gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ৪ আশ্বিন ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
ঝিকরগাছা সরকারি বহুমুখী মডেল হাইস্কুল ৭৮ লাখ টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে
প্রকাশ : বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর , ২০২৪, ১১:০৮:০০ পিএম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম:
GK_2024-09-18_66eb0a212403a.jpg

ঝিকরগাছা সরকারি বহুমুখী মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান আজাদের বিরুদ্ধে ৭৮ লাখ টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রীতিমত এমন তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন দাখিল করেছে অভ্যন্তরীন একটি নিরীক্ষা কমিটি।
মোটা অংকের এই টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে স্কুলের ছাত্র, অভিভাবক ও এলাকাবাসী অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে অপসারণ দাবি করেছেন। নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে তারা প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানের সামনে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছেন। স্কুল গেট বন্ধ ও ক্লাস বর্জন করছেন। এ ঘটনায় দ্রুত সংশ্লিষ্ট সরকারি সরকারি দপ্তরের পৃথক তদন্তও দাবি করেছেন।
২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে নিয়োগপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান আজাদ দুর্নীতি, অনিয়ম ও চরম স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হওয়ায় স্কুলের সুনাম এখন শূণ্যের কোটায় পৌঁছেছে বলেও যশোর জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে দেয়া অভিযোগে বলা হয়েছে।
এদিকে এসব অভিযোগ ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক। অভ্যন্তরীন নিরীক্ষা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি ।
বিভিন্ন দপ্তরে দেয়া অভিযোগ, নিরীক্ষা কমিটির প্রতিবেদন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে তথ্য মিলেছে, গত ২০২৩ সালে ৯ম শ্রেণির পরীক্ষা ফিস এবং বোর্ড নির্ধারিত ফিসের অতিরিক্ত নিবন্ধন ফিস বিনা রশিদের মাধ্যমে আদায় করার ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ায় ঝিকরগাছা সরকারি বহুমুখী মডেল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান আজাদকে ঘিরে হৈচৈ শুরু হয়। রীতিমত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে তদন্তে তার সত্যতা মেলে। আর তার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন দিলে প্রধান শিক্ষক অতিরিক্ত আদায় করা টাকা প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ফেরত দিতে বাধ্য হন। ওই সময় থেকে সকলের নজর পড়ে যায় প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে। এলাকার সচেতন মহল ও অভিভাবকগন বিদ্যালয়টিতে স্বচ্ছতা আনতে খোঁজখবর নেয়া শুরু করেন। গত আগস্ট মাসে স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের হাতে চলে আসে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন খাতের মোটা অংকের টাকা নয়ছয়ের তথ্য। এক পর্যায়ে গত ১৪ আগস্ট আর্থিক বিষয়সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও জালিয়াতি নিয়ে প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান আজাদের মুখোমুখি হন শিক্ষার্থী অভিভাবকসহ এলাকার একাট্টা মানুষ। এসময় সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় বিদ্যালয়ের আর্থিক খাত তদন্তের জন্য বিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষক সমন্বয়ে একটি অভ্যন্তরীন নিরীক্ষা কমিটি করে দেয়া হয় প্রধান শিককের মধ্যস্থতায়। প্রতিষ্ঠানের সহকারী প্রধান শিক্ষক এ,এফ,এম সাজ্জাদুল আলমকে আহবায়ক ও সহকারী শিক্ষক আমিরুল ইসলাম, আফরোজা খানম ও স্বপন কুমার ঘোষকে ওই নিরীক্ষা কমিটির সদস্য করা হয়।
ওই কমিটি ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত স্কুলের আয় ব্যয়ের পূর্নাঙ্গ যাচাই বাছাই করেন। এসময় ঝিকরগাছা সরকারি বহুমুখী মডেল হাইস্কুলের ৭৮ লাখ ৬৫ হাজার ৪শ’৮৭ টাকার আর্থিক অসঙ্গতি পান ওই নিরীক্ষা কমিটি। প্রতিবেদন দাখিলের পর কোনো সরকারি সংস্থার মাধ্যমে উচ্চতর কমিটি গঠন করে পূণঃনিরীক্ষা করা যেতে পারে বলেও ওই কমিটি সদস্যের মত প্রকাশ করেছেন।
