gramerkagoj
সোমবার ● ২ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
রিনির ডায়েরি হ য ব র ল
প্রকাশ : শুক্রবার, ৮ নভেম্বর , ২০২৪, ০৮:৫৯:০০ পিএম
মাহমুদা রিনি:
GK_2024-11-08_672e278c4f4e8.jpg

চেয়ে থাকি জনারণ্যে। পৃথিবীর এত আয়োজন, এত সৃষ্টি, এত সৌন্দর্য, এত বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি, আর সেখানকার একছত্র অধিপতি মানুষ। প্রভুত্বে, দখলদারিত্বে, বুদ্ধিমত্তায় তারা সৃষ্টির সেরা। মানুষ ছাড়া আর যত প্রাণী, জীববৈচিত্র্য আছে পৃথিবীতে তাদের জীবন চক্র একটা নির্দিষ্ট নিয়মে চলে অথবা মানুষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। শুধুমাত্র মানুষের জ্ঞান-বুদ্ধি, চাহিদার সাথে প্রয়োজন অপরিসীম।
মানুষের জন্য প্রকৃতি সম্পদের যে বিপুল ভাণ্ডার উন্মোচন করে রেখেছে সেই সাথে মানবসৃষ্ট প্রযুক্তির ব্যবহার মানুষকে যে উৎকর্ষতায় পৌঁছে দিয়েছে সেখানে সবাই সততা এবং পরিকল্পিত জীবন যাপন করলে কোথাও সংকট থাকার কথা নয়। অভাব থাকার কথা নয়। অথচ আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এতটাই লোভ,ঈর্ষায় পরিপূর্ণ যে নিজেদের সৃষ্ট বেড়াজালে নিজেরাই হাসফাঁস করে। জীবনের ভালো দিকগুলো আড়ালে রেখে খারাপ দিকের সমালোচনা আর হাহুতাশ করতেই সময় চলে যায়। নিজের স্বার্থের বাইরে সমষ্টিগত শান্তির চিন্তা করতে আমরা ভুলে গেছি।
চারপাশের অসংগতি, মানবিক, সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে লেখার চেষ্টা করেছি সবসময় কিন্তু এখন যেন অতীত বর্তমান মিলেমিশে চারদিকে এক গোলকধাঁধা সৃষ্টি হয়েছে। সবকিছু কেমন ধোঁয়াশা মনে হয়। কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যা, কোনটা গুজব বুঝতে পারা যায় না। কী বলা উচিত, কী লেখা উচিত, কী উচিত নয় সর্বোপরি ন্যায়- অন্যায় বোধটাও কেমন গুলিয়ে গেছে। নির্বাক দৃষ্টি নিয়ে যেদিকে তাকাই পরিবেশের বিকটদর্শন প্রতিচ্ছবিই চোখে পড়ে।
জীবনের প্রয়োজনে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা মানুষের মৌলিক চাহিদা যা বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। প্রয়োজনের সাথে মানুষের সাধ্যের সমন্বয় থাকা জরুরি। কিন্তু দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিতে তার সবগুলো প্রয়োজন সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। শুধু খাদ্যের কথাই যদি বলি-- পুষ্টিগুণ বজায় রেখে খাবারের মান ঠিক রাখতে যা যা প্রয়োজন তা কেনার সামর্থ্য অনেকেরই নেই। যার ফলে অপুষ্টিজনিত রোগের শিকার মানুষ মানসিক ভাবেও অস্থিতিশীল। দেখা যায় কোনো মানুষই এখন পুরোপুরি সুস্থ নয়। ফলমূল, মাছ-মাংস, সব্জি- তরকারি সহ নিত্য প্রয়োজনীয় কোনো কিছুর দাম সাধ্যের মধ্যে নাই। