শিরোনাম |
❒ যশোরে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আরো ১০ হাজার মানুষ
❒ ১৫ অক্টোবর-১৪ নভেম্বর পর্যন্ত আবেদন
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে নতুন করে আরো ১০ হাজার প্রতিবন্ধীকে মাসিক ভাতার আওতায় আনা হচ্ছে। আর সারা দেশে নতুন করে ৩ লাখ ৩৪ হাজার মানুষকে নতুন করে যুক্ত করা হচ্ছে এ সুবিধার আওতায়। এনিয়ে দেশে ৩২ লাখ ৩৪ হাজার জন সুবিধার আওতায় আসছে।
এর আগে গত বছর এক দফা বাড়িয়ে যশোর জেলায় ৬০ হাজার ৫শ’৪৭ জনকে ভাতার আওতায় আনা হয়। এবার চলমান অক্টোবর অনলাইনে আবেদন চাওয়া হয়েছে। যশোরে এবার নতুন করে ১০ হাজার জনকে সুবিধার আওতায় আনা হচ্ছে। আর এবার আবেদন করলেই কার্যকর হবে।
সংখ্যা বৃদ্ধি করায় যশোর জেলায় সুবিধাভোগীর বাইরে কোনো প্রতিবন্ধী বাদ থাকবে না বলেও আশা প্রকাশ করছেন সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, প্রতিবন্ধী সুরক্ষা আইন আরো জোরদার করা হচ্ছে, নির্বাচিতরা জুলাই থেকে ভাতা পাবেন। যশোরে সুবিধভোগী প্রতিবন্ধী সংখ্যা দাঁড়াবে ৭০ হাজার ৫শ’৪৭ জনে। এর মধ্যে যশোর সদর উপজেলায় প্রায় ২ হাজার প্রতিবন্ধী নতুন করে এই সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আসবে বলেও জানিয়েছেন যশোর সদর উপেজলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আশিকুজ্জমান তুহিন।
তথ্য মিলেছে, যশোর জেলায় নিয়মিত ৪৯ হাজার ৪শ’৬২ জন প্রতিবন্ধী ভাতাভোগীর সাথে গত ২৩ -২৪ অর্থ বছরে আরো ১১ হাজার ৮৫ জনকে সংযুক্ত করে ভাতা দেয়ার লক্ষে নতুন বরাদ্দ দেয়া হয়। গেল বছর অতিরিক্ত ১১ হাজার ৮৫ জন প্রতিবন্ধীকে ভাতার আওতায় আনা হয়। ওই বছর যশোরের বিভিন্ন দরিদ্র পরিবারের ১৩ হাজার প্রতিবন্ধী সরকারের কাছে মাসিক আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন। সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আসতে যশোর জেলার ৮ উপজেলা ও ৮ পৌরসভা থেকে সরকারি ভাতার জন্য লিখিত আবেদন করা হলেও বাদ পড়ে যান ২ হাজার ৫শ’৯৯ জন। আর এবার ২০২৪-২০২৫ অর্থ বছরে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তর দেশে আরো ৩ লাখ ৩৪ হাজার প্রতিবন্ধীকে ভাতার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়ে আবেদন আহবান করেছে। গত ৩ অক্টোবর সমাজসেবা অধিপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মোশারফ হোসেন সকল বিভাগীয় পরিচালককে এক স্বারকের মাধ্যমে এ কথা জানিয়েছেন। সেখান থেকে সকল জেলা ও উপজেলায় নতুন সংখ্যা বাস্তবায়নের জন্য জানানো হয়েছে।
সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় নির্দিষ্ট লিংকে অনলাইনে আবেদন করতে বলা হয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে এই আবেদন করা হয়। আর এবার অক্টোবরে এই আবেদন চাওয়া হয়েছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, যশোর জেলায় সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতায় এখন পর্যন্ত ২ লাখ ২০ হাজার ৭৮১ উপকারভোগী রয়েছেন। এসব সুবিধাভোগীর মধ্যে বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী কোটায় ভাতা পাচ্ছেন। ২ লাখ ২০ হাজার ৭৮১ উপকারভোগীর মধ্যে প্রতিবন্ধী শিক্ষাবৃত্তি পাচ্ছে ২০ হাজার ৩৬ জন। বয়স্ক ভাতা ভোগী ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৫ জন। বিধবা ভাতা ভোগী ৫৪ হাজার ৪৭১ জন। আর জেলায় প্রতিবন্ধী ভাতাভোগী এখন ৬০ হাজার ৫শ’৪৭ জন। আর এবার ১০ হাজার বাড়লে সুবিধাভোগী প্রতিবন্ধীর সংখ্যা দাঁড়াবে ৭০ হাজার ৫শ’৪৭ জন।