নিরীক্ষায় উঠে এসেছে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর আম্ফান ঝড়ের সময় বিদ্যালয়কে ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও তার কোনো বাস্তবায়ন দেখা যায়নি। ২০২৪ সালে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর থেকে স্কুলের সামনের রাস্তা ও টয়লেট করা বাবদ ২০ লাখ টাকা অনুমোদন হলেও সিডিউল অনুযায়ী কাজ হয়নি। স্কুলটি সরকারি হলেও ৬ষ্ঠ, ৭ম, ৮ম শ্রেণিতে মাসিক বেতন ১শ’১০ টাকা হারে এবং ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে (সাধারন ও ভোকেশনাল শাখা) মাসিক বেতন ১শ’২০ টাকা হারে আদায় করেছেন প্রধান শিক্ষক। এখান থেকে শিক্ষক কর্মচারীগণ কোনো আর্থিক সুবিধাও গ্রহণ করেননি।
নিরীক্ষা প্রতিবেদন থেকে আরো তথ্য মিলেছে, প্রধান শিক্ষক ম্যাগাজিন তৈরির নামে স্কুলের ব্যাংক একাউন্ট থেকে ৪৩ হাজার ১৩৫ টাকা তুললেও তা খরচ না করে পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে ৩শ’ টাকা করে আদায় করে ৩৯ হাজার টাকা খরচ করেছেন মর্মে বিল ভাউচার পাওয়া গেছে। টিফিন বাবদ ব্যাংক থেকে ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৬শ’৯৩ টাকা ওঠালেও তার থেকে ২ লাখ ৬৩ হাজার ৩শ’ ৮১ টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। ভর্তি বাবদ আদায় আদায় করা ৮ হাজার টাকা নয়ছয় করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী সরকারি বেতনভূক্ত হলেও প্রধান শিক্ষক তার বেতন বাবদ ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজার ৪০ টাকা তুলে নিয়েছেন। কমন রুম বানানোর জন্য ব্যাংক থেকে ২৩ হাজার ৭শ’৯৩ টাকা ওঠালেও বিদ্যালয়ে কোনো কমন রুম নেই। মুদ্রন খাতে ব্যয়ের জন্য ব্যাংক থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা তোলা হলেও সেখান থেকে ৫০ হাজার টাকার ঘাপলা করা হয়েছে। বিবিধ খাতে খরচ মর্মে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৩শ’৮৫ টাকা ব্যাংক থেকে তোলা হলেও সেখানে ১ লাখ ৩ হাজার ৪০ টাকা নয়ছয়ের তথ্য পেয়েছেন অভ্যন্তরীন নিরীক্ষা কমিটি। এভাবে ৩১ টি খাতে খরচ দেখিয়ে ৭৮ লাখ ৬৫ হাজার ৪শ’৮৭ টাকার আর্থিক অসঙ্গতি করেছেন বলে জোরালো অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
এছাড়া অব্যাহতভাবে শিক্ষার্থী ও অভিভাকগণকে জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়েছে কোনো রশিদ ছাড়াই। ৭০ টাকা টিফিন বাবদ আদায় করলেও কোন টিফিন সরবরাহ করা হয়না বলেও শিক্ষার্থীরা তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছে। এভাবে বিগত কয়েক বছর জুড়ে বিদ্যালয়ের ৭শ’ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে। নির্দিষ্ট খাতের টাকা নির্দিষ্ট খাতে খরচ না করে করা হয়েছে নয়ছয়। স্কুলের শিক্ষক কর্মচারীকে বিভিন্ন সময় হয়রানীমূলক একাধিক শো’কজের মাধ্যমে হয়রানী করেছেন। এতে শিক্ষার সার্বিক পরিবেশ চরমভাবে নষ্ট হয়েছে। খাতওয়ারি টাকা আদায় করা হলেও বিদ্যালয়ে বার্ষিক ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং নবীন বরন অনুষ্ঠান হয়না।
অভিভাবক, ছাত্রছাত্রীদের মৌখিক ও লিখিত অভিযোগের বিষয়েও সত্যতা পেয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার সেহেলী ফেরদৌস। রশিদ ছাড়াই শিক্ষার্থী মাথাপ্রতি রেজিস্ট্রেশন ফি বাবদ ৪শ’ টাকা পরীক্ষার ফি বাবদ ৩শ’৫০ টাকা এবং বছরের শুরুতেই ১ হাজার ৮শ’৯৬ টাকা করে এককালীন গ্রহন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৮ জুন মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোরের বিনি/বিজ্ঞপ্তি/৭৪/২/৭৮০ নাম্বার স্মারকে বলা হয় ৯টি খাত বাবদ মাত্র ৫শ’৮৬ টাকা আদায় করা যাবে। সরকারি পরিপত্র অনুযায়ী মাত্র ৫শ’৮৬ টাকা গ্রহন করতে পারেন বলে বলা হলেও বছরের শুরুতে মাথাপ্রতি ১ হাজার ৮শ’৯৬ টাকা নেয়া হয়েছে ২০টি খাত দেখিয়ে। অথচ নিরীক্ষা কমিটি ওই ২০ খাতের খরচে চরম ঘাপলা ও অসঙ্গতি পেয়েছেন।
এদিকে, উপরে উল্লেখিত এসব অভিযোগ অভ্যন্তরীন নিরীক্ষার বিষয়ে বক্তব্য নেয়া হলে প্রধান শিক্ষক মোস্তাফিজুর রহমান আজাদ দৈনিক গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, তার বিরুদ্ধে একটি নিরীক্ষা প্রতিবেদন দিয়েছেন ৪ শিক্ষক। কিন্তু তারা কিভাবে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ তদন্ত করেন? এটা কি কোনো নিয়মে পড়ে? যে ৭৮ লাখ টাকার অসঙ্গতি নিয়ে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে তা সত্য নয়। এছাড়া আরো কয়েকটি সরকারি দপ্তরেও অভিযোগ করা হয়েছে তাও সত্য নয়। তিনি আশা করছেন সরকারিভাবে খুলনার ডিডির কার্যালয় থেকে তদন্ত শুরু হলে তিনি সব কাগজপত্র ও হিসেব উপস্থাপন করবেন।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