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় যা সহজলভ্য হওয়া উচিত। সুস্থ শরীরের জন্য সবরকম উপাদান প্রয়োজন যা সঠিক খাদ্যের মাধ্যমে পূরণ হয়। পুষ্টি ঘাটতির কারণে মানুষ বিভিন্ন রোগ এবং ঔষধ নির্ভর হয়ে পড়ছে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় এ্যাসিডিটি সহ বিভিন্ন রকম ব্যথাজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব অতিমাত্রায় বেড়েছে। এন্টাসিড, পেইনকিলার, প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ প্রতিদিন সেবন করছেন না এমন কেউ নেই। অথচ এসকল উপসর্গের সবই প্রায় খাদ্যঘাটতি জনিত। মানুষকে খাবার না কিনলেও ঔষধ ঠিকই কিনতে হচ্ছে। অথচ আমাদের দেশের মাটি উর্বর। উৎপাদন, আমদানিও কম না। সুষ্ঠু বন্টন এবং মধ্য মধ্যসত্বভোগীদের দৌরাত্মে সাধারণ ক্রেতাদের বেশি দামে কিনতে হয়। বাজারদর মানুষের সাধ্যের মধ্যে না থাকলে স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটা অবশ্যম্ভাবী, যা চোরাস্রোতের মতো বহমান।
মানুষ বরাবরই একটু স্বস্তি চায়। বেশি কিছু নয় 'শান্তি না হোক স্বস্তি ভালো' এটা গুণীজনের কথা। দুর্দমনীয় দস্যুতা, দুর্নীতির বিপরীতে খানিকটা স্বস্তির আশায় মানুষ হাত তুলেছে বার বার। যারা সাধারণ মানুষ, রাজনীতি, অর্থনীতি, সিণ্ডিকেট বোঝে না, সৎ উপার্জনে খেয়ে পরে সন্তান সন্ততি নিয়ে স্বস্তিতে বাঁচতে চায়, স্বাভাবিক মৃত্যুর নিশ্চয়তা চায় তাদের এই চাওয়াটুকুর আবেদন উপলব্ধি করা একটি রাষ্ট্রের প্রধান চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে মানুষের চাওয়াগুলোও কেমন বদলে যাচ্ছে।
বড়ো অদ্ভুত এ সময়। দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় ঊর্ধগতি যেমন খাদ্য ও স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে তেমনি শিক্ষা ব্যবস্থারও অশনি সংকেত মানুষকে ভাবিয়ে তোলে, ওটা যদিও বুদ্ধিজীবী মহলের চিন্তা ভাবনার বিষয়। তবুও খালি চোখে দেখি-- আগামীর পথে আলো দেখাবে যারা তাদের চিন্তা ভাবনায় কী অদ্ভুত পরিবর্তন। তারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে পাস করার বাসনা ছেড়ে অটো পাসের জন্য আন্দোলন করে। তারা জেনে গেছে পড়াশোনা না করেও পাস করা যায়। ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয় একটি জাতির প্রধান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হওয়া উচিত তার আগামী প্রজন্মকে শক্তিশালী নাগরিক হিসেবে তৈরি করা। পেশিবহুল শক্তি নয় শিক্ষা দীক্ষায়, জ্ঞান- বুদ্ধিতে উন্নত মানসিকতা ও বোধসম্পন্ন মানুষ তৈরি করতে পারলে বর্তমান বিশ্বের সাথে তারা প্রতিযোগিতায় টিকে থাকবে ও দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে।
অনেক বিষয় নিয়েই আমরা এখন আর মাথা ঘামায় না। গাসওয়া হয়ে গেছে। যেমন সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু এখন জলভাত। যেখানে শুধু নিয়ম মানলেই জীবন বাঁচে অথচ আমরা সাবলীলতায় তা ভেঙে চলেছি। নিত্য নৈমিত্তিক মৃত্যুও মেনে নিয়েছি। মানুষের মৌলিক চাহিদার এমন অসংখ্য বিষয় আমাদের দৃষ্টিকে ঘোরলাগা গোলকধাঁধায় ফেলে দেয়।
সব ভালো যার শেষ ভালো। জনসংখ্যার ঘনত্বে বাংলাদেশ পৃথিবীর প্রথম স্থানে থাকায় এই বিপুল জনসংখ্যাকে শক্তিতে পরিণত করতে না পারলে তা একসময় মহাবিপর্যয়ের কারণ হবে সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। এদেশের মানুষের চাওয়া অতি সামান্য কিন্তু অপরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা সেই চাওয়াকে বিকৃত, মানবিক বোধশূন্য করে তুলেছে। আশাবাদী এদেশের মানুষ এখনো স্বপ্ন দেখে সুন্দর, সমৃদ্ধ ও মানবিক একটি সমাজব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