শিরোনাম |
❒ সীমান্তে মানব পাচার-২
❒ # ইছামতি নদী ভারতে পাচারের অন্যতম পথ, গ্রামের পাশ্ববর্তী ১৩ কিলোমিটারে তিনটি সীমান্ত, প্রলোভনে পড়েই পাচার হচ্ছে নারীরা, সক্রিয় দালালচক্রের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই
বাংলাদেশের মানচিত্রে নেই নামটি, কিন্তু যশোরের ছোট্ট এক টুকরো গ্রামকে স্থানীয়রা চেনে ‘ভারত গ্রাম’ নামে। যুগ যুগ ধরে এই নাম মুখে মুখে ফেরে। যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়া ইউনিয়নে এই গ্রামের পশ্চিম দিকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার আয়তনের মাখলার বিল। বিলটি মিশেছে ইছামতি নদীতে। বর্ষাকালে নদী উপচানো পানি বিলে ঢোকে, বিল ছাপিয়ে পানি ভাসায় গ্রামটিকে। ইছামতি নদীই ভারতের সাথে বাংলাদেশের এই গ্রামের সীমান্ত ভাগ করে দিয়েছে। দেশের এমন হাজারো গ্রাম আছে ভারতের সাথে সীমান্ত ঘেঁষা। কিন্তু যশোরের এই গ্রামটিই একমাত্র যার নিজের নাম থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এমনকি দেশের আরও দূরের মানুষেরা গ্রামটিকে চেনে ‘ভারত গ্রাম’ নামে।
দেশের মানচিত্রে প্রায় সাত বর্গকিলোমিটারের এই গ্রামের নাম বসতপুর। আট হাজারের বেশি মানুষের বাস এই গ্রামে। আছে দু’টি কলোনিপাড়া। গ্রামটির পূর্বদিকে সাত কিলোমিটার গেলে মূল বড়বাজার ও যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়ক। এখানেই ইউনিয়ন পরিষদ। গাছগাছালিতে ভরপুর এ বসতপুরের পশ্চিম ও পশ্চিম উত্তরকোণে ভারতের তিনটি সীমান্ত এলাকা। সবচেয়ে কাছের, সাত কিলোমিটার দূরে গোগা সীমান্ত। এরপর নয় কিলোমিটার দূরে ভুলট এবং ১৩ কিলোমিটার দূরে পুটখালী সীমান্ত।
গ্রামবাসীর জীবনযাত্রা সাধারণ চোখে অন্যসব সীমান্তবর্তী গ্রামের মতোই। কিন্তু দৃষ্টির আড়ালে যুগ যুগ ধরে এই গ্রামের মানুষ পাচারের শিকার হয়ে আসছে। আর পাচার হওয়া গ্রামবাসীর প্রথম গন্তব্য ভারত। কেউ অজান্তে, আবার কেউ বা প্রতারণার শিকার হয়ে পাচার হয়। নারী, পুরুষ, শিশু কেউ বাদ যায় না এই পাচারকারী চক্রের হাত থেকে। তবে, পাচারকারীদের মূল লক্ষ্য নারী। সুদীর্ঘ এই পাচার বাণিজ্য গ্রামটির স্বাভবিক জীবনযাত্রার অংশ। আর যেহেতু পাচারের গন্তব্য ভারত তাই মানুষের মুখে মুখে এই গ্রামের নাম কত যুগ আগে পাল্টে ‘ভারত গ্রাম’ হয়েছে সেই ইতিহাস বর্তমানের গ্রামবাসীর কারও জানা নেই।
গ্রামটির উত্তর পাশ দিয়ে একটি সড়ক গেছে ভারত সীমান্তের দিকে। গোগা নামে এই সড়কটিই মানব পাচারকারীদের প্রধান রুট। মানব পাচার বাণিজ্যের সাথে জড়িয়ে আছে মাদকসহ আরও অনেক ধরনের জিনিস পাচারের সম্পর্ক, জানান গ্রামটির ইউপি মেম্বার আব্দুল মালেক।