তথ্য মিলেছে, সরকার প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রদানে বদ্ধপরিকর হওয়ায় ২০০১ সালে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী কল্যাণ আইন ২০০১ প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তীতে এ আইনটি বাতিল করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ প্রবর্তন করা হয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সংরক্ষণ ও তাদের সুরক্ষা প্রদানের অনন্য দলিল।
তথ্য মিলেছে, সরকারি সার্ভে অনুযায়ী দেশে বিপুল সংখ্যক কর্মক্ষম নন এমন প্রতিবন্ধী মানুষের হিসেবে মেলে। প্রতিবন্ধী ভাতা কার্যক্রমে অধিকতর স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বমহলে প্রহণযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে শুরু হয় নতুন উদ্যোগ।
সামাজ সেবা অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, ভাতা কর্মসূচিতে উপকারভোগীর সংখ্যা ৩.৩৪ লাখ জন বৃদ্ধি করে ২৯ লক্ষ থেকে ৩২.৩৪ লাখ জনে উন্নীত করা হয়েছে ও জনপ্রতি মাসিক ভাতার হার ৮৫০ টাকা অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী ভাতা পাওয়ার উপযুক্ত ব্যক্তির কাছ থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ডাটবেইজ-এ সংরক্ষিত তথ্য যাচাইপূর্বক শুধুমাত্র অনলাইনে আবেদন গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে ভাতার আবেদন গ্রহণ করা হবে।
এ ব্যাপারে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সামাজিক নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক মোশাররফ হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিবন্ধী ভাতার ক্ষেত্রে অবশ্যই সুবর্ণ নাগরিক কার্ড থাকতে হবে। আবেদনকারী অন্য কোনো সরকারি সুবিধা নিয়মিত পেয়ে থাকলে তিনি এই সুবিধার জন্য বিবেচিত হবেন না। অন্য কোনো সরকারি সুবিধা নিয়মিত গ্রহণ করছে প্রমাণিত হলে আবেদন বাতিল করা হবে। অনলাইন আবেদনে নগদ অথবা বিকাশ ইউনিটের আওতাধীন আবেদনকারীদের অবশ্যই সক্রিয় নগদ অথবা বিকাশ হিসাব নম্বর (মোবাইল নাম্বার) দিতে হবে। এজেন্ট ব্যাকিং-এর আওতাধীন আবেদনকারীদের সাথে যোগাযোগের জন্য সক্রিয় মোবাইল নাম্বার দিতে হবে এবং চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত উপকারভোগীদের হিসাব পূর্বের মতই কেন্দ্রীয়ভাবে খোলা হবে। অনলাইনে প্রাপ্ত আবেদন পূর্বের অনলাইনে আবেদন তালিকার (অপেক্ষমান তালিকা যদি থাকে) ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন সাপেক্ষে প্রাপ্যতা অনুযায়ী বরাদ্দ প্রদান করা হবে। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত উপকারভোগীগণ ১ জুলাই ২০২৪ থেকে ভাতা প্রাপ্ত হবেন।
এ ব্যাপারে যশোর সদর উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা আশিকুজ্জামান তুহিন জানিয়েছেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি প্রদত্ত সাংবিধানিক ও আইনগত প্রতিশ্রুতি যত্নের সাথে পূরণ করা হচ্ছে। তাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করা হচ্ছে। দুঃস্থ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার কর্মযজ্ঞ চলছে। আবেদন বাছাইকালে আবেদনকারীর আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনায় বয়স্ক প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। তবে এবার আবেদন করলেই হয়তো সবাইকে ভাতার আওতায় আনা সম্ভব হবে।