শিরোনাম |
যশোর শংকরপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চিহ্নিত সিন্ডিকেট অপ্রতিরোধ্যভাবে মাদক কারবার ও জুয়ার আড্ডা চালিয়ে যাচ্ছে। টার্মিনালের পশ্চিম পাশে পরিত্যক্ত কয়েকটি কাউন্টারের মধ্যে চলছে রমরমা ওই ব্যবসা। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত লাল মাস্টার আবদুল হালিম ওরফে দাদা ভাই ও গাঁজা মুকুল মিলে অনৈতিক এই কারবার চালিয়ে যাচ্ছে কাউন্টারের আড়ালে।
এছাড়া, ওই এলাকায় রয়েছে আরও কয়েকটি সিন্ডিকেট। সংঘবদ্ধ মাদক কারবারি ও জুয়ার কারণে এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাদের কারণে এলাকার উঠতি বয়সী যুবক, এমনকি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্ররা নেশায় বুদ হচ্ছে। অথচ অজ্ঞাত কারণে নীরবতা পালন করে আসছে চাঁচড়া ফাঁড়ি পুলিশ। এ ব্যাপারে স্থানীয়রা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
তথ্য মিলেছে, শংকরপুর টার্মিনাল এলাকার হালিম ও গাঁজা মুকুলসহ ডজন খানেক জুয়া ও মাদক সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে। জুয়ার আড্ডা ও মাদক ব্যবসা চলাকালীন টার্মিনালের চারপাশে তাদের লোকজন অবস্থান নেয় পুলিশ আসছে কিনা তা দেখার জন্য। এই অবস্থায় আব্দুল হালিম সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চালাচ্ছে হাজার হাজার টাকার জুয়ার কারবার। সেই সাথে চলে মাদক বেচাকেনাও।
বাইরে থেকে এখানে লোক আসে জুয়া খেলতে ও মাদক সেবন করতে। সারাদিন পরিশ্রম করে শ্রমিকেরা জুয়ায় জেতার আসায় খোয়াচ্ছে তাদের ঘামে উপার্জিত টাকা। একপর্যায়ে শূন্য পকেটে বাড়ি ফিরছে তারা। সবার পকেট ফাঁকা করে টাকা লুটে নিচ্ছে লাল মাস্টার হালিম, গাঁজা মুকুলসহ কয়েকজন।
অনেক শ্রমিক জানিয়েছেন, লোভ করতে গিয়ে তারা নিঃস্ব হচ্ছেন আর পকেট গরম করছে লাল মাস্টার। তিন তাস, কাট্টি ও হাজারি খেলা এবং মাদকের ব্যবসা করে লুটে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা। এলাকার সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলে তাদেরকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেয়া হচ্ছে বলেও তথ্য মিলেছে। এতে করে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারেন না বলেও জানিয়েছেন টার্মিনালের কয়েকজন শ্রমিক।
কিছুদিন আগে টার্মিনাল এলাকার ইজিবাইক চালক আমির হোসেনকে জুয়া খেলার সময় হালিম ও মুকুল মারপিট করে টাকা ছিনিয়ে নেয়। এ বিষয়ে কাউকে না জানানোর হুমকি দেয় হালিম গং। জুয়া খেলে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছেন ওই এলাকার হামিদের ছেলে জসিম। এছাড়া, টার্মিনাল মসজিদ গলিতে প্রতিনিয়ত কেজি কেজি গাঁজা বিক্রি করছে মাদক কারবারি বেগমের মেয়ে মিনি খাতুন ও ময়না খাতুন। বিভিন্ন লোক দিয়ে তারা হকারি করে মসজিদ গলিতে গাঁজা বিক্রি করছে। কোনো মুসল্লি প্রতিবাদ করলে তাকে তার লোক দিয়ে মারধরসহ হত্যার হুমকি দেয়। এ কারণে ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। এ ব্যাপারে চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা কোনো ভূমিকা রাখছেন না টার্মিনাল এলাকায়।
পুলিশ সুপার যশোরকে মাদকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এলাকা চিহ্নিত করে শহর ও শহরতলিতে মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনারও নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে শংকরপুর বাসটার্মিনালে চলছে যথেচ্ছা মাদক কারবার। তিন ভাইবোনসহ চক্রের হাফডজন মাদক ব্যবসায়ী এখনো প্রকাশ্যে। এরা বাস টার্মিনাল মেডিকেল কলেজসহ আশেপাশে মাদক সরবরাহ করে থাকে। চক্রের লোকজনের কাছে ফোন করলে কাস্টমারের কাছে মাদক পৌঁছে যাচ্ছে। টার্মিনালে শান্তিশৃঙ্খলা কমিটি থাকা সত্ত্বেও তাদের সামনে চলছে মাদকের কারবার। ওই চক্রে রয়েছে আরও সাত-আটজন উঠতি যুবক। তারা ফোন করে মাদকের অর্ডার নিচ্ছে, আর বিকাশের মাধ্যমে মূল্য পরিশোধ করছে ক্রেতা। চক্রটির কেউ কেউ এলাকায় বিভিন্ন সময় অস্ত্রের মহড়া দেয়া ছাড়াও চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত বলেও স্থানীয়দের অভিযোগ।
এ চক্রের সদস্যরা বেনাপোলের কয়েকটি সীমান্ত দিয়ে মাদকের চালান নিয়ে আসছে। শার্শার রুদ্রপুর, কাশীপুর গোগা, শিকারপুর, হরিশচন্দ্রপুর, বেনাপোলের পুটখালী, দৌলতপুর, গাতিপাড়া, সাদিপুর, বড়আঁচড়া, রঘুনাথপুর ও চৌগাছা সীমান্ত দিয়ে মাদক আনছে এরা। এসব বিষয় নিয়ে চরম উদ্বেগ, হতাশা আর উৎকন্ঠায় আছেন এলাকার অনেক অভিভাবক। তারা বলছেন, এলাকার মাদক ব্যবসায়ীদের জন্য রোডে চলাচলে চরম অসুবিধা হচ্ছে। বাধা দিলে উল্টো হয়রানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে। অজ্ঞাত কারণে চাঁচড়া পুলিশ ওই মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করছে না।
এ ব্যাপারে কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, মাদক বিরোধী অভিযান সবসময়ই চলমান। এর আগে প্রতিনিয়তই মাদক কারবারি আটক হয়েছে ও মাদক উদ্ধার হয়েছে। এখনও অভিযান চলছে। অভিযুক্ত ওইসব চিহ্নিতদের ব্যাপারে খোঁজ খবর নেয়া হবে। মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ভূমিকায় পুলিশ। কোনো মাদক কারবারিকে ছাড় দেয়া হবে না।