শিরোনাম |
❒ এবার চলছে সাপ্তাহিক গাঁজা সম্মেলন!
যশোরে প্রতি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বসছে গাঁজা সম্মেলন। এ সম্মেলনকে ঘিরে জমজমাট হয়ে উঠছে গোটা এলাকা। একইসাথে ঝাড়ফুঁক দিচ্ছেন এক ভন্ড কবিরাজ। আশ্চর্য হলেও সত্য, অবৈধ এ কার্যক্রম চলছে সদর উপজেলার বাগেরহাট বাজারের কবরস্থানের পাশের পুকুর পাড়ে।
স্থানীয়দের অভিযোগে জানা যায়, গত প্রায় ১৫ বছর যাবৎ চাঁচড়া ইউনিয়নের বাগেরহাট গ্রামের তেতুলিয়া মৌজায় পুকুর পাড়ের একটি বাগানে খালেক মোল্লা নামে এক ভন্ড কবিরাজ আস্তানা গড়ে তোলেন। এরপর থেকে তার অনুসারী বিপ্লবসহ আরো কতিপয় ব্যক্তির এখানে আনাগোনা শুরু হয়। খবর পেয়ে তার কাছে বাগেরহাট, তেঁতুলিয়া ও করিচিয়া গ্রামের অসুস্থ ব্যক্তিরা দাওয়া ও টোটকা নিতে শুরু করে। এ কাজের মাধ্যমে খালেকের এলাকায় পরিচিতি বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তিনি এ আস্তানায় গাঁজার আসর বসাতে শুরু করেন। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে খালেক মোল্লা তার অনুসারীদের নিয়ে পুকুর পাড়ে গাঁজা সেবন করতে থাকেন। এ আসরের কথা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়লে গাঁজা সেবনকারীদের যাতায়াত ওই পুকুরপাড়ে বাড়তে থাকে। পরবর্তীতে খালেক মোল্লা গাঁজা সেবনকারীদের প্রতিদিন তার আস্তানায় যেতে নিষেধ করেন।
তিনি জানিয়ে দেন, প্রতিদিন সন্ধ্যায় পুকুরপাড়ে যাতায়াত করলে এলাকাবাসীর নজরে পড়বে। এতে তার কবিরাজি চালাতে সমস্যা হবে। তার চাইতে সেখানে সপ্তাহে একদিন তারা সবাই মিলে বসে গাঁজা সেবন করবেন। প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তারা এ আস্তানায় একত্রিত হবেন বলে ঘোষণা দেন। এ অবস্থা কয়েকমাস চলার পর এটি স্থানীয়দের মাঝে সাপ্তাহিক গাঁজা সম্মেলন নামে পরিচিতি পায়। বাগেরহাট বাজারের কবরস্থান সংলগ্ন পুকুরপাড়ের এ গাঁজা সম্মেলন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয়ে চলে রাত ১১ টা পর্যন্ত। এ কাজে খালেকের সেকেন্ড ইন কমান্ড রয়েছেন আরেক কারবারি তেতুলিয়া গ্রামের বিপ্লব। তার বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলাসহ আরো ৭/৮টি মামলা রয়েছে। এছাড়া, তেতুলিয়ার আকরাম, হালিম, মহসিন, করিচিয়া গ্রামের ইমামুলসহ ২০/২৫ জন তার সহযোগী রয়েছেন। এদের মধ্যে ইমামুল সম্প্রতি এক কেজি গাঁজাসহ পুলিশের হাতে আটক হয়। পরে জামিন পেয়ে ফিরে এসে তিনি ফের গাঁজা বিক্রিতে যুক্ত হন।
স্থানীয়রা জানান, খালেক মোল্লা প্রতি শুক্রবার তার আস্তানায় জুম্মার নামাজের আয়োজন করে। এরআগে বেলা ১১টা থেকে তিনি রীতিমত সেজেগুজে আস্তানায় বসে ভন্ড কবিরাজি শুরু করেন। এসময় তার কাছে বিভিন্ন মানতকারীরা আসেন। তিনি তাদেরকে ঝাড়ফুঁক দিয়ে মানতের টাকাসহ হাঁস-মুরগি হাতিয়ে নেন। বছরের পর বছর ধরে বিনা বাঁধায় চলছে খালেক গংয়ের গাঁজার আখড়া ও কবিরাজি কারবার। এ কারণে গ্রামের উঠতি বয়সী যুবকসহ অনেকেই এই চক্রে জড়িয়ে পড়ছে। যা নিয়ে অভিভাবক মহল দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
এলাকাবাসী জানান, তেঁতুলিয়া গ্রামের এই ভন্ড কবিরাজ খালেক মোল্লা বিস্ফোরক ও মাদক মামলার আসামি। পুকুরপাড়ের এই আখড়া বর্তমানে গ্রামবাসীর চরম দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তার অপকর্মের প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। এ কারণে গ্রামবাসী গাঁজার এ আস্তানা উচ্ছেদে অবিলম্বে পুলিশ প্রশাসনিক কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেছে।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিষয়টি তাদের জানা নেই। তদন্ত করে আস্তানা উচ্ছেদ ও কারবারীদের আটক করা হবে।