শিরোনাম |
চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ কৃষকদের কাছে সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আমচাষে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় গত দু'বছর ধরে কৃষকেরা মিষ্টি কুমড়ার চাষে ঝুঁকে পড়ছেন।
আবহাওয়া জনিত সমস্যার কারণে ভোলাহাটের কৃষি অর্থনীতিতে পরিবর্তনের হাওয়া দোলা দেয়। পূর্বে রেশম ও আমচাষে কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সাথী ফসল হিসেবে অনেক কৃষক তুঁতজমিতে ও আম বাগানের ফাঁকাস্থানে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে বাড়তি ফসল করে লাভবান হচ্ছেন। সেই ধারনা থেকে ভোলাহাটের বহু আমচাষী ও আমবাগান মালিকেরা আমগাছ কর্তন করে মিষ্টি কুমড়া চাষে উৎসায়ী হয়ে উঠেন। এমনকি গত বছরে মিষ্টি কুমড়া আবাদ করে বিভিন্ন কৃষকগণ লাভবান হলে কিছু কিছু রেশমচাষীও মিষ্টি কুমড়া আবাদে আকৃষ্ট হওয়ার দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে।
সে সুবাদে চলতি বছর উপজেলায় মিষ্টি কুমড়ার চাষ হয়েছে ১ হাজার ৬শ' হেক্টর জমিতে। গত বছর কৃষকেরা মিষ্টি কুমড়া আবাদ করে লাভবান হওয়ায় এবারের চাষের জমির পরিমাণ ৭শ' হেক্টর বেশী ধরা হয়েছে বলে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ সুলতান আলী জানান।
গত বছর কৃষকেরা বিঘাপ্রতি জমিতে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে আয় করেছিলেন ৫০ হাজার থেকে ৭৫ হাজার এমনকি ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত। মিষ্টি কুমড়ার চাষাবাদ করে কৃষকেরা লাভবান হওয়ায় এবারের মৌসুমে তুঁতজমিতে ও আমবাগান কেটে বেশিমাত্রায় কৃষকেরা এ সব্জী চাষে ঝুঁকে পড়েন। এ মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদে খরচও কম লাগে। ১ বিঘা জমিতে এ সব্জী চাষ করতে খরচ মাত্র ৬/৭ হাজার টাকা লাগে। ফলে কৃষকের আয় বেশী হয় বলে জানান কৃষক ও সব্জী ব্যবসায়ীগণ।
তাঁতীপাড়া গ্রামের কৃষক মোঃ আব্দুল কাদির বলেন, নিয়মানুযায়ী যেসব চাষী মিষ্টি কুমড়া আবাদ করেছে, তাদের আশানুরূপ ফলন ভাল হয়েছে। আর যারা মৌসুমের আগেভাগেই ও সার-পানি নিয়মতান্ত্রিকভাবে প্রয়োগ করেনি তাদের ফলন খারাপ হয়েছে। তবে আশানুরূপ বর্তমানে ফলন ভাল হচ্ছে বলে তিনি জানান।
উপজেলার গোহালবাড়ী গ্রামের ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার চাঁন মোহাম্মাদ এ প্রতিবেদককে বলেন, যদি পরিকল্পিতভাবে কৃষকগণ মিষ্টি কুমড়া আবাদ করে, তাহলে কোনদিনই কৃষক ঠকবে না। আবাদকৃত ফলন বৃদ্ধি পাবে ও লাভবান হবে। তিনি আরো বলেন, কৃষকরা প্রতি বিঘাতে প্রায় ৪০/৫০ মন মিষ্টি কুমড়া বরই বা কুলের জমিতে আবাদ করে এ ফলন পাচ্ছে। আর যারা খোলামেলা জমিতে আবাদ করে প্রায় ৬০/৭০ মন বিঘাপ্রতি মিষ্টি কুমড়া পাচ্ছে বলে তার মতামত ব্যক্ত করেন।
আরেক কৃষকের আবাদকৃত মিষ্টি কুমড়া ক্রয় করে ব্যবসিক মোঃ কাওসার আলী বলেন, যে হারে মিষ্টি কুমড়ার আবাদ করে কৃষকগণ লাভবান হচ্ছে, তাতে করে এমন এক সময় আসবে, বেশীরভাগ কৃষক বিভিন্ন ফসলের আবাদী জমিতে মিষ্টি কুমড়া আবাদে মনোনিবেশ করবে বলে তিনি জানান।
ভোলাহাট উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোঃ সুলতান আলীর কাছে জানতে গেলে তিনি বলেন, কৃষি মাতৃকদেশ আমাদের বাংলাদেশ। তাই মিষ্টি কুমড়া চাষাবাদের মৌসূমে আবহাওয়া আমাদের অনুকুলে থাকলে আর সংশ্লিষ্ট কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার করে ও আমাদের পরামর্শ অনুযায়ী কৃষকগণ এই মিষ্টি কুমড়া আবাদ করলে তারা আরো লাভবান হবে বলে তিনি জানান।