শিরোনাম |
❒ জেলার ১৪৪টি ভাটাতেই সব শর্ত পূরণ নেই, নজরদারি চলছে
যশোর জেলার ১শ’৪৪টি ইট ভাটার মধ্যে ১১৪ টিই এখন অবৈধ। পরিবেশ আইনের ব্যত্যয় এবং ডিসির লাইসেন্স না থাকায় ওই ভাটাগুলোর বৈধতা নেই। এমনকি জেলার সবগুলো ভাটারই সব শর্ত পূরণ নেই। অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চলা ভাটাাগুলোর ব্যাপারে নজরদারি চলছে।
আবার পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে বেশিরভাগ ভাটা। জিগজ্যাগ পদ্ধতির মাত্র ৩০ ইটভাটা এখন পর্যন্ত মোটামুটি আইনসিদ্ধভাবে চলছে বলে দাবি পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের। আইন অনুযায়ী যশোরের বেশিরভাগ ভাটার বৈধতা না থাকায় এর আগে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও তা উঠে আসে। অবৈধ ভাটার ব্যপার তড়িৎ ব্যবস্থা নেয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মাঠে নামছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
ইতিমধ্যে গত এক মাসে ১৮ টি ইট ভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের পক্ষে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে অবৈধ ভাটাগুলো উচ্ছেদে কাজ শুরু হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যশোরের উপ পরিচালক এমদাদুল হক।
তথ্য মিলেছে, ২০১৩ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে সংশোধনী এনে ইট ভাটার জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক করা হয়। নির্দিষ্ট এলাকায় ইট ভাটার জায়গা ও ভাটার দূরত্ব ও সংখ্যা নির্ধারণের নিদেশনা দেয়া হয়। লাইসেন্সবিহীন ইট ভাটা চালালে দুই বছরের জেল ও ২০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান সংযোজন করে ‘ইট প্রস্তুত ও ভাটা (নিয়ন্ত্রণ) সংশোধন আইন, ২০১৯’ বিল সংসদে পাস হয়। ধারা-৪ এ সংশোধন এনে প্রতিস্থাপন করে বলা হয়, চলমান যে কোনো আইনে যা কিছুই থাক না কেন, ইট ভাটা যে জেলায় অবস্থিত সেই জেলার জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ না করলে কোনো ব্যক্তি ইট প্রস্তুত করতে পারবে না। কিন্তু যশোরের প্রেক্ষাপটে এ সবের ব্যত্যয় ঘটে আসছে ২০১৩ এমনকি ২০১৯ সালের সংশোধনী আইনের পর থেকেও।
পবিবেশ আইন অনুযায়ী, এক কিলোমিটারের মধ্যে আবাসিক এলাকা, সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন, বাগান জলাভূমি, কৃষি জমি, বিশেষ কোনো স্থাপনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও ক্লিনিক, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বা অনুরূপ কোন স্থান বা প্রতিষ্ঠান থেকে কমপক্ষে ১ কিলোমিটার বা ১ হাজার মিটার দূরত্বে ভাটা স্থাপন করতে হবে। একই সাথে ভাটাগুলো এখন জিগজ্যাগ পদ্ধতির হতে হবে। ১শ’২০ ফিট চিমনীর সনতনী ভাটা এখন আর আইনসিদ্ধ নয়। কিন্তু যশোর জেলার অধিকাংশ ভাটার ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় ঘটে চলেছে। আইনের ব্যত্যয় ঘটলেও অনেকে এর আগে ছাড়পত্র সংগ্রহ করেছেন। যদিও বিধি অনুযায়ী পরিবেশ আইন কার্যকর হওয়ার পর থেকে নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর, বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ কোনরূপ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স দিতে পারবে না। অথচ এর আগে অনেকেই নানা বাঁকা পথে হাসিল করেছেন ছাড়পত্র।
যশোরের এমন ভাটাও রয়েছে এক কিলোমিটার তো দুরের কথা, ২০ গজের মধ্যেই রয়েছে বসতবাড়ি, ১শ’ গজের মধ্যে ঘনবসতি গ্রাম রয়েছে। প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে কোনো শর্তই মানা হয়নি। সম্পূর্ণ অনিয়মতান্ত্রিকভাবে চলছে কয়েকটি ইট ভাটা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। আবাসিক এলাকায় ধানী ও কৃষি জমি নষ্ট করে তৈরি করা হয়েছে ইট ভাটা। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কবরস্থান ও মসজিদ, শতাধিক পরিবারের বসতি গ্রামসহ রয়েছে স্পর্শকাতর অনেক প্রতিষ্ঠান। বিগত সময়ে পরিবেশ আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে ভাটা নির্মাণ করা হয়েছে।
তথ্য মিলেছে, এক কিলোমিটারের মধ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এমন ভাটার সংখ্যা রয়েছে ১১০টি। এর অনেকগুলো জিগজ্যাগ হলেও পরিবেশ আইন মানা হয়নি। শর্ত পূরণ না করেই চলছে। যেকারণে অবৈধ তালিকায় পড়েছে ওগুলো। ওই তালিকা থেকে বছর কয়েক আগে ৩৩ টি ভাটার ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর ঢাকা সদর দপ্তরের মনিটরিং ও ইনফোর্সমেন্ট শাখায় প্রতিবেদন পাঠিয়েছিল। আইনগত বৈধতা না থাকায় ওই ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছিল প্রতিবেদনে। তবে ওই ভাটাগুলোর অধিকাংশই এখন চলমান রয়েছে।
সুত্রের দাবি, ডিসির লাইসেন্স ও পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই ভাটাগুলো চলায় ওই ভাটাগুলোর অনেকটার পাশেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রয়েছে নানা স্থাপনা। নষ্ট হয়েছে কৃষি জমি, প্রতিকূল প্রভাব পড়ছে আবাসিক এলাকায়।
সম্প্রতি পরিবেশ বিধি অনুযায়ী জেলার অবৈধ ১১৪টি ভাটার উপর নজরদারি চলছে। ইতিমধ্যে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি জেলার ১৮ টি অবৈধ ভাটার বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর। ওই ভাটা আইনগতভাবে না হলেও পরিবেশ আইনের ব্যত্যয় ঘটলে একে একে তা উচ্ছেদ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত ছিল পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের। এছাড়া জেলায় খাতা কলমে এখন যে ৩০ টি বৈধ ভাটা আছে তাদের ব্যাপারেও নতুন করে খোঁজখবর নেবে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোর।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপ পরিচালক এমদাদুল হক দৈনিক গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, ভাটা সংক্রান্ত সব অসঙ্গতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মাঠে নামা হচ্ছে। সকল প্রকার দেন দরবার উপেক্ষা করে জনস্বার্থে ও এলাকার পরিবেশ সমুন্নত রাখতে অবৈধ সব ভাটা উচ্ছেদে কাজ শুরু হয়েছে। অনেক ভাটার আংশিক করে ভেঙে দেয়া হয়েছে। জরিমানা করা হচ্ছে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে। যশোরে কোনো অনিয়ম মেনে নেয়া হবে না। যশোরে আগে কি হয়েছে বিবেচ্য নয়, এখন সব ভাটাতেই বিধি অনুযায়ী চালাতে হবে। পরিবেশ আইনের ব্যত্যয় ঘটলেই ব্যবস্থা।