শিরোনাম |
❒ মাঠ পর্যায়ে কার্যকরী পুলিশি অভিযান নেই
গত জুলাই আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকার পতনের পর দেশের বিভিন্নস্থানে থানা ও পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় পুলিশি মুভমেন্ট কমে যাওয়ার সুযোগ নিচ্ছে আলোচিত সব মাদক কারবারী চক্র। ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার মত যশোরেও জোরেসোরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটগুলোর সদস্যরা। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কার্যকরীভাবে মাঠে না থাকার সুযোগ নিয়ে যশোরে শতাধিক স্পটে মাদক ব্যবসায়ী অপরাধী চক্র রমরমা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। চলমান পরিস্থিতিতে পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান কমে যাওয়ায় এখন মাঠে সরব যশোরাঞ্চলের শ’শ’ মাদক কারবারী।
যশোরাঞ্চলে শহর, শহরতলী ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবাধে মিলছে ফেনসিডিল ইয়াবা ও গাঁজা। পাড়া মহল্লা গ্রামেও ঢুকে গেছে এই নেশাদ্রব্য। যশোরের শতাধিক স্পট ও ডেরায় চলছে এই কারবার।
বিগত জুলাই ও আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর সরকার পতনকে পুঁজি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সুযোগ সন্ধানী চক্র সহিংসতায় জড়িয়ে পড়ে। অনেক থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। বিশেষ করে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পদত্যাগের পর পুলিশ সদর দপ্তর, বিভিন্ন জেলা পুলিশের কার্যালয়, ট্রাফিক পুলিশ বক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা ভাঙচুর ও হতাহতের ঘটনায় পুলিশের মধ্যে চরম ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়। ৬ আগস্টের পর সপ্তাহখানেক সময় পুলিশ কর্মবিরতি পালন করে। পরে অফিসে যোগদান করে কাজ শুরু করলেও কার্যত অভিযানে নামেনি। আর এই সুযোগ নিয়ে মাদক কারবারী অপরাধী চক্র বিনা বাধায় চালিয়ে যাচ্ছে অনৈতিক মাদক কারবার।
যশোর জেলার ৯ থানা এলাকার মাদক ব্যবসায়ী সেক্টরে পুলিশি অভিযান কমে যাওয়ার কারণে শংকরপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসহ শতাধিক স্পটে রমরমা কারবার চলছে মাদকের। এছাড়া সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত চাঁচড়া, রায়পাড়া, ডালমিল এলাকা, বাবলাতলা, শেখহাটি, বিরামপুর, উপশহর, মন্ডলগাতি, খোলাডাঙ্গা, ধর্মতলা, পালবাড়ি, পুরাতন কসবা, লোনঅফিস পাড়া, ষষ্টিতলা, রেলস্টেশন, শংকরপুর, রেলগেট, মুজিবসড়ক, জেসটাওয়ার পাড়া, বারান্দীপাড়া, নীলগঞ্জ, ঝুমঝুমপুর, ঘোপ জেল রোড, বেজপাড়া তালতলা, আনছার ক্যাম্প এলাকা, আরএন রোড, খড়কি, কারবালা এলাকাসহ আরো অর্ধশত স্পটে ব্যবসা চলছে। চলমান পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এখন যশোরাঞ্চলের বিভিন্ন ছোট বড় শহর, শহরতলী এমনকি গ্রামাঞ্চলে কয়েকশ’ চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এরা শহরের শতাধিক স্থানে ভ্রাম্যমানভাবে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছে। গাঁজা ফেনসিডিল ইয়াবাসহ সব ভার্সনের মাদক মিলছে অবাধে। সংঘবদ্ধ মাদক কারবারীরা জমজমাট মাদক ব্যবসা করে এলাকার পরিবেশ নষ্ট করছে।
পুলিশি অভিযান শিথিলের সুযোগ নিয়ে যশোরের শংকরপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চিহ্নিত সিন্ডিকেট অপ্রতিরোধ্য স্টাইলে মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। গাঁজা ফেনসিডিল ইয়াবাসহ সব ধরনের মাদক মিলছে এই এলাকায়। মাদকের রাজত্ব চালাচ্ছে তিনটি সিন্ডিকেট। প্রয়াত এক মাদক কারবারী ও চোর সিন্ডিকেট প্রধানের ছেলেমেয়েরা একটি সিন্ডিকেট চালাচ্ছে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে চক্রটি কৌশলও পাল্টিয়েছে আরো কয়েকটি সিন্ডিকেট। ফোন করে মাদকের অর্ডার নিচ্ছে, আর বিকাশের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করে নিচ্ছে। ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার মত কারবার চালানো চক্রটির কেউ কেউ এলাকায় নানা অপকর্মে জড়িত বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
একাধিক সূত্র থেকে তথ্য মিলেছে, পুলিশ মাদক বিরোধী অভিযানে না নামায় শ’ শ’ মাদক কারবারী তাদের নানামুখি কৌশলে কারবার চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যবসা চলছে পকেটে ভরে ভ্রাম্যমানভাবে, পথ চলতে চলতে হান্ডসেক করার মাধ্যমে বিক্রি হচ্ছে ইয়াবা। কেউ হাতে হাত মিলিয়ে, আবার কেউ মোলাকাতের মাধ্যমে হাত বদল করছে ইয়াবা। দেখলে অন্যরা মনে করছে বন্ধুর সাথে দেখা হওয়ায় মোলাকাত বা হাত মিলিয়ে কুশল বিনিময় চলছে।
এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, পরিস্থিতিগত কারণে মাঠ পর্যায়ে পুলিশের কঠোর অভিযান না থাকলেও পুলিশ সজাগ রয়েছে। মাদক কারবারীদের ওপর নজরদারি রয়েছে। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মাদক কারবারী আটক করা হচ্ছে এবং আটক করা হবে। মাদক ব্যবসায়ীসহ সব ধরণের অপরাধী আটক ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।