শিরোনাম |
পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে আল্লাহ উঁচু-নীচু করে সৃষ্টি করেছে। মানুষকে সচ্ছলতা ও দরিদ্র্যতা দিয়ে পরীক্ষা করেন। যাতে একে অপরের সহযোগী ও পরিপূরক হয়। ধৈর্য, সহানুভূতি ও মানবতার চর্চা হয়। এসবই স্রষ্টার সৃষ্টি রহস্যের নিদর্শন। হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে, সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ। উপকার করা যায় অর্থ, শক্তি, বুদ্ধি ও বিদ্যা দিয়ে। যে খোদাপ্রদত্ত যোগ্যতা মানব সেবায় নিয়োজিত করে, তার যোগ্যতা সার্থক হয়। সে দুনিয়া ও আখেরাত সাফল্যমন্ডিত হয়। পরোপকার যে পন্থায়ই হোক, আল্লাহর কাছে কবুল এবং মর্যাদাপূর্ণ। পার্থিব যে কোনো উদ্দেশ্য ও স্বার্থহীনভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য করে যাওয়া। অর্থাৎ উপকৃত ব্যক্তির কাছ থেকে বদলা পাওয়া, কিংবা সুনাম-সুখ্যাতি লাভ করা, সামাজিক প্রতিষ্ঠা অর্জন বা অন্য কোনো রকম সুবিধা ভোগ করা। অথবা দান করে খোটা দিয়ে দমিয়ে রাখা। আল্লাহ বলেন, আমরা তো তোমাদের খাওয়াই আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আমরা তোমাদের কাছে কোনো প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না (সুরা দাহার : ৯)।
দেখা যায়, একশ্রেণির মানুষ দান-খয়রাত করে এবং ঋণকর্জ দিয়ে পরক্ষণেই খোঁটা দেয়।
বিশেষত যদি গ্রহীতার সঙ্গে দাতার কোনো কারণে সম্পর্ক নষ্ট হয় বা মতপার্থক্য দেখা দেয়, তখন অতীতের উপকারের ফিরিস্তি খুলে দিয়ে খোঁটা দিতে শুরু করে।
কাউকে সহযোগিতা কিংবা উপকার করে খোঁটা দেওয়া ইসলামে নিকৃষ্ট অপরাধ।
খোঁটা দিলে উপকারের সওয়াব বিনষ্ট হয়ে যায়। তাই খোঁটা দেওয়া ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্য অন্যায় ও কবিরা গুনাহ হিসেবে বিবেচিত।
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, যারা স্বীয় ধন সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, এরপর ব্যয় করার পর সে অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে না এবং কষ্টও দেয় না, তাদেরই জন্যে তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে পুরস্কার এবং তাদের কোনো আশঙ্কা নেই, তারা চিন্তিতও হবে না। (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৬২)
আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা অনুগ্রহের কথা প্রকাশ করে এবং কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-বদান্যতা বরবাদ করো না সে ব্যক্তির মতো, যে নিজের ধন-সম্পদ লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে ব্যয় করে এবং আল্লাহ ও পরকালের প্রতি বিশ্বাস রাখে না। (সুরা বাকারা, আয়াত : ২৬৪)
মূলত যারা সংকীর্ণমনা তারাই উপকার করে অপরকে খোঁটা দেয়। আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন তাদের সাথে কথা বলবেন না বলে হাদিসে এসেছে।
আবু যর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন কথা বলবেন না। খোঁটাদানকারী; সে যা কিছু দান সদকা করে পরক্ষণেই তার খোঁটা দেয়। আর যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ করে তার পণ্য বিক্রি করে এবং যে ব্যক্তি টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলিয়ে চলে বা পরিধান করে। (মুসলিম, হাদিস নং: ২০২)
মুসলিম শরিফের আরেকটি হাদিসে আছে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তিন শ্রেণির লোকের সঙ্গে কথা বলবেন না। তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদের পাপমুক্ত করবেন না। তাদের জন্য রয়েছে পীড়াদায়ক শাস্তি। এই তিনজন হচ্ছে, পায়ের গিরার নিচে ঝুলিয়ে কাপড় পরিধানকারী, অনুগ্রহ ও দান-দক্ষিণার পর খোঁটাদাতা ও প্রচারকারী এবং মিথ্যা শপথ করে পণ্যসামগ্রী বিক্রয়কারী।
অন্য হাদিসে আছে, তিনজন বেহেশতে যেতে পারবে না। তারা হচ্ছে মা-বাবার অবাধ্য সন্তান, মাদকসেবী, উপকার ও দানদক্ষিণার প্রচার ও খোঁটাদাতা। (নাসায়ি শরিফ) তাই কাউকে উপকার করতে চাইলে, নিঃস্বার্থভাবেই করবো। উপকার করে খোঁটা দিতে যাবো না। নিজের ব্যক্তিত্ব ছোট করার পাশাপাশি উপকারের সওয়াব নষ্ট করবো না। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।