বসতপুর গ্রামের চল্লিশোর্ধ এক নারী বলেন, এ গ্রামের বেশিরভাগ নারী ভারতে যাতায়াত করে। সেখানে তারা কাজ করে এবং মাঝে মাঝে গ্রামে এসে পরিবারকে টাকা দিয়ে যায়। গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে এ অবস্থা বিরাজ করছে। এ কারণে গ্রামে দু’টি ভারত কলোনি গড়ে উঠেছে, যা সবার কাছে পরিচিত।
এসব বিষয়ে কথা হয় স্থানীয় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আব্দুল মালেকের সাথে। তিনি বলেন, বসতপুর গ্রামটি অনেকের কাছে ভারত গ্রাম নামে পরিচিত। এখানকার অনেক মেয়ে দালালের মাধ্যমে সীমান্তের চোরাপথে ভারতে গিয়ে বিভিন্ন কাজের সাথে যুক্ত রয়েছে। তারা গ্রামে যাতায়াতও করে। এ কারণে বসতপুর ‘ভারত গ্রাম’ হিসেবে নতুন পরিচিতি পেয়েছে। তবে, এখন মেয়েদের ভারত যাওয়ার প্রবণতা একটু কমেছে। সীমান্তের ভারতীয় অংশে কাঁটাতারের বেড়াসহ কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। তারপরও যাতায়াত থেমে নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেকের সাথে কয়েকদফা যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত হওয়ায় গত ৫ আগস্টের পর থেকে আর ইউনিয়ন পরিষদে যাননি এবং কারো মোবাইল ফোনও রিসিভ করছেন না। তিনি বর্তমানে যশোর শহরে বসবাস করেন বলে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জানানো হয়েছে।
বসতপুর গ্রামের মেয়ে জেমিনি (ছদ্মনাম)। একসময় পাচারের শিকার হয়ে পরে ফিরতে পেরেছে নিজের জন্মস্থানে। কিন্তু তার স্বাভাবিক জীবন তছনছ হয়ে গেছে। থাকেন যশোরে একটি ‘শেল্টার হোমে।’ পাচার হওয়ার পরের জীবনটি ছিল ভয়াবহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের। এক সময় সেই বেদনা আর কান্নার জীবনই সহনীয় হয়ে উঠেছিল। তখন ভারত থেকে রাতের আঁধারে গোপনে সীমান্ত পেরিয়ে গ্রামে এসে পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করে ফিরে গেছেন পাচার হওয়া জীবনে। বহু বছর ভারতের কলকাতার এক অন্ধকার জগতে ছিল তার বাস। অনাকাঙ্খিত এই জীবনের এক পর্যায়ে ধরা পড়ে যান, তারপর উদ্ধারকারীদের মাধ্যমে যশোরের একটি বেসরকারি শেল্টার হোমে তার ঠাঁই হয়।
এই প্রতিবেদকদের কথা হয় জেমিনির সাথে। জানান, ২০০৯ সালে তার বয়স ছিল ১৪, নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন। বসতপুর গ্রামের দু’নম্বর কলোনিপাড়ায় পরিবারের সাথে থাকতেন। ধনী পরিবারে বিয়ে করার সাধ লালন করতেন, যেন উন্নত জীবন হয়। তা না হলে কাজ করে গ্রামের দরিদ্র জীবন পাল্টানোরও চিন্তা ছিল। জীবনের সেরকম ভাবনার একপর্যায়ে জেমিনির সাথে যোগাযোগ হয় দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়ের। সেটাই তার জীবনের মোড় ঘুরায়; তবে, স্বপ্নের পথে নয়, কল্পনাতীত দুঃস্বপ্নের গন্তব্যে।
