gramerkagoj
রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
মাদার তেরেসার জন্মদিন আজ
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর , ২০২৪, ১১:৪৮:০০ এএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2024-09-05_66d94254bacfd.jpg

মানুষের মাঝে সেবা পৌঁছে দেওয়াই যেন মাদার তেরেসার ব্রুত ছিল। সারাজীবন তিনি মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। এই মহীয়সী মাদার তেরেসার জন্মদিন আজ।
যার কাছে ছিলোনা কোন জাতি-ধর্মের ভেদাভেদ, মানবসেবাকেই ধর্ম হিসেবে নিয়েছিলেন যিনি, তিনিই মাদার তেরেসা, ছিলেন একজন আলবেনিয়ান-বংশোদ্ভুত ভারতীয় ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী। সারাবিশ্বের দুস্থ মানুষের ভরসার ও মমতাময়ী মায়ের প্রতিমুর্তি। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন। সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা অবহেলিত অনাথ, মাদার তেরেসা তাদেরই বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, সাধারণ থেকে অসাধারণ হয়ে উঠেছেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থী শিবিরে মাদার তেরেসা যে সেবা ও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন, তা ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। তিনি সবসময়ই বাংলাদেশের ভালো চেয়েছেন। তাঁর অবদান কখনো ভুলবার নয়। মাদার তেরেসাকে বিশ্বশান্তির পায়রা বলে অভিহিত করা হতো। তিনি তার মানবিক নানাবিধ কাজের জন্য সারাবিশ্বে ‘মাদার তেরেসা’ নামে পরিচিত। এই গুণী মানুষটির জন্মদিন আজ।
মানবতার প্রতীক মাদার তেরেসা ২৬ আগস্ট, ১৯১০ সালে অটোম্যান রাজ্যের ইউস্কুবেতে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম অ্যাগনেস গঞ্জা বোজাক্সিন।
মাদার তেরেসা আলবেনীয় বংশোদ্ভুত। তার বাবার নাম নিকোলো এবং মায়ের নাম ছিল দ্রানা বয়াজুর। তার বাবা নিকোলো ছিলেন রাজনীতিবিদ। মাত্র ৮ বছর বয়সে তিনি বাবাকে হারান। তারপর তার মা তাকে রোমান ক্যাথলিক আদর্শে পালন করেন। মাত্র ১২ বছর বয়সে তিনি সন্ন্যাস জীবনের সিদ্ধান্ত নেন এবং ১৮ বছর বয়সে তিনি গৃহত্যাগ করেন। এরপর তিনি একটি ধর্মপ্রচারক হিসেবে তার কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি একজন ভারতীয় ক্যাথলিক সন্ন্যাসিনী হন।
অ্যাগনেস প্রথমে আয়ারল্যান্ডের রথফার্নহ্যামে লোরেটো অ্যাবেতে ইংরেজি ভাষা শিক্ষা করতে যান। কারণ এই ভাষাই ছিল ভারতে সিস্টার্স অফ লোরেটোর শিক্ষার মাধ্যম। ১৯২৯ সালে ভারতে এসে দার্জিলিঙে নবদীক্ষিত হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ গ্রহণ করেন।
১৯৫০ সালে কলকাতায় তিনি মিশনারিজ অব চ্যারিটি নামে একটি সেবাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। সুদীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি দরিদ্র, অসুস্থ, অনাথ ও মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের সেবা করেছেন। সেই সঙ্গে মিশনারিজ অব চ্যারিটির বিকাশ ও উন্নয়নেও অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। প্রথমে ভারতে ও পরে সমগ্র বিশ্বে তার এই মিশনারি কার্যক্রম ছড়িয়ে পড়ে।
১৯৭৯ সালের ১৭ অক্টোবর তিনি তার সেবাকার্যের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার ও ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ভারতরত্ন লাভ করেন। তিনি বিশ্বের ১২৩টি রাষ্ট্রে এইচআইভি/এইডস, কুষ্ঠ ও যক্ষ্মার চিকিৎসাকেন্দ্র, ভোজনশালা, শিশু ও পরিবার পরামর্শ কেন্দ্র, অনাথ আশ্রম এবং বিদ্যালয়সহ মিশনারিজ অব চ্যারিটির ৬১০টি কেন্দ্র নির্মাণে অবদান রেখেছেন। বিভিন্ন ব্যক্তি, সংস্থা ও একাধিক রাষ্ট্রের সরকার তার কাজের ভূয়সী প্রশংসা করে।
