শিরোনাম |
কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ইন্টারনেট–সেবা দিচ্ছে ইলন মাস্কের স্টারলিংক। বাংলাদেশে স্টারলিংকের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট–সেবা চালু নেই। তবে চালু করার কাজ চলছে। এরই মধ্যে রাজধানীর বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে স্টারলিংক রিসিভার প্রদর্শন করা হচ্ছে। সেই রিসিভার নিয়ে বেশ আগ্রহ তরুণ প্রজন্মের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে। বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে রায়ানস কম্পিউটারে স্টারলিংক দেখতে এসেছেন ফ্রিল্যান্সার হাসিবুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই স্টারলিংকের কথা জানি। দেশে কবে আসবে, সেই অপেক্ষায় আছি। চোখে দেখতে এসেছি।’ আগারগাঁওয়ের বিসিএস কম্পিউটার সিটিতে চলমান মেলা উপলক্ষে রায়ানস কম্পিউটার এই পণ্য এনেছে। ১১ নভেম্বর শুরু হওয়া এই মেলা চলবে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত।
স্টারলিংক বিশ্বের প্রথম ও বৃহত্তম কৃত্রিম উপগ্রহনির্ভর নক্ষত্রমণ্ডল। এই নেটওয়ার্ক স্ট্রিমিং, অনলাইন গেমিং, ভিডিও কলসহ নানা কাজের জন্য ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সরবরাহ করে। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে অবস্থিত বিভিন্ন স্যাটেলাইটের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে স্টারলিংক। স্টারলিংক স্যাটেলাইট স্পেসএক্সের মহাকাশযানে করে পাঠানো হয়। স্টারলিংক সারা বিশ্বের ব্যবহারকারীদের কাছে উচ্চগতির ইন্টারনেট সরবরাহ করে। রায়ানস কম্পিউটারের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী মোস্তফা জামান বলেন, ‘প্রদর্শনের জন্য যন্ত্রটি রাখা হয়েছে। বাংলাদেশে এখনো স্টারলিংক ব্যবহার বা কেনার সুযোগ নেই। এটি দেখতে তরুণেরা আমাদের দোকানে আসছেন। আমরা আশা করছি দ্রুত বাংলাদেশে স্টারলিংক সেবা চালু হবে।’
স্টারলিংক যন্ত্রের (স্ট্যান্ডার্ড কিট) এককালীন দাম পড়বে ৩৪৯ মার্কিন ডলার। আর প্রতি মাসে গ্রাহক ফি হিসেবে দিতে হবে ১২০ ডলার। এই প্যাকেজ থেকে প্রতি সেকেন্ডে ২৫-১০০ মেগাবিট ইন্টারনেট গতি মেলে। স্টারলিংকের স্যাটেলাইটের ভর অন্য সব স্যাটেলাইটের চেয়ে বেশ কম। স্টারলিংকের নেভিগেশন সেন্সর প্রতিটি উপগ্রহের অবস্থান ও উচ্চতা বিবেচনা করে ব্রডব্যান্ড সেবা দেয়। অপটিক্যাল স্পেস লেজার ব্যবহার করে স্টারলিংক। প্রতিটি স্টারলিংক স্যাটেলাইটে তিনটি স্পেস লেজার (অপটিক্যাল ইন্টারস্যাটেলাইট লিংক বা আইএসএলএস) রয়েছে। এই লেজারের মাধ্যমে ২০০ গিগাবিট পর্যন্ত ডেটা পাঠানোর কাজ করে। স্টারলিংক গ্রাহকদের বেশি ব্যান্ডউইডথের সংযোগ দেওয়ার জন্য স্যাটেলাইটে পাঁচটি উন্নত কু-ব্যান্ড ফেজড অ্যারে অ্যান্টেনা ও তিনটি ডুয়াল-ব্যান্ড (কা-ব্যান্ড ও ই-ব্যান্ড) অ্যান্টেনা ব্যবহার করে।
বেশির ভাগ স্যাটেলাইটের ইন্টারনেট–সেবা একক জিওস্টেশনারি স্যাটেলাইট থেকে আসে। যা ৩৫ হাজার ৭৮৬ কিলোমিটার ওপর থেকে গ্রহকে প্রদক্ষিণ করে। ব্যবহারকারী ও স্যাটেলাইটের মধ্যে ডেটা টাইম অনেক বেশি হয়, একে লেটেন্সি বলে। এতে ইন্টারনেট–সেবা পাওয়া কঠিন হয়। অন্যদিকে স্টারলিংক হাজার হাজার উপগ্রহের একটি নক্ষত্রমণ্ডল তৈরি করছে, যা পৃথিবীর অনেক কাছাকাছি প্রায় ৫৫০ কিলোমিটার দূর থেকে প্রদক্ষিণ করছে। নিম্ন কক্ষপথে থাকার কারণে লেটেন্সি উল্লেখযোগ্য হারে কম। এতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট–সেবা পাওয়া যায়।
স্টারলিংকের একটি প্যাকেটে স্টারলিংক রিসিভার, কিকস্ট্যান্ড, রাউটার, তার ও পাওয়ার সাপ্লাই থাকে। স্টারলিংকের অ্যান্টেনা ইলেকট্রনিক ফেজড অ্যারে, যা ১১০ ডিগ্রি পর্যন্ত বাঁকানো যায়। এর ওজন প্রায় ২ কেজি ৯০০ গ্রাম, কিকস্ট্যান্ডসহ ৩ কেজি ২০০ গ্রাম। এতে আছে এনভায়রনমেন্টাল রেটিং আইপি৬৭ টাইপ ৪ অ্যান্টেনা, যা হিমাঙ্কের নিচে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং হিমাঙ্কের ওপরে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশ কাজ করে। স্টারলিংক চালাতে শক্তি খরচ হয় ৭৫ থেকে ১০০ ওয়াট। স্টারলিংক ওয়াই–ফাই রাউটারের সঙ্গে ২৩৫টি যন্ত্র যুক্ত করার সুযোগ আছে।