শিরোনাম |
❒ ছোট বালিয়াডাঙ্গাসহ ১০ গ্রামবাসীর মানববন্ধন
খাল ভরাট হয়ে যাওয়া, অপরিকল্পিত ঘের তৈরি ও খালে একের পর এক অবৈধভাবে পাটা দেয়ার কারণে যশোরের নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ছয়টি মাঠ এখনও পানির নীচে থাকায় প্রতিকার দাবি করে মানববন্ধন করেছেন একাট্টা এলাকবাসী। ৬টি মাঠের এক হাজারেরও বেশি বিঘা জমি পানির নীচে থাকায় প্রায় ৪ কোটি টাকা ধান নষ্ট হয়েছে উল্লেখ করে তারা খাল পূণখননসহ পাটা ও অপরিকল্পিত ঘের উচ্ছেদের দাবি জানিয়েছেন।
মাঠের পর মাঠ ধান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় শঙ্কা ও উৎকণ্ঠার কথা জানান এলাকার ভুক্তভোগী সব কৃষক। কারো বাসাবাড়িতে এখনো পানি থাকায় জীবন-জীবিকাতেও পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। খাল খননের প্রতিশ্রুতি না দিলে কিংবা দ্রুত পাটা অপসারণ ও ঘের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে আরো কঠোর আন্দোলনে নামবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কৃষকেরা।
গত ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত টানা তিন দিনের প্রবল বর্ষণে যশোরের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ভোগান্তিতে পড়েন ভুক্তভোগী মানুষ। ওই তিন দিনে ভারী থেকে থেমে থেমে আরও একদিনের বৃষ্টিতে যশোর আবহাওয়া অফিস ৩২৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় খোদ যশোর শহর ও গ্রামাঞ্চলে। পানিতে তলিয়ে যায় মাঠের পর মাঠ। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে তত শহর থেকে পানি নেমে গেছে। কিন্তু, শহরতলী ও গ্রামাঞ্চলের মাঠঘাট থেকে এখনো পানি নিষ্কাশিত হয়নি। এভাবেই তলিয়ে আছে সদর উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ছয়টি মাঠের প্রায় এক হাজার বিঘার বেশি জমির ধান। এই ইউনিয়নের বড় বালিয়াডাঙ্গা, ছোটবালিয়াডাঙ্গা, তেলিকুড়ি, আড়পাড়া, কায়েতখালী, শালিয়াট মাঠের সহস্রাধিক বিঘা জমির ধান এখনো পানির নীচে। এছাড়া ১০ গ্রামের কৃষকেরা হয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত। সব মাঠের ধান গাছে পচে গেছে। ওই ছয়টি মাঠে কোনো ধান কৃষকের ঘরে উঠবে না বলেও জানিয়েছেন কৃষক। এছাড়া তালবাড়িয় মাঠের একাংশ এখনও পানিতে ডুবে আছে। ঘুরুলিয়া ব্রিজের পশ্চিম পাশ থেকে চিনেডাঙ্গা ও জয়রামপুর পর্যন্ত খালটি এখন প্রায় ভরাট। আর সংশ্লিষ্ট ওই খালকেন্দ্রিক কায়েতখালী, ঘুরুলিয়া, চিংয়েডাঙ্গা, তালবাড়িয়া ও ধানঘাটা ব্রিজ পর্যন্ত ইচ্ছেমত পাটা বসিয়ে মাছ চাষ করছেন স্থানীয়রা। ওই ঘেরের মাটি, পাড় ও খালে যত্রতত্র পাটার কারণে পানি নিস্কাশন হচ্ছেনা। যে কারণে ধানঘাটা ব্রিজ হয়ে জলেশ্বর বিলে পানি সরবরাহ হচ্ছে না বললেই চলে। এ কারণে বর্ষণের পানি কমছে না ওই এলাকার মাঠগুলোতে।
এ কারনে খাল খনন ও পাটা উচ্ছেদ দাবিতে ১ অক্টোবর সকাল ৬টা থেকে সকাল ১০ পর্যন্ত ছোট বালিয়াডাঙ্গায় মানব বন্ধন করেছেন কৃষকেরা।
এসময় কৃষকেরা জানান, সব মিলিয়ে এলাকার ১০ গ্রামের কৃষকের কমবেশি ধান পানিচে। এ হাজার বিঘা জমিতে কমপক্ষে ৩০ হাজান মন ধান হওয়া কথা। এক হাজার ৩শ’ থেকে ১ হাজার ৪শ’ টাকা মন দরে ওই ধানের দাম ৪ কোটি টাকার উপরে। এলাকার কৃষকেরা কমপক্ষে ৪ কোটি টাকার ক্ষতিতে পড়েছেন বলেও জানান তারা।
মানব বন্ধনে অংশ নেয়া কৃষক ইমামুল হাসান, ইকবাল হাসান, ইমরান হাসান, ডাবলু হাসান, তানজিজুর রহমান বকুল, জমুল হুদা মিঠু, নওয়াপড়া ইউনিয়ন বিএনপি মশিউর রহমান বাবলু, ৩ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি বিএনপি নেতা ফারুক হাসান, কৃষক জসিম, আবু সাহিদ মেম্বারসহ অনেকেই জানান, দ্রুত পাটা সরিয়ে দিতে হবে, এবং ইজারাকৃত ঘের উন্মুক্ত করে দিতে হবে। তাহলে পানি বের হওয়া সম্ভব। এছাড়া খালটি পূনখনন করলে স্থায়ীভাবে জলাবদ্ধতা রোধ করা যাবে।
এলাকার কৃষক আয়নাল হোসেন, আলতাফ হোসেনসহ অনেকে জানান, ছয়টি মাঠের এক হাজারেরও বেশি বিঘা ধান পানির নীচে। এবার ওই সব জমির ধান ঘরে উঠবে না। কায়েতখালী থেকে ঘুরুলিয়াগামী খালে অনেকগুলো পাটা রয়েছে। ব্যক্তি স্বার্থে পাটা দেয়ায় পানি নিস্কাশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যে কারণে পানি সরছে না। আর একদিকে ছয়টি মাঠ এবং বালিয়াডাঙ্গাসহ কয়েকটি গ্রামে এখনও পানি রয়েছে। সব মিলিয়ে চরম হতাশা আর উৎকণ্ঠায় সময় কাটছে এলাকার কৃষকদের। তাই খাল খননও জরুরি।