শিরোনাম |
উপমহাদেশের কালজয়ী লোকসঙ্গীত শিল্পী আবদুল আলীমের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। প্রাইমারি স্কুলে পড়বার সময় গ্রামোফোন রেকর্ডে গান শুনে গান গাইবার জন্য আগ্রহ জন্মে। ছোটবেলায় তার সঙ্গীত গুরু ছিলেন সৈয়দ গোলাম আলী। ঐ অল্প বয়স হতেই বাংলার লোক সঙ্গীতের এই অমর শিল্পী গান গেয়ে নাম করেছিলেন। মাত্র তেরো বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে তার গানের প্রথম রেকর্ড হয়। রেকর্ডকৃত গান দুটি হলো "তোর মোস্তফাকে দে না মাগো" এবং "আফতাব আলী বসলো পথে"। এত অল্প বয়সে গান রেকর্ড হওয়া সত্যিই বিস্ময়কর। পরে তা আর বিস্ময় হয়ে থাকেনি, তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলার লোক সঙ্গীতের এক অবিসংবাদিত-কিংবদন্তি পুরুষ।
তিনি প্রায় ৫০ টি ছবিতে নেপথ্যে কন্ঠশিল্পী ছিলেন। যেমন- মুখ ও মুখোশ, এদেশ তোমার আমার, জোয়ার এলো, সুতরাং, পরশমনি, বেদের মেয়ে, রূপবান, সাত ভাই চম্পা, পদ্মা নদীর মাঝি, লালন ফকির, সুজন সখী ইত্যাদি।
বিখ্যাত কিছু গান : আমার দেশের মতন এমন, মেঘনার কূলে ঘর বান্ধিলাম, আর কতকাল ভাসবো আমি, সর্বনাশা পদ্মা নদীরে, আমার প্রাণের প্রাণ পাখি, কে যাও ভাটির দেশের নাইয়া, শোনো গো রূপসী কন্যা গো, দোল দোল দোলনি, প্রেমের মরা জলে ডোবে না, চিরদিন পুষলাম এক অচিন পাখি, ও যার আপন খবর, এই যে দুনিয়া কিসেরও লাগিয়া, কেনবা তারে সপে দিলাম, কে গো নিরালে বসি, বহুদিনের পিরিত গো বন্ধু, অসময় বাঁশি বাজায় কে রে, কেহই করে বেচাকেনা, মন ভোমরা মজলি না তুই, আল্লাহু আল্লাহু তুমি জাল্লে জালালুহু, নবী মোর পরশ মনি, দুয়ারে আইসাছে পালকি, পরের জায়গা পরের জমি, মনে বড় আশা ছিল যাব মদিনায়, আমারে সাজাইয়া দিও, দয়া করে এসো দয়াল, এই সুন্দর ফুল এই সুন্দর ফল, একূল ভাঙ্গে ওকুল গড়ে, ঘরে আমার মন বসে না, যারে ছেড়ে এলাম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বিনে, মাঝি বাইয়া যাও রে, নিরিখ বান্ধরে দুই নয়নে, নোঙ্গর ছাড়িয়া নায়ের দেরে দে মাঝি ভাই, রুপালী নদীরে, সে পারে তোর বসত, সব সখিরে পার করিতে, স্বরূপ তুই বিনে, থাকবো না আর এই আবেশে, থাকতে পার ঘাটাতে তুমি পারে নাইয়া, তোমার নাম লইয়া ধরিলাম পাড়ি, উজান গাঙ্গের নাইয়া, ওরে ও মাটির মানুষ।
আব্দুল আলীম ২৭ জুলাই, ১৯৩১ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার তালিবপুর গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। বাবার নাম মোহাম্মদ ইউসুফ আলী।
দেশ বিভাগের পরে আব্দুল আলীম ঢাকায় চলে আসেন এবং রেডিওতে স্টাফ আর্টিস্ট হিসেবে গান গাইতে শুরু করেন। তিনি পরে টেলিভিশন সেন্টার চালু হলে সেখানেও সঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন। এছাড়াও বাংলাদেশের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ সহ বিভিন্ন বাংলা চলচ্চিত্রে আব্দুল আলীম গান করেছেন। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রটি হলো ‘লালন ফকির’। সব মিলিয়ে প্রায় ৫০০টির মতো গান রেকর্ড হয়েছিল তার। আব্দুল আলীম তার আধ্যাত্মিক ও মরমী মুর্শিদী গানের জন্য অমর হয়ে থাকবেন। পেশাগত জীবনে আবদুল আলীম ছিলেন ঢাকা সঙ্গীত কলেজের লোকগীতি বিভাগের অধ্যাপক।
আব্দুল আলীম বেশ কয়েকটি জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন; এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : একুশে পদক (১৯৭৭, মরণোত্তর), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৯৭, মরণোত্তর), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ গায়ক ; সুজন সখী) (১৯৭৫, মরণোত্তর), প্রেসিডেন্ট প্রাইড অব পারফরম্যান্স পুরস্কার(১৯৬০), বাচসাস (শ্রেষ্ঠ গায়ক ; লালন ফকির)(১৯৭২-১৯৭৩), পূর্বাণী চলচ্চিত্র পুরস্কার (শ্রেষ্ঠ গায়ক : সুজন সখী)(১৯৭৫, মরণোত্তর), চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (২০২১, মরণোত্তর), চিত্রালী চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৭৫, মরণোত্তর।
আব্দুল আলীম ৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৪ সালে ৪৩ বছর বয়সে ঢাকার পিজি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।
ছবি ও তথ্য – ইন্টারনেট