জেমিনি তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের কাছ থেকে ভারতের কলকাতায় যাওয়ার প্রস্তাব পান। সেখানে বিউটি পার্লারে কাজ মিলবে বলে জানানো হয় তাকে। সিনেমার অনেক নায়িকারা সেই পার্লারে যায়। ভালো কাজ ও সম্পর্ক গড়তে পারলে ভারতের চলচ্চিত্রেও অভিনয় করার সুযোগ মিলতে পারে! যেন মনের গভীরে অজান্তে লালন করা স্বপ্ন উড়ে এসে ধরা দেয় জেমিনির কাছে। তাই তার মোহ আবিষ্ট মন যৌক্তিক চিন্তার জগতকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। মোহের টানে জেমিনি রাজি হয়ে যান। ভারতের কলকাতায় যাবেন, নায়িকা হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হন। সে বছর সেপ্টেম্বরের এক রাতে বাড়ির কাউকে না জানিয়ে আত্মীয়রূপী দালালের সাথে বাড়ি থেকে সাত কিলোমিটার দূরের গোগা সীমান্তে যান। সেখানে আরও চার-পাঁচজন অপেক্ষমান মেয়ের দেখা পান। সেখান থেকে নৌকায় ইছামতি নদী পার হন তারা। নদীর ভারত পাড়ে নেমে একটি বাগানের পথ ধরে হেটে একটি ঘরে পৌঁছান। সেখানে একদিন থাকেন। আত্মীয়রূপী পুরুষ দালাল পরেরদিন ফিরে যান। যাওয়ার আগে অভয় দিয়ে যান-সেখানের সবাই তার পূর্বপরিচিত, কোনো সমস্যা নেই। ভালো একটি বিউটি পার্লারে জেমিনির কাজের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সেই ঘর থেকে পরের বিকেলে জেমিনিকে বাসে করে কলকাতায় নেয় ওপারের দালালেরা। প্রায় দু’ঘণ্টা বাস চলার পর সন্ধ্যা সাতটার দিকে একটি বাজারের কাছে নামেন। বাজারের ভেতরের গলি রাস্তা দিয়ে হাটতে থাকেন, দু’পাশে আরও মেয়েরা দাঁড়িয়ে ছিল। সেই পরিবেশ প্রথম স্বপ্নে বিভোর জেমিনির মনে ভয়ের অনুভূতি তৈরি করে। হাঁটতে হাঁটতেই সঙ্গী এক ভারতীয়কে বলেন, আর যাবেন না, বাড়ি ফিরে যাবেন। ততক্ষণে বড্ড বেশি দেরি হয়ে গিয়েছিল। যে পথে ঢুকে পড়েছিলেন জেমিনি সে পথ থেকে ফেরার সামর্থ্য তার ছিল না।
সঙ্গী ভারতীয় ব্যক্তি জেমিনির হাত শক্ত করে ধরে টানতে টানতে আরও ভেতরে নিয়ে যায়। এক জায়গায় গিয়ে মাঝ বয়সী এক মহিলার হাতে তুলে দেয় জেমিনিকে। সেখান থেকে আরও দু’জন তাকে জোর খাটিয়ে একটি ঘরে নিয়ে আটকে রাখে। সেই রাতেই জেমিনির জীবনের সব সুন্দর স্বপ্নেরই শুধু মৃত্যু ঘটেনি, একজন নারী হিসেবে জেমিনি তার জীবনের শারীরিক ও মানসিক ইচ্ছার সকল স্বাধীনতা হারিয়ে ফেলেন। অন্যের ইচ্ছার কৃতদাসে পরিণত হয় তার জীবন, যা বিভীষিকাময় নির্যাতনের।
জেমিনি বলেন, এভাবে একমাস আটকে রেখে তার দেহ বিক্রি করতো দালালরা। এমনও হয়েছে, একদিনে ১৫ থেকে ২০ জন পুরুষকে পাঠনো হয়েছে জেমিনির কাছে। একপর্যায়ে জেমিনি জানতে পারেন, কলকাতার একটি যৌন পল্লীতে তাকে বিক্রি করা হয়েছে। অনাকাঙ্খিত সেই জীবনকে এক সময় মেনে নেন জেমিনি, প্রতিমাসে ভালো টাকা আয়ও করেন।
