শিরোনাম |
❒ শাস্তির আওতায় আসছে ৬২ রাইসমিল!
যশোরে সরকারি খাদ্য গুদামে চাল দিচ্ছেন না ৬২ রাইসমিল মালিক। এমনকি বাধ্যবাধকতা থাকার পরও তারা খাদ্য বিভাগের সাথে চুক্তি না করে ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছেন। এসব মিল মালিক কেন চাল দিচ্ছেন না তা জানতে ব্যাখ্যা তলব করেছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। সন্তোষজনক জবাব না দিলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। শাস্তি হিসেবে তাদের মিলের লাইসেন্স বাতিল এবং বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, সরকারি খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহের জন্য যশোরে চুক্তিযোগ্য মিল রয়েছে ১৬৩ টি। চলতি আমন মৌসুমে এরমধ্যে ১০১ টি রাইসমিল চাল দেবে বলে চুক্তি করে। বাকি ৬২ টি রাইসমিল মালিক চাল দেবেন না বলে গো ধরে বসে আছেন। এ কারণে বারবার বলার পরও তারা চুক্তি পর্যন্ত করছেন না। তাদের অসহযোগিতার কারণে চাল সংগ্রহ ইতিমধ্যে মুখ থুবড়ে পড়েছে। আর যারা চুক্তি করেছেন তারা বাজারে দাম বেশি থাকার অজুহাতে ঠিকমতো সরবরাহ করছেন না।
মঙ্গলবার পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৩৭ শতাংশ চাল সংগ্রহ হয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বর্তমানে চাল সংগ্রহ এক প্রকার বন্ধ রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, জেলায় ১৬৩ চুক্তিযোগ্য রাইসমিলের মধ্যে সদর উপজেলায় ২৬, মণিরামপুরে ২৮, কেশবপুরে ৩৪, অভয়নগরে ৮, ঝিকরগাছায় ৯, শার্শায় ২৩, বাঘারপাড়ায় ৭ ও চৌগাছায় ২৮ টি রয়েছে। এরমধ্যে সদর উপজেলায় ১১, মণিরামপুরে ১৫, কেশবপুরে ২৬, অভয়নগরে ঝিকরগাছায় ৭, শার্শায় ১৮, বাঘারপাড়ায় ৫ ও চৌগাছায় ১৫ মিল চুক্তি করেছে। চুক্তি না করার মধ্যে ১০ টি অটো এবং ৫২ টি হাস্কিং রাইসমিল রয়েছে।
যে ৬২ জন মিল মালিক চুক্তি করেননি তাদের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছেন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক। গত ২ জানুয়ারি ব্যাখ্যা তলব করে পত্র দিয়েছেন তিনি। আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে ব্যাখ্যার জবাব দিতে বলা হয়েছে ওই পত্রে।
পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, লাইসেন্স পাওয়া মিল মালিকরা সরকারের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষর এবং তদনুযায়ী চাল বা আটা সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে। একইসাথে ওইপত্রে আইন উদ্ধৃত করে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আদেশপ্রাপ্ত হইয়া চুক্তি স্বাক্ষর না করিলে বা চুক্তি স্বাক্ষর করিয়া চাল বা আটা সরবরাহ না করিলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল এবং তিনি বা তারা আইনের ধারা ৬ এর অধীন দন্ডিত হবেন। যেহেতু আপনি সরকারি নির্দেশ বা সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছেন, সেহেতু কেন আপনার মিলের লাইসেন্স বাতিল এবং আপনার মিলকে কালো তালিকাভুক্তসহ বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার যথাযথ লিখিত জবাব আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে জমা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হলো।’
খাদ্য বিভাগ জানিয়েছে, চলতি আমন মৌসুমে যশোরে সিদ্ধ চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ২৪৭ মেট্রিকটন। এরমধ্যে চুক্তি হয়েছে সাত হাজার ৭৭৯.৯৪৫ মেট্রিকটন। আর মঙ্গলবার পর্যন্ত সংগ্রহ হয়েছে চুক্তির মাত্র ৩৭ শতাংশ। এছাড়া, আতপ চালের লক্ষ্যমাত্রা ৮০১ মেট্রিকটন নির্ধারিত রয়েছে। এবার ৪৭ টাকা কেজি দরে চাল কিনছে সরকার। মিল মালিকদের বক্তব্য, বাজারে চালের দাম অনেক বেশি। এ কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
তবে, খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা এখনো চুক্তি করেননি তাদের অধিকাংশের মিল এখন ‘কাগজ-কলমে’। বাস্তবে কার্যক্রম নেই। এতদিন তারা অটো রাইসমিল থেকে চাল কিনে সরবরাহ করতেন। এবার দাম বেশি থাকায় সেই ঝুঁকি নিচ্ছেন না ওইসব কথিত মিল মালিক। আবার অটো মিল মালিকরা লাভের সময় নির্ধারিত বরাদ্দের বাইরে গিয়ে একের পর এক অতিরিক্ত বরাদ্দ নেন। এখন দাম বেশি হওয়ায় ১০ জন অটো মিল মালিক চুক্তিই করেননি। এরা কেবল লাভই করতে চান! মূলত সরকারকে চাল না দিয়ে বেকায়দায় ফেলছেন মিল মালিকরাই-মন্তব্য কয়েকজন খাদ্য কর্মকর্তার।
এসব বিষয়ে চুক্তি করেননি এমন দু’জন মিল মালিকের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। এমনকি তাদের নাম যাতে পত্রিকায় লেখা না হয় সেজন্য অনুরোধ করেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সেফাউর রহমান বলেন, ‘আমরা বারবার মিলারদের চুক্তি করতে বললেও ৬২ জন আমলে নিচ্ছেন না। অথচ তারা চুক্তি করে চাল দিতে বাধ্য। চুক্তি না করার কারণে তাদের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতে না পারলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হবে।’
কী ধরনের শাস্তির সুপারিশ করা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কালো তালিকাভুক্ত করে লাইসেন্স বাতিল ও বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার সুপারিশ করা হবে।’