শিরোনাম |
বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, প্রতিশোধ প্রতিহিংসার জন্ম দেয়। আমরা ঘোষণা দিয়েছি কারো ওপর প্রতিশোধ নেব না। প্রতিশোধ নেওয়ার মানে হচ্ছে আইন হাতে তুলে নেওয়া। এটি যেখানেই করা হয়েছে সেখানেই বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। প্রতিশোধ প্রতিহিংসার জন্ম দেয়, যুগ যুগ এটা চলতে থাকে। আমরা চাই এই নোংরা কাজের এখানেই পরিসমাপ্তি হোক। তবে ন্যায় প্রতিষ্ঠার দাবি হচ্ছে, যিনি যে অপরাধ করেছেন নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য তাকে শাস্তি পেতে হবে। এবং সেটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে।
শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সিরাজগঞ্জ দারুল ইসলাম একাডেমি মাঠে আয়োজিত রোকন সম্মেলন ও সুধী সমাবেশের প্রথম ভাগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
জামায়াত আমির শফিকুর রহমান বলেন, আমরা চাই বাংলাদেশ তার মুক্তির যে পথে উঠেছে, গন্তব্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত সেটি চলতে থাকুক। কোনো অপশক্তি যদি বাংলাদেশকে এই রাস্তা থেকে সরিয়ে দিতে চায়, তাহলে দেশের ১৮ কোটি মানুষের ৩৬ কোটি হাত তাদের প্রতিহত করে দেবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, এখন জাতীয় ঐক্যের বড়ই প্রয়োজন। জাতির মৌলিক ইস্যুতে আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। সব দল তার নিজস্ব জায়গা থেকে রাজনীতি করবে, তার বিবেকের তাড়নায় যা বলার তা বলবে, বর্তমান সরকারেরও প্রয়োজনীয় সমালোচনা করবে। আবার এই সরকার যেন সংস্কারের কাজগুলো সঠিকভাবে করতে পারে তার জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতাও দেবে। এভাবে ভারসাম্যপূর্ণ রাজনীতির মধ্যে দিয়ে সবাই এগিয়ে যাক। দল ও মত ভিন্ন থাকবে, এটিই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। সবাই আমার মনের মতো পছন্দের কথা বলবে না, এটা গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। এ জন্য সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতাও আমাদের থাকতে হবে। যারা সমালোচনা করেন, তারাই আমাদের প্রকৃত বন্ধু। যারা আমার সমালোচনা করেন না, আমার ভুল দেখেও নীরব থাকেন তারা আমার বন্ধু হতে পারে না। আমরা সমালোচনাকে অভিনন্দন জানাই, উৎসাহ দেই।
সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সাড়ে ১৫ বছর আপনারাও স্বাধীন ছিলেন না। ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় হোক আপনারাও মজলুম দলগুলোর বিরুদ্ধে কলম চালিয়েছেন। অনেকেই বলেন চাপের জন্য আপনারা অসহায় ছিলেন। এ জন্য আপনাদের দায়ী করব না। আল্লাহ এখন আপনাদের কণ্ঠ মুক্ত করে দিয়েছেন। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এখন যেন আপনাদের বিবেক অনুযায়ী এই পবিত্র দায়িত্ব পালন করতে পারেন।
জামায়াত আমির বলেন, তারা যুদ্ধের পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধাসহ হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। তারা দেশকে যে কালো গহ্বরের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছিল, সেখান থেকে আমরা এখনও বের হয়ে আসতে পারিনি।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, বিগত ১৫ বছরে জামায়াতে ইসলামের ওপর সবচেয়ে বেশি জুলুম করা হয়েছে। একে একে ক্রমিক অনুসারে ১ থেকে ১১ শীর্ষ দায়িত্বশীল নেতাদের জুডিশিয়াল কিলিংয়ের মাধ্যমে দুনিয়া থেকে বিদায় করা হয়েছে। ফাঁসি দেওয়া হয়েছে, জেলের ভিতরে তিলে তিলে তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। তারা চেয়েছিলেন যেন এসব নেতারা প্রাণ ভিক্ষা চায়। কিন্তু তারা আল্লাহ ছাড়া কারো কাছে মাথানত করেননি। শুধু তাই নয়, অন্যারের প্রতিবাদ যারাই করেছেন তাদের ওপরেই গোলাবারুদ নেমে এসেছে। আমরা অনেক আন্দোলন করার চেষ্টা করেছি। সর্বশেষ ছাত্র-জনতার একটি আন্দোলন কেন্দ্র করে শেষ পর্যন্ত এই স্বৈরশাসকের বিদায় হয়েছে।
জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক জাহিদুল ইসলামের সঞ্চালনায় ও জেলা জামায়াতের আমির শাহীনুর আলমের সভাপতিত্বে এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় জামায়াত ইসলামের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খাঁন, অর্থ সম্পাদক অধ্যক্ষ শাহাবুদ্দিন, ঢাকা দক্ষিণের নায়েবে আমির ড. হেলাল উদ্দিন, আবু তালেব মণ্ডল ও কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য প্রফেসর ড. মাওলানা আব্দুস সামাদ। এছাড়া জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।