সেই অন্ধাকার জীবনের একপর্যায়ে সেখানে তার সাথে পরিচয় হয় বাংলাদেশি এক যুবকের। তার সহযোগিতায় তিনি এক বছর পর গোগা সীমান্তের ওই চোরাপথ দিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। কিন্তু বাড়ি ফিরে এসে হতাশ হন। পরিবারের লোকজন তাকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে পারেননি। পাড়া প্রতিবেশীর বাঁকা কথা, হাসাহাসি, তাচ্ছিল্য ও পরিবারের অনীহায় মন খারাপ করে তিনি ফের ভারতে ফিরে যান। ওই পল্লীই তার স্থায়ী ঠিকানা হয়ে ওঠে। গত ১৫ বছরে জেমিনি সাত থেকে আটবার সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া টপকে ভারত গ্রামের বাড়িতে এসেছেন। রাতের আঁধারে বাবা-মায়ের সাথে দেখা করে সময় কাটিয়ে দু’চার দিন পর আবারো ফিরে গেছেন ভারতে । অবশ্য এসব যাতায়াতে সীমান্ত পার হওয়ার জন্য তাকে দালালদের হাতে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা করে দিতে হয়েছে।
সর্বশেষ, জেমিনি চলতি বছরের আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে বাড়ি এসে ভারতে ফেরার পথে গোগা সীমান্ত পার হওয়ার সময় বিজিবির হাতে ধরা পড়েন। এ দলে তার সাথে আরও পাঁচজন ছিল। বিজিবি সদস্যরা তাদেরকে আটক করার পর আদালতের মাধ্যমে ঢাকা আহছানিয়া মিশনের শেল্টার হোমে পাঠায়।
যশোর সদর উপজেলার ভেকুটিয়া গ্রামের এ শেল্টার হোমে গিয়ে জানা যায়, গত দু’মাস তিনি বসবাস করছেন। বিষয়টি তিনি পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন, কিন্তু এখনও কেউ তার সাথে দেখা করেননি। এ শেল্টার হোমে তার সাথে কথা হলে তিনি পাচারের কাহিনী জানান। এখানে তিনি কাঁদতে কাঁদতে অনুরোধ করেন, তার নাম-পরিচয় যেন প্রকাশ করা না হয়। তিনি বলেন, তার জীবন ও স্বপ্ন শেষ হয়ে গেছে। এখন আর বেঁচে থাকতে ভালো লাগে না। মা-বাবাসহ সবাই থাকতেও এখন তার কেউ নেই। চারদিকে শুধুই হতাশা। তার অনেক টাকা থাকলেও এমন জীবন মানুষের হতে পারে না। উচ্চাকাঙ্খা তার জীবন শেষ করে দিয়েছে বলে তিনি আফসোস করেন।
তিনি বলেন, বসতপুর ভারত গ্রামে কলোনি-১ এবং কলোনি-২ এ প্রায় প্রতিটি পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশু ভারতে পাচারের শিকার হয়ে বসবাস করে। সেখানে কেউ গৃহপরিচারিকা, কেউ বিউটি পার্লারে আবার কেউ যৌনকর্মীর পেশায় যুক্ত হয়েছেন। তারা মাঝে মাঝেই গ্রামে ফিরে আসে এবং পরিবারকে টাকা দিয়ে কয়েকদিন কাটিয়ে ফিরে যান। আবার কেউ কেউ গ্রামের নারীদের বেশি টাকা আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌনপল্লীতে নিয়ে বিক্রি করছে। ওই গ্রামের কয়েকজন নারী ও পুরুষ এ পাচার কাজের সাথে জড়িত। যারা গ্রামবাসীর মধ্যে পাচারকারী হিসেবে পরিচিত। কিন্তু কেউ তাদেরকে এ কাজে বাধা দেয় না।
পাচারের শিকার ওই গ্রামের কলোনি-২ এর ৩২ বছর বয়সী অপর এক নারী জুবুলি (ছদ্মনাম) বলেন, গত ২০১৪ সালে তিনি ভারতে পাচারের শিকার হন। ভালো কাজের প্রলোভনে পড়ে গ্রামের এক নারীর সাথে তিনি কলকাতায় যান। সেখানে নিয়ে তাকে একটি আবাসিক হোটেলে কাজ করার চাকরি দেয়া হয়। এরপর থেকে শুরু হয় তার ওপর নির্যাতন। সেখানে তাকে যৌনকর্মীর পেশায় যুক্ত করা হয়। বছরখানেক পর এক বাংলাদেশির মাধ্যমে দেশে ফিরে আসার পর আর যাননি। যদিও কয়েকদফা দালালরা তার কাছে এসে বিনা খরচে ভারতে পাঠানো ও ভালো কাজ দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি তাদের প্রস্তাবে আর রাজি হননি।
পাচারের শিকার নারী ও শিশুদের সাময়িক আশ্রয় দেয়ার ব্যবস্থা করেছে ঢাকা আহছানিয়া মিশন। যশোর সদর উপজেলার ভেকুটিয়া গ্রামে তারা শেল্টার হোম গড়ে তুলেছে। এখানে তারা পাচারের শিকার ও উদ্ধার হওয়া নারী-শিশুদের আশ্রয় দিয়ে থাকেন। তবে, সেটা আইনগত প্রক্রিয়ায় ও থানা পুলিশ, আদালতের মাধ্যমে।
এদিকে, যুগের পর যুগ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যশোর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলার সীমান্ত পথে চলছে মানবপাচার। এসব পাচারকারী সিন্ডিকেটের সাথে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সখ্যতা রয়েছে। তারা জানে কারা পাচারের সাথে জড়িত ও কীভাবে কোন কৌশলে পাচার করা হচ্ছে। অথচ অবৈধ এ কর্মকান্ড বন্ধে নেই কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। উপরন্তু তাদের সাথে অর্থনৈতিক লেনদেনের কারণে পরোক্ষ সহযোগিতায় পাচার বন্ধ হচ্ছে না। এ কারণে শার্শার বসতপুর গ্রাম তার নাম হারিয়ে স্থানীয়দের কাছে ভারত গ্রাম নামে নতুন পরিচিতি পেয়েছে। গ্রামবাসীও বিষয়টি মেনে নিয়েছে, অবৈধ এ কারবার প্রতিরোধে কারো কোনো মাথাব্যাথা নেই। জনপ্রতিনিধিরাও এ বিষয়ে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছেন।
যদিও বিজিবির অভিযানে প্রতি মাসেই বিপুল সংখ্যক নারী-পুরুষ সীমান্ত থেকে আটক হচ্ছে। আবার ভারতের যৌনপল্লী এবং অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক হওয়ার পর আইনি প্রক্রিয়া শেষে বিএসএফ, বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে। এর বাইরেও গত ১০ বছরে আরও ১৫ হাজার নারী-পুরুষ সীমান্ত পাড়ি দিয়েছে বলে পাচার নিয়ে কাজ করা দু’টি উন্নয়ন সংস্থা রাইটস যশোর ও ঢাকা আহছানিয়া মিশন সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর ৪৯ বিজিবির অপারেশন অফিসার মাসুদ রানা বলেন, ৪৯ বিজিবি যশোরের শার্শা উপজেলা থেকে ঝিনাইদহের মহেশপুরের যাদবপুর পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার সীমান্তে দায়িত্ব পালন করে। এ দায়িত্ব পালনের জন্য সীমান্তে বিজিবির ১৪টি বিওপি ক্যাম্প রয়েছে। বিজিবির কঠোর অভিযানে সীমান্ত এলাকায় এখন মানব পাচার ও মাদক পাচার প্রায় বন্ধ হওয়ার পথে। আগামীতে এ জাতীয় অবৈধ কর্মকান্ড জিরোতে নামিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন তিনি।