gramerkagoj
শনিবার ● ১৭ মে ২০২৫ ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
gramerkagoj
ওজনে কম দেওয়া ভয়াবহ পরিণতি
প্রকাশ : শুক্রবার, ৮ নভেম্বর , ২০২৪, ০৪:০৩:০০ পিএম
:
GK_2024-11-08_672ddfabeb77f.jpg

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে প্রতারণা ও প্রতারক, উভয়ের ব্যাপারে কঠোর নিন্দা জ্ঞাপন করেছেন এবং তাদের জন্য অবধারিত ধ্বংসের ঘোষণা দিয়েছেন।
কোনো মানুষই পাপ করে তার প্রায়শ্চিত্ত না করে রেহাই পাবে না। পাপ করলে তার শাস্তি অবশ্যই ভোগ করতে হবে। অধিকাংশ পাপের শাস্তি হবে পরকালে। তবে কিছু পাপের শাস্তি দুনিয়াতেও ভোগ করতে হবে। দুনিয়ায় শাস্তি এলে কেবল পাপীর ওপরে আসে না; অনেক সময় তার পুরো সমাজ বা রাষ্ট্রের ওপর চলে আসে সেই শাস্তি।
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কোনো জাতির মধ্যে আত্মসাৎ বৃদ্ধি পেলে সে জাতির লোকদের অন্তরে ভয়ের সঞ্চার করা হয়। কোনো জাতির মধ্যে ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়লে সেখানে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পায়। কোনো সম্প্রদায়ের লোকেরা পরিমাপ ও ওজনে কম দিলে তাদের রিজিক সংকুচিত করা হয়। কোনো জাতির লোকেরা অন্যায়ভাবে বিচার-ফয়সালা করলে তাদের মধ্যে রক্তপাত বিস্তৃতি লাভ করে। কোনো জাতি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করলে আল্লাহ তাদের ওপর শত্রুদল চাপিয়ে দেন’ (মুয়াত্তা মালেক : ১৩২৩)। হাদিস থেকে বুঝে আসে এসব বিষয়ের শাস্তির অংশ মানুষ পার্থিব জীবনেও ভোগ করবে। আর শাস্তি ধরন নানা রকম হয়ে থাকে। কারও অসুস্থতার মাধ্যমে, কাউকে অসহায়ত্বের মাধ্যমে, কারও আবার ঈমান হরণের মাধ্যমে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়।
দুনিয়ায় এমন কিছু অপরাধ এমন রয়েছে- যা আল্লাহতায়ালার ক্রোধকে ত্বরান্বিত করে। এর একটি হলো- ওজনে কম দেওয়া। পরিমাপ এবং ওজনে কম দেওয়া কবিরা গোনাহ।
এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যারা মাপে কম করে তাদের জন্যে দুর্ভোগ, যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয় তখন পূর্ণমাত্রায় নেয়, এবং যখন লোকদের মেপে দেয় কিংবা ওজন করে দেয়, তখন কম করে দেয়; তারা কি চিন্তা করে না তারা পুনরুত্থিত হবে- সেই মহাদিবসে।’ -সূরা মুতাফফিফিন: ১-৫।
কোরআনে কারিমে ইরশাদ হয়েছে, ‘মেপে দেওয়ার সময় পূর্ণ মাপে দেবে এবং সঠিক দাঁড়িপাল্লায় ওজন করবে। এটা উত্তম, এর পরিণাম শুভ।’ -সূরা বনি ইসরাঈল: ৩৫।
সুরা মুতাফফিফীন‌ কোরআনের ৮৩তম সুরা, এর আয়াত সংখ্যা ৩৬টি। সুরা মুতাফফিফীন‌ মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। ‘মুতাফফিফীন’ শব্দটি ‘মুতাফফিফ’ শব্দের বহুবচন, অর্থ ওজনে কম দেয় এমন ব্যক্তি। ওজনে কম দেয় এমন ব্যক্তিদের শাস্তির ঘোষণা দিয়ে শুরু হয়েছে সুরাটি। সুরাটিতে আরও আলোচিত হয়েছে, কেয়ামতের দিনের ভয়াবহতা, নেক ও বদ আমলকারীদের আখেরাতের ঠিকানা, মুমিনদের আখেরাতের বিভিন্ন নেয়ামত, কাফেরদের শাস্তি ইত্যাদি।
সুরা মুতাফফিফীনের ১-৬ আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
(১)
ওয়াইলুল লিলমুতাফফিফীন।
দুর্ভোগ তাদের জন্যে যারা মাপে কম দেয়,
(২)
আল্লাযীনা ইয়াকতা-লূ‘আলান্না-ছি ইয়াছতাওফূন।
যারা লোকের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পূর্ণ মাত্রায় নেয়
(৩)
ওয়া ইযা কালূহুম আও ওয়াঝানূহুম ইউখসিরূন।
এবং যখন লোকদেরকে মেপে বা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়।
(৪)
আলা ইয়াজুননু উলাইকা আন্নাহুম মাবউসূন।
তারা কি চিন্তা করে না যে, তারা পুনরুত্থিত হবে।
(৫)
লিয়াওমিন আজীম।
সেই মহাদিবসে,
(৬)
ইয়াওমা ইয়াকূমুন-নাসু লিরাব্বিল আলামীন।
যেদিন মানুষ দাঁড়াবে জগতসমূহের রবের সামনে।
এ আয়াতগুলো থেকে যে শিক্ষা ও নির্দেশনা আমরা পাই
১. বেচেকেনার ক্ষেত্রে ওজনে কম দেওয়া হারাম। মূল্য গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে বেশি মূল্য নেওয়াও হারাম। ইচ্ছাকৃত এ রকম কম-বেশি করা তা যে পরিমাণই হক, যতো কমই হোক অত্যন্ত গর্হিত পাপ।
২. পরকাল, হিসাব ও প্রতিদানে বিশ্বাস মুসলমানদের মৌলিক ও গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বাস, পরকালে অবিশ্বাসী হয়ে কেউ মুমিন হতে পারে না। পরকালের বিশ্বাস দৃঢ়ভাবে অন্তরে ধারণ করা আমাদের কর্তব্য।
৩. কেয়ামতের দিন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভয়াবহ এক দিন। সেদিন মানুষ বিশ্বজগতের রব আল্লাহর সুবাহানাহু ওয়াতাআলার সামনে দাঁড়াবে এবং তিনি প্রত্যেকের জন্য তার ভালো ও মন্দ কাজের প্রতিদানের ফয়সালা করবেন।

আরও খবর

🔝