্যাকেজের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে। অবশিষ্ট প্যাকেজগুলোর কার্যাদেশ এখনও দেওয়া হয়নি। এতে ৫.৩৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের ১৫টি প্যাকেজের কাজ এখনও শুরু করা যায়নি। কিছু জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এমনটি হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ও আদেশ পেলেই উদ্ভূত জটিলতা কেটে যাবে। তবে এক্ষেত্রে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিশেষ কোনো অযোগ্য, কালো তালিকাভুক্ত বা পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক দণ্ডপ্রাপ্ত বিডিপিএলের মতো প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার চেষ্টায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সেই অভিযোগ সঠিক না।
উল্লেখ্য, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রোয়েনে বাধা পেয়ে নতুন গতিপথের সন্ধানে প্রমত্ত পদ্মার ভয়াল আগ্রাসনে ভাঙছে পাড় ও বিপন্ন জনপদ। ইতোমধ্যে সরকারি-বেসরকারি জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও অবকাঠামো বিলীন হয়েছে পদ্মার গর্ভে। পদ্মার ডানপাড়স্থ কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বহলবাড়িয়া ও তালবাড়িয়া দুই ইউনিয়নের ৯ কিলোমিটার এলাকায় প্রবল ভাঙনে কৃষিজমি, বাড়িঘর, স্কুল, মাদরাসা বিলীন হয়েছে ইতোমধ্যে। জাতীয় বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইনের কয়েকটি টাওয়ার ভেঙে পড়েছে নদী গর্ভে। এছাড়া উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে সংযুক্ত একমাত্র মহাসড়কটিও পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে চরম ঝুঁকিতে। এ বছর নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা, কপোতাক্ষ ও ভেড়ামারা ৪১০ মেগা কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রসহ নানা অবকাঠামো।
পদ্মার ডান তীরে ভাঙনকবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ১ হাজার ৪৭২ কোটি টাকা প্রাক্কলন ব্যয়ে ২০২৬ সালের ৩১ মের মধ্যে প্রকল্পটির সম্পূর্ণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

 

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