১৯৬০-এর দশকের মধ্যে ভারতের সর্বত্র চ্যারিটির অর্থায়ন ও পরিচালনায় প্রচুর দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র, এতিমখানা ও আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ভারতের বাইরে এর প্রথম কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে ভেনিজুয়েলায়। মাত্র ৫ জন সন্ন্যাসিনীকে নিয়ে সে কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৬৮ সালে রোম, তানজানিয়া এবং অস্ট্রিয়াতে শাখা খোলা হয়। ১৯৭০-এর দশকে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েক ডজন দেশে শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সাথে অবশ্য তার দর্শন ও প্রায়োগিক দিক নিয়ে কিছু সমালোচনাও হয়। মাদার তেরেসার বিরুদ্ধে সমালোচকরা খুব কম তথ্যই হাজির করতে পেরেছিলেন। একথা স্বীকার করে নিয়েই ডেভিড স্কট বলেন, “মাদার তেরেসা স্বয়ং দারিদ্র্য বিমোচনের বদলে ব্যক্তি মানুষকে জীবিত রাখার উপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন।” এছাড়া কষ্টভোগ বিষয়ে তার মনোভাবও সমালোচিত হয়েছে। অ্যালবার্টার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “তিনি মনে করতেন, কষ্টভোগের মাধ্যমে যীশুর কাছাকাছি যাওয়া যায়।” এছাড়া ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ও দ্য ল্যান্সেট পত্রিকায় তার সেবা কেন্দ্রগুলোর চিকিৎসা সেবার মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে। অনেকেই এক হাইপোডার্মিক সূচ একাধিক বার ব্যবহারের কথা বলেছেন।
সমাজতান্ত্রিক শাসনের সময়ে পূর্ব ইউরোপের অনেক দেশেই ধর্মপ্রচার কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ১৯৮০-'র দশকে ইউরোপের সে অংশ তুলনামূলক উদার হয়ে উঠে। এ সময়েই মাদার তেরেসা মিশনারিস অফ চ্যারিটির কাজ পূর্ব ইউরোপ পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হন। কয়েক ডজন প্রকল্পের মাধ্যমে তার কাজ শুরু হয়েছিল। এ সময় গর্ভপাত এবং বিবাহবিচ্ছেদ-এর বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থানের কারণে অনেকে তার সমালোচনা করেন।
১৯৯১ সালে তেরেসা প্রথমবারের মত মাতৃভূমি তথা আলবেনিয়াতে ফিরে আসেন। এদেশের তিরানা শহরে একটি "মিশনারিস অফ চ্যারিটি ব্রাদার্স হোম" স্থাপন করেন।
১৯৯৬ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর ১০০ টিরও বেশি দেশে মোট ৫১৭টি ধর্মপ্রচার অভিযান পরিচালনা করছিলেন। মাত্র ১২ জন সদস্য নিয়ে যে সংঘের যাত্রা শুরু হয়েছিল সময়ের ব্যবধানে তা কয়েক হাজারে পৌঁছোয়। তারা সবাই বিভিন্ন দেশের প্রায় ৪৫০টি কেন্দ্রে মানবসেবার কাজ করে যাচ্ছিল। গরিবদের মধ্যেও যারা গরিব তাদের মাঝে কাজ করতো এই চ্যারিটি, এখনও করে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চ্যারিটির প্রথম শাখা প্রতিষ্ঠিত হয় নিউ ইয়র্কের ব্রঙ্ক্স বরোর দক্ষিণাঞ্চলে। ১৯৮৪ সালের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রে চ্যারিটির প্রায় ১৯টি শাখা সক্রিয়ভাবে কাজ করা শুরু করে।
চ্যারিটি দাতব্য কাজের জন্য যে অর্থ পেতো তার ব্যবহার নিয়ে বেশ কয়েকজন সমালোচনা করেছেন। ক্রিস্টোফার হিচেন্স ও স্টার্ন সাময়িকী সমালোচনা করে বলেছে, গরীবদের উন্নয়নের কাজে চ্যারিটিতে যত অর্থ আসে তার কিছু অংশ অন্যান্য কাজেও ব্যয় করা হয়।
১৯৮৩ সালে পোপ জন পল ২ এর সাথে দেখা করার উদ্দেশ্যে রোম সফরের সময় মাদার তেরেসার প্রথম হার্ট অ্যাটাক হয়। ১৯৮৯ সালে আবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর তার দেহে কৃত্রিম পেসমেকার স্থাপন করা হয়। ১৯৯১ সালে মেক্সিকোতে থাকার সময় নিউমোনিয়া হওয়ায় হৃদরোগের আরও অবনতি ঘটে। এই পরিস্থিতিতে তিনি মিশনারিস অফ চ্যারিটির প্রধানের পদ ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেন। কিন্তু চ্যারিটির নানরা গোপন ভোটগ্রহণের পর তেরেসাকে প্রধান থাকার অনুরোধ করে। অগত্যা তেরেসা চ্যারিটির প্রধান হিসেবে কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন।
মাদার তেরেসা ১৯৯৭ সালের ১৩ মার্চ মিশনারিস অব চ্যারিটির প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ান। অবশেষে বিশ্ব শান্তির অন্যতম পুরোধা মাদার তেরেসা ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
ছবি ও তথ্য – ইন্টারনেট

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