শিরোনাম |
সাদা আর সবুজ রঙের পাঁপড়ির আবরণে বেষ্টিত ফুল। বছরের অন্য সময়ে দেখা না মিললেও বর্ষা মৌসুম জুড়ে সারাদেশে গ্রামাঞ্চলের খাল-বিল ভরে থাকে। আর সে ফুল যেমন দেখা যায় গ্রামাঞ্চলে, তেমনি তার দেখা মেলে শহুরে লেক, পুকুরসহ বিভিন্ন জলাশয়ে। দৃষ্টিনন্দন সে ফুল শাপলা। শহর কিংবা গ্রাম-সবখানেই সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ শাপলার টানে ছুটে যায় এর কাছে। অপার সৌন্দর্যে যেমন, খাবার হিসেবে তেমন-কোনটিতে পিছিয়ে নেই জাতীয় ফুল শাপলা। সবজি হিসেবে বিপুল চাহিদার কারণে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে সারাদেশের বাজারে শাপলার বেচাকেনা চলে হরদম। বর্তমানে যশোরের বাজারেও শাপলার দেখা মিলছে, ভালো বেচাকেনাও চলছে।
আষাড়, শ্রাবণ ও ভাদ্র-এ তিন মাস মৌসুম থাকায় এসময় খাল বিল ভরে থাকে শাপলায়। বর্ষাকালে বিল ও ফসলী জমি তলিয়ে থাকার কারণে গ্রামীণ জনপদে প্রচুর পরিমাণে শাপলা জন্মে। শহরের বিভিন্ন লেক কিংবা খালেও এসময় শাপলার দেখা মেলে। কৃত্রিমভাবে চাষের পদ্ধতি আবিষ্কার না হওয়ায় শাপলা এখন পর্যন্ত শুধুমাত্র বর্ষাকালেই দেখা যায়। শুধুু ফুল নয়, খেতে সুস্বাদু হওয়ায় সবজি হিসেবেও শাপলার বিপুল চাহিদা রয়েছে। তাই শাপলা শুধু সৌন্দর্যের মাধ্যমে মনের খোরাক যোগাচ্ছে না, এটি বিক্রি করে আয় রোজগারের পথও তৈরি হয়েছে। আর্থিক সংকট কাটাতে বর্ষাকালে গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র পরিবারগুলো শাপলা বিক্রি করে। কোনো রকম পুঁজির প্রয়োজন হয় না বলে বর্ষা মৌসুমে অনায়াসে শাপলার ব্যবসা করে দরিদ্র পরিবারগুলো জীবিকা নির্বাহ করছে ও সংসারের চাকা সচল রাখছে। গ্রামীণ জনপদের মানুষ ছোট ছোট নৌকা, ডিঙি নৌকা ও সাঁতার কেটে শাপলা সংগ্রহ করেন। যশোর শহরের বড়বাজারের বরফকলে সবজির দোকান ও ভ্যানে বিক্রি হচ্ছে শাপলা। একেকটি আঁটিতে মোট ১০টি থেকে ২০টি করে শাপলা পাওয়া যাচ্ছে। দাম রাখা হচ্ছে দশ থেকে ৪০ টাকা।
বারান্দিপাড়া এলাকার আবুল কালাম বলেন, পরিবারের সদস্যরা খেতে খুব পছন্দ করেন, তাই এ মৌসুমে ঘন ঘন শাপলা কিনি। মোল্লাপাড়ার সুমাইয়া আক্তার বলেন, বাজারে আসলে শাপলা কেনা চাই। বর্ষার মৌসুম জুড়ে শাপলা কিনি। ইলিশ মাছ দিয়ে শাপলা খুব জমে, খেতে খুব ভালোলাগে। খড়কি এলাকার আরমান পারভেজ বলেন, আজকাল বাজারে সারা বছরই প্রায় সব রকম সবজি পাওয়া যায়। তাই একই রকম সবজি খেতে খেতে রুচির বদল করি। বর্ষার দুই মাস বাজারে আসলেই শাপলা কিনি।
বড়বাজারের শাপলা বিক্রেতা সাগরিকা বেগম বলেন, ‘২০ বছর ধরে শাক সবজি ও শাপলা বিক্রি করছি। বর্ষার মৌসুমে শাপলা বেশি আনি, এসময় এর বেচাবিক্রি বেশি হয়। ভাগ্য ভালো থাকলে কোন কোন দিন দেড় থেকে দুই হাজার টাকারও বিক্রি করি’।
বিক্রেতা শেফালী বেগম বলেন, লোকে ইলিশ মাছের সাথে শাপলা পছন্দ করে বেশি। শাপলার বিক্রি ভালো হচ্ছে, তবে বর্তমানে বাজারে ইলিশ মাছের বিক্রি বন্ধ রয়েছে। বিক্রেতা রাকিব হোসেন বলেন, ভ্যান চালিয়ে সংসার চলে। তবে এ সিজনে গ্রাম থেকে প্রতিদিন পাঁচশ থেকে আটশ’ পিস শাপলা আনি। ভ্যানে করে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিদিন শাপলা বিক্রি করি। প্রতিদিন সাতশ’ আটশ’ বা এক হাজার টাকার বিক্রি হয়।