gramerkagoj
রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের রাতব্যাপী সংঘর্ষ, আহত ১৫৫
প্রকাশ : বুধবার, ৪ সেপ্টেম্বর , ২০২৪, ১২:১৯:০০ পিএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2024-09-04_66d801121bafb.jpg

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় ১৫৫ জন আহত হয়েছে। এসময় উভয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের চারটি বাস এবং বিএম কলেজের প্রশাসনিক ভবনসহ ক্যাম্পাসে ব্যাপক ভাংচুর চালানো হয়।
মধ্যরাত সাড়ে ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত চলে এ সংঘর্ষ। এতে আহত হওয়ার ঘটনা স্বীকার করেছেন বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, সহপাঠীদের মারপিটের খবর পেয়ে রাত ১২টা নাগাদ বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০/৫০ জন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বাসে করে সেখানে গেলে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা সেই বাসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর ও চালকসহ ১৫/২০ জনকে আহত করে। সহপাঠীদের মারধর করার খবর পৌঁছালে বাস-ট্রাক বোঝাই হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারের বেশি শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে বরিশাল নগরীর বাংলাবাজার এলাকায় জড়ো হয়। সেখান থেকে আরো প্রায় ২ কিলোমিটার হেঁটে তারা বিএম কলেজে গিয়ে হামলা চালায়। এসময় সাথে করে ট্রাকভর্তি পাথর, বেশ কয়েকটি থ্রি হুইলার ভর্তি ইটের টুকরা, লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে যায় ববি শিক্ষার্থীরা। এছাড়া সবার হাতেই ছিল রড পাইপ লাঠি আর ধারালো অস্ত্র।
রাত ১টা থেকে পৌনে ৩টা পর্যন্ত বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে প্রশাসনিক ভবন, আবাসিক তিনটি হল এবং শ্রেণিকক্ষে ব্যাপক ভাংচুর চালায় তারা। হামলার প্রথম পর্যায়ে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা পাল্টা হামলা চালানোর চেষ্টা করলেও সংখ্যায় অনেক কম হওয়ায় খুব বেশিক্ষণ টিকতে পারেনি। এরপর বিএম কলেজের পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ববি শিক্ষার্থীরা। ভাঙচুর চালানো হয় আবাসিক হলগুলোর প্রায় সব কক্ষ। প্রশাসনিক ভবনেও চালানো হয় তাণ্ডব। ভাঙচুর করা হয় কলেজের ৪টি বাস। রাত পৌনে ৩টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা। প্রায় ১ ঘণ্টা চেষ্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় তারা। তবে বিএম কলেজের আশেপাশে তখনও হামলা পাল্টা হামলার খবর পাওয়া যাচ্ছিলো। সংঘর্ষে উভয়পক্ষের প্রায় শতাধিক আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান।
এদের মধ্যে ৩০ জনকে প্রথম পর্যায়ে বরিশাল শেরে বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলা চালাতে গিয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ জন শিক্ষার্থী বিএম কলেজের ভেতরে আটকা পড়ে এবং তাদের কোন সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না বলে ভোরে সেনাবাহিনীকে জানায় ববি শিক্ষার্থীরা। সকাল ১০টায় পর্যন্ত বিএম কলেজ এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। সেনাবাহিনীর বিপুল সংখ্যক সদস্য পুরো এলাকা ঘিরে রেখেছে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডে এক পক্ষ বাড়ি দখল করতে ভাড়া করে নিয়ে গিয়েছিল বিএম কলেজের সমন্বয়ক পরিচয় দেওয়া মোস্তাফিজুর রহমান রাফিকে। সেখানে গিয়ে রাফি ও তার সাথে থাকা লোকজন বাড়ির মূল মালিকদের উপর হামলা করে। সেখানে হামলার শিকার হয় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী জোয়া। খবর পেয়ে ওই রাতেই ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে হামলার কারণ জানতে চায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। এসময় তাদের উপরও হামলার চেষ্টা করে রাফি। পরে থানায় জিডি করেন জোয়া।
মঙ্গলবার রাত ১০টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে নগরীর বটতলা এলাকায় পেয়ে বেধড়ক মারধর করে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা, এই দুই ঘটনা মিলেই ঝামেলা হয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের দাবী তাদের ৬ জন শিক্ষার্থীকে আটকে রেখেছিলো বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা, পাশাপাশি বাসও ভাঙচুর করা হয়েছে। সশস্ত্র হামলায় অনেকে আহত হয়েছে। পরে বিএম কলেজে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র উদ্ধারের দাবী জানিয়েছে সেনাবাহিনীর কাছে।
বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা জানান, বেশ কয়েকদিন যাবত এক মহিলা বিএম কলেজে এসে সমন্বয়কদের সহায়তা চাচ্ছিলেন তার বাড়ি দখল করা হয়েছে জানিয়ে। তো সেই অনুরোধের প্রেক্ষিতে সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান ওই মহিলার বাড়িতে তার প্রতিপক্ষের সাথে আলোচনার জন্য যান। তবে বাড়িতে যাওয়ার সাথে সাথেই বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পরিচয় দেওয়া জোয়া সমন্বয়কদের গালাগাল করে। পরে জোয়া তার বন্ধুকে কল করলে সে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাস ভরে ঘটনাস্থলে এসে বিএম কলেজের সমন্বয়কের উপর হামলা চালায়।
তারা আরও জানায়, মঙ্গলবার রাত ১০টায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্র বটতলা এলাকায় চাঁদাবাজি করা অবস্থায় হাতেনাতে আটক করে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের আটক করায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের উপর হামলা চালিয়েছে। আমাদের তিনটি বাস, প্রশাসনিক ভবন, ক্লাসরুম, তিনটি হলে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান ডক্টর উন্মেষ রয় জানান, হামলায় বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছে। এখন ৩৩ জনের মত ভর্তি রয়েছে। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ফিরে গিয়েছেন।
এদিকে সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে বিএম কলেজ এলাকা ত্যাগ করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া নিখোঁজ থাকা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬ শিক্ষার্থীকে বুঝে