শিরোনাম |
প্রতিদিন গণমাধ্যমে চোখ রাখলেই হরহামেশাই মৃত্যুর সংবাদ ভেসে আসে আমাদের সামনে, সংবাদপত্রের সিংহভাগ মৃত্যুই সড়ক দুর্ঘটনা জনিত কারণ। কর্মব্যস্ততার ফ্রেমে আমরা সবাই কমবেশি আবদ্ধ, ঘরের মধ্যে বন্ধি থাকা আমাদের কাজ না। জীবনের প্রয়োজনে ছুটতে হয় আমাদের প্রতিমূহুর্তে আর চলতে গেলে ব্যবহার করতে হয় সড়ক। আর এই সড়ককে আমরাই করেছি বিষাদে ভরা এক অনিরাপদ দানবে। অথচ সড়ক হওয়ার কথা ছিল সবচেয়ে নিরাপদ ও চলাচল বান্ধব। সড়ক শৃঙ্খলাকে আমরা চোখ রাঙানি দিয়ে তা ভেঙ্গে চুরমার করছি তাই সড়কে থাকছে না কোন কার্যকর শৃঙ্খলা, আর ঘটছে অবর্ণনীয় মারাত্মক সব সড়ক দুর্ঘটনা।
এগিয়ে যাওয়া পৃথিবীতে আমরা যেন এক পিছিয়ে পড়া জাতি, আধুনিক পৃথিবীতে আমাদের দেশে এখনও মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি নেই, ঘর থেকে বের হয়ে জীবনটাকে নিজের হাতের মুঠোই নিয়ে এক আতঙ্কিত পরিস্থিতির মধ্যে চলতে হয় প্রতিনিয়ত। বাসগৃহ থেকে বের হলে আর স্বাভাবিকভাবে পরিবার-পরিজনের কাছে ফিরে আসতে পারবো সেটার কোন ন্যুনতম গ্যারান্টি নেই। কি অদ্ভুত মৃত্যু ঝুঁকির মধ্যে আমাদের চলতে হয়। এভাবে চলতে থাকলে একদিন সড়কে মৃত্যুর মিছিল দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে, এই মৃত্যুর রশি আমাদের টেনে ধরার কোন প্রকার শক্তি থাকবে না।
শুধু চালক শৃঙ্খলা মেনে চললে সড়ক নিরাপদ হয়ে যাবে এমনটি নয়, আমরা যারা সড়কে চলাচল করি সকলেরই দায়িত্ব সড়ক শৃংখলা মেনে চলা এবং সড়ককে মানুষবান্ধব করে গড়ে তোলা। প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে রাজধানী, মহানগর, জেলা-উপজেলা শহর শুধু নয় এখন অজপাড়া পল্লীর বুক চিরে যে পাঁকা সড়কগুলো বয়ে চলেছে তাও এখন দখলের হাত থেকে বাঁচতে পারছে না। সরাসরি যেন সড়কের গলায় পা দিয়ে দখল করে আছে স্থানীয় অসচেতন ব্যক্তিরা। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের প্রত্যেকটি সড়ক আমাদের এবং তা অতি নিরাপদ রাখাও আমাদের নাগরিক দায়িত্ব।
সড়ক দুর্ঘটনা হচ্ছে নীরব ঘাতক, একটি পরিবারের প্রধান উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি সড়ক দুর্ঘটনায় পতিত হলে সেই পরিবারে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুর্বিসহ জীবন, যা পর্দার আড়ালে থেকে যায়, প্রকাশ্যে আসে না। এমন জলন্ত উদহারণ হাজারও পরিবারে আছে যা আমরা জানি না। সড়কে আহত হওয়া ব্যক্তিদের এক কঠিন মানবতার জীবন যাপন করতে হয়। এমনকি আত্মসম্মান বলি দিয়ে উপর্জনের জন্য রাস্তায় নামতে হয় অর্থ সহায়তা পাওয়ার জন্য, এটা নাগরিক হিসেবে আমাদের জন্য নিদারুন কষ্টের বিষয়।
সড়ক দুর্ঘটনা স্বাভাবিক কিছু নয় এটা মহামারী ও ক্যান্সারের থেকে ভয়াবহ এক ব্যাধির নাম। বাংলাদেশকে গ্রাস করেছে এই সড়ক দুর্ঘটনা নামক দানব। পৃথিবীতে সড়ক দুর্ঘটনা কবলিত দেশের তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম দেশ হিসেবে তালিকাভূক্ত, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত দু:খের। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে গুরুত্বের সাথে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের কাজ করতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনামুক্ত দেশের সিস্টেমকে ফলো করতে হবে।
সাধারণত যে সমস্যা গুলোর কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে থাকে: হেলপার ও দক্ষহীন চালক, অপরিপূর্ণ যানবাহন, পণ্যবহনকারী গাড়ীতে যাত্রী উঠানো, চাহিদা মোতাবেক পরিবহণ ব্যবস্থা না থাকা, ট্রাফিক আইন অমান্য করা, বিপরীত পথে গাড়ী চলাচল, গতির প্রতিযোগিতা, যত্রযত্র গাড়ী দাঁঢ় করিয়ে যাত্রী উঠা-নামা, অসুস্থ শরীরে গাড়ী চালানো, নেশা গ্রহণ করে গাড়ী চালানো, চলন্ত অবস্থায় ফোনে চালকের কথা বলা, প্রচন্ড বাঁক, ত্রুটিপূর্ণ সড়ক, ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থায় ধীর গতি, পথচারীদের অসচেতনভাবে চলাচল, রাস্তা দখল করে স্থাপনা, চালকের বিশ্রামের ব্যবস্থা না থাকা, অভার লোড, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব।
সড়ক দুর্ঘটনা রোধ এখন সময়ের দাবি না শুধু এটা আমাদের দায়িত্ব। চালক ও পথচারী আমরা সকলে মিলে হাত হাত রেখে দায়িত্বশীল ভূমিকা, অভ্যাস ও সচেতনতার পরিচয় দিলে সড়ক দুর্ঘটনা দিন দিন হ্রাস পাবে। জোরালোভাবে একটা বিষয় সবাইকে মনে রাখতে হবে সময়ের মূল্য দিতে গিয়ে জীবনের মূল্য তুচ্ছহীন করে তোলা যাবে না। আসুন সকলের জায়গা থেকে আমরা আওয়াজ তুলি “সড়কে আর কোন মৃত্যু বা দুর্ঘটনা নয়, মুক্তি হবে সকলের সচেতনতাই”।
লেখক: এস.এম. হাফিজুর রহমান
সদস্য সচিব, নিরাপদ সড়ক চাই
মণিরামপুর উপজেলা ও সদস্য, নিসচা, জাতীয় কমিটি।