উজানের পাহাড়ি ঢল আর কয়েকদিনের টানা ভারী বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি প্রবাহ বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও ২৪ ঘণ্টা পরে নিচে নেমেছে। ফলে লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও বেড়েছে দুর্ভোগ।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫১ দশমিক ৭০ মিটার। যা বিপৎসীমার (স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ১৫ মিটার) ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে রোববার সকাল ৯টায় বিপৎসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
পানি কমলেও তা ধীরগতিতে নামছে। নদীপাড়ে অধিকাংশ বাড়ি থেকে পানি নেমে গেছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলেও বেড়েছে দুর্ভোগ। বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গেছে ঘরবাড়ির বিভিন্ন জিনিসপত্র। ভিজে নষ্ট হয়েছে সংসারের নিত্য প্রয়োজনীয় অনেক পণ্য। এসব সংগ্রহ ও মেরামতে ব্যস্ত পানিবন্দি পরিবারগুলো।
এদিকে পানিবন্দি ও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৩ লাখ টাকা ও ৯০ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ শুরু করেছে।
টানা দুই-তিন দিনের বন্যায় নদী তীরবর্তী এলাকার বেশ কিছু রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ভেঙে গেছে পানির তোরে। উঠতি আমন ধান ও বিভিন্ন সবজি ক্ষেত ডুবে আছে বন্যার পানিতে। দীর্ঘ সময় ডুবে থাকায় এসব ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা। একই সঙ্গে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গেছে বেশ কিছু পুকুরের মাছ।
গোবর্দ্ধন এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত এমদাদুল হক বলেন, বানের পানিতে ঘরের সবকিছু ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরের বেড়া খুলে পড়ে গেছে। ঘরে বাহিরে কাদা। বসবাসের উপযোগী করতে বেশ সময় লাগবে। আপাতত মেরামত করছি। জীবন তো বাঁচাতে হবে। পরিবারকে তো নিরাপদে রাখতে হবে।
গোবর্দ্ধন গ্রামের কৃষক কুতুবউদ্দিন বলেন, বন্যার পানিতে তিনদিন ধরে ডুবে আছে উৎতি আমন ধানের ক্ষেত। পানি নামতে শুরু করেছে। পানি পুরো নেমে গেলে তখন বুঝা যাবে ক্ষেতের অবস্থা। তবে ক্ষতির আশঙ্কা তো আছেই। আপাতত ধান ক্ষেতে কচুরি পানা ও আটকে থাকা আবর্জনা সড়িয়ে দিচ্ছি। নদীপাড়ের জীবন মানেই কষ্টের জীবন। বন্যা এলেও কষ্ট গেলেও কষ্ট।
একই এলাকার মৎস্য চাষি মন্টু মিয়া বলেন, লিজে নেওয়া দুটি পুকুরে মাছ চাষ করেছি। গেল বন্যায় সেই পুকুরের ওপর দিয়ে বন্যার স্রোত প্রবাহিত হয়েছে। নেট জাল দিয়ে মাছ রক্ষার চেষ্টা করেছিলাম। জানি না কতটুকু রক্ষা করতে পেয়েছি।
হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ি গ্রামের আফাজ উদ্দিন বলেন, বন্যায় গরুর জন্য রাখা খড় ভিজে নষ্ট হয়েছে। এখন বন্যার পানিতে পচে যাওয়া ঘাসও খাওয়ানো যাবে না। খড়ও ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে। গরুর খাবার নিয়ে বড্ড চিন্তায় আছি। বন্যার পরে খড়ের দামও বেড়েছে কয়েকগুণ।
আদিতমারী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসার মফিজুল ইসলাম বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ও পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে পরিবার প্রতি ৫শ টাকা হারে নগদ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। জিআরের চালও বিতরণ শুরু করা হয়েছে।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার বলেন, তিস্তা নদী ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ কমে গিয়ে বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটেছে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, বন্যা কবলিতদের জন্য ১৩ লাখ টাকা ও ৯০ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যা ইতোমধ্যে বিতরণ শুরু হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতিরও যথেষ্ট উন্নতি ঘটেছে।