শিরোনাম |
যিনি চার শতাধিক চলচ্চিত্রে খল ও কমেডি চরিত্রে অভিনয় করে মুগ্ধ করেছেন দর্শকদের তিনি হচ্ছেন- বর্ষিয়ান অভিনয়শিল্পী এটিএম শামসুজ্জামান। আজ এই অভিনেতার জন্মবার্ষিকী। অভিনয় গুণে মানুষের মুঠো মুঠো ভালোবাসা কুড়িয়েছেন এই শিল্পী।
এটিএম শামসুজ্জামান ১০ সেপ্টেম্বর, ১৯৪১ সালে নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার পুরো নাম আবু তাহের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুর জেলার ভোলাকোটের বড় বাড়ি। তিনি ঢাকায় থাকতেন দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে। তার পিতা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মাতা নুরুন্নেসা বেগম। এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনী জামান।
তিনি পড়াশোনা করেছেন ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল ও রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে। ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট হাই স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করার পর এটিএম জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চতর শিক্ষালাভ করেন।
১৯৬১ সালে সাদাকালো যুগে এটিএম শামসুজ্জামান আত্মপ্রকাশ করেছিলেন একজন সহকারী পরিচালক হিসেবে। তিনি খান আতাউর রহমান, কাজী জহির, সুভাষ দত্তের মতো বিখ্যাত পরিচালকদের সহকারী হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর কাজ করেছেন চিত্রনাট্যকার হিসেবে। তারপর অভিনয়ে এবং পরিণত হলেন একজন কিংবদন্তিতে।
এটিএম শামসুজ্জামান অভিনীত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- ‘লাঠিয়াল’, ‘নয়নমণি’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘সূর্যদীঘল বাড়ি’, ‘ছুটির ঘণ্টা’, ‘লাল কাজল’, ‘পুরস্কার’, ‘দায়ী কে?’, ‘দোলনা’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘অজান্তে’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’, ‘শাস্তি’, ‘মোল্লা বাড়ির বউ’, ‘হাজার বছর ধরে’, ‘চাঁদের মতো বউ’, ‘মন বসে না পড়ার টেবিলে’, ‘এবাদাত’, ‘পরান যায় জ্বলিয়ারে’, ‘কুসুম কুসুম প্রেম’, ‘গেরিলা’, ‘লাল টিপ’, ‘চোরাবালি’, ‘পাংকু জামাই’।
তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য টিভি নাটক হচ্ছে- ‘রঙের মানুষ’, ‘ভবের হাট’, ‘ঘর কুটুম’, ‘বউ চুরি’, ‘নোয়াশাল’, ‘শতবর্ষে দাদাজান’।
অভিনয়ের জন্য এটিএম শামসুজ্জামানের প্রথম পুরস্কার ছিল বাচসাস পুরস্কার। পরে ১৯৮৭ সালে কাজী হায়াতের দায়ী কে সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন তিনি। ১৯৯৯ সালের ম্যাডাম ফুলি, ২০০১ সালের চুড়িওয়ালা, ২০০৯ সালের মন বসে না পড়ার টেবিলে সিনেমায় অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ কৌতুক অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান তিনি।
২০১২ সালের চোরাবালি সিনেমার জন্য পান পার্শ্বচরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার। আর ২০১৭ সালে ৪২তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তাকে আজীবন সম্মাননায় ভূষিত করা হয়। ২০১৫ সালে একুশে পদক পান এটিএম শামসুজ্জামান। কিন্তু প্রথমে এই পুরস্কার নিতে চাননি তিনি। পরে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে এই সম্মাননা গ্রহণ করেন।
এটিএম শামসুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। তিনি ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সালে ঢাকার সূত্রাপুরের দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। তার মরদেহ জুরাইন কবরস্থানে তার বড় ছেলে কামরুজ্জামান কবীরের পাশে সমাহিত করা হয়।