gramerkagoj
বুধবার ● ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২৩ মাঘ ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
ভাড়াটিয়া খুনিরা কক্সবাজারে মেরেছে খুলনার কাউন্সিলরকে-দাবি পরিবারের
প্রকাশ : শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি , ২০২৫, ০৮:৩৬:০০ পিএম
খুলনা ব্যুরো:
GK_2025-01-10_678130b546340.jpg

কক্সবাজারের সমুদ্রসৈকতে খুলনা সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর গোলাম রব্বানী ওরফে টিপুর (৫৪) খুন হওয়ার ঘটনাটিকে পরিকল্পিত বলছে পরিবার। স্বজনেরা দাবি করেছেন, খুলনায় গোলাম রব্বানীর শত্রুরা শুটার ভাড়া করে তাকে হত্যা করিয়েছে। তবে কারা তার শত্রু ছিল, তারা বলতে রাজি হননি। বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোলাম রব্বানীকে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, রাত সাড়ে আটটার দিকে রব্বানী সিগাল হোটেলের সামনে ঝাউবাগানের ভেতর কাঠের তৈরি সেতুর পাশে হাঁটছিলেন। তখন দুই ব্যক্তি মোটরসাইকেলে এসে তার মাথায় গুলি করে দ্রুত পালিয়ে যান। পরে তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
গোলাম রব্বানী খুলনা সিটির চার নম্বর ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর এবং মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি। গত ২৬ সেপ্টেম্বর দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সঙ্গে তাকেও অপসারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রব্বানীদের আদি বাড়ি রূপসার আনন্দনগর এলাকায়। পাঁচ দশক ধরে তারা নগরের দেয়ানা এলাকায় বাস করছেন। বাবা গোলাম আকবর ছিলেন স্কুলশিক্ষক। তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে রব্বানী মেজ। বড় ভাই গোলাম রসুল স্কুলশিক্ষক আর ছোট ভাই গোলাম রহমান পারিবারিক ব্যবসা দেখাশোনা করেন। সব ভাই এক বাড়িতে থাকতেন। রব্বানীর ১৩ বছর বয়সী একটি ছেলে ও ৮ বছর বয়সী একটি মেয়ে আছে। রব্বানীর জমিজমা কেনাবেচার ব্যবসা ছিল। একসময় কক্সবাজারেও তার ব্যবসা ছিল।
গতকাল শুক্রবার সকালে নগরের দেয়ানা উত্তর পাড়ায় রব্বানীদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবেশ থমথমে। বাড়ির সামনে ফাঁকা জায়গা কিছু চেয়ার পাতা। সেখানে মানুষ আসছেন, কথা বলছেন।
রব্বানীর বড় ভাই গোলাম রসুল সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে রব্বানী ঢাকায় ছিলেন। তিনি আদৌ কক্সবাজারে গেছেন কি না, তারা জানতেন না। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে তারা খবর পান। সেখানকার থানা থেকে তাদের ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। পরে রাত ১১টার দিকে গণমাধ্যমে ছবি দেখে বিষয়টি নিশ্চিত হন। তিনি বলেন, ‘সে এখানকার একজন জনপ্রিয় কাউন্সিলর ছিল। জনপ্রিয়তা এত বেশি ছিল যে সে জীবিত থাকলে এখানে আর কেউ কাউন্সিলর হতে পারবে না। ৮ জানুয়ারি ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইফতেখার ওরফে চালুসহ কয়েকজন রব্বানীকে টোপ দিয়ে কক্সবাজারে নিয়ে যান। ব্যবসা বা অন্য কোনো কথা বলে হয়তো নিয়ে যান। ওখানে আগে থেকেই শুটার সেট করা ছিল।’
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে কক্সবাজার থেকে সাবেক কাউন্সিলর হাসান ইফতেখারকে আটক করেছে র‌্যাব। তিনি ১৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। গোলাম রসুল বলেন, ‘কাউন্সিলরদের সঙ্গে তো কাউন্সিলরদের সম্পর্ক থাকে। ইফতেখার হয়তো কারও না কারও প্ররোচনায় বা ব্যবসায়িক কথা বা অন্য কোনো প্রয়োজনের কথা বলে নিয়ে গেছে। যাই হোক না কেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা খুলনাকেন্দ্রিক। তার (রব্বানী) শত্রুরা তাকে হত্যা করিয়েছে। শত্রু কারা, সেটা আমি বলতে পারছি না।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, একসময় দৌলতপুর ও দেয়ানা এলাকার কারও কারও আন্ডারগ্রাউন্ডের পলিটিকসের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল। এসবের সূত্র ধরে এলাকায় পক্ষ-বিপক্ষও আছে। ব্যক্তিগত আক্রোশ, পারিবারিক কোন্দল ও এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দৌলতপুর এলাকায় বেশ কিছু হত্যাকাণ্ডের ঘটনাও ঘটেছে। ২০১৫ সালে দৌলতপুরে জ্বালানি তেল ব্যবসায়ী ও পাটশ্রমিক ঠিকাদার শহীদুল ইসলাম ওরফে হুজি শহীদ হত্যাকাণ্ডের ঘটনার অন্যতম আসামি ছিলেন গোলাম রব্বানী।
এ ব্যাপারে রব্বানীর ভাই গোলাম রসুল বলেন, ‘হতেও পারে ওই ঘটনার প্রতিশোধ। বহু গ্রুপ একত্র হয়ে বহুদিন ধরে রব্বানীকে হত্যা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মধ্যে বাড়িতে বোমা হামলা হয়েছে। যেভাবেই হোক, তারা সফল হয়েছে। তবে আমি কারও নাম বলব না। যেটাই হোক, এটা আমাদের এলাকাভিত্তিক দ্বন্দ্ব।’ পূর্বপরিকল্পিতভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কক্সবাজারে তার (রব্বানী) শত্রু ছিল না। খুলনা, দৌলতপুর, পাবলা, দেয়ানা-এখান থেকেই এটার সূত্রপাত। অন্য বিষয়ের চেয়ে এটার পেছনে এলাকার দ্বন্দ্ব, এলাকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা কাজ করেছে।’
পরিবার সূত্রে জানা যায়, এ ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসনের কেউ তাদের ফোন করেনি। পেশায় পুলিশ পরিদর্শক এক ভগ্নিপতিকে কক্সবাজারে পাঠানো হয়েছে। মামলার বিষয়ে এখনো পরিবার কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
রব্বানীর বাবা গোলাম আকবর সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার তিন ছেলে ও এক মেয়ে। টিপু (রব্বানী) মেজ। খুবই সৎ। পড়ালেখা করার সময় আমি বই কিনে দিয়ে আসি। সেই বই বিক্রি করে যে ভর্তি হতে পারেনি, তাকে ভর্তি করে দিয়েছে। ছোটবেলা থেকেই মানুষের উপকার করত। কাউন্সিলর হওয়ার পর সে এমনভাবে এলাকাটাকে ট্যাকেল করেছে (সামলেছে) যে মানুষের প্রচুর ভালোবাসা পেয়েছে। আমার সামনে আমার ছেলে মারা যাবে, কল্পনা করা যায়! যারা এই কাজ করেছে, তাদের বিচার হোক। তারা ধরা পড়ুক। কক্সবাজারের লোক এটা করেনি। আমাদের এলাকার লোকই এটা করেছে।’
প্রতিবেশীরা জানান, এলাকায় রব্বানীর ব্যাপক প্রভাব ছিল। কাউন্সিলর হওয়ার পর প্রভাব আরও বাড়ে। ধীরে ধীরে এলাকার নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন। কাউন্সিলর হওয়ার পর থেকে ‘গানম্যান’ নিয়ে ঘুরতেন। সব সময় তার সঙ্গে লোকজন থাকতেন।
নাম প্রকাশ না করে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘যেমন লোক ছিল, সেভাবেই মরেছে। বুঝে নেন কেমন ছিল।’ অন্য আরেকজন বলেন, ‘মানুষের উপকার করত। কিন্তু একই সঙ্গে ভিন্নমতের বা নিজের অপছন্দের লোকদের পুলিশ দিয়ে হয়রানি করত। অনেককে জেল খাটিয়েছে। কাউন্সিলর হওয়ার পর সব সময় সঙ্গে গানম্যান নিয়ে ঘুরত। সেলুনে গেলেও তার সঙ্গে ১৫-২০ জন থাকত।’
এর আগে ২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল রাতে রব্বানীর বাড়িতে ককটেল হামলার অভিযোগ উঠেছিল। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ওই ঘটনার জন্য দায়ী ছিল বলে তখন রব্বানী অভিযোগ করেছিলেন।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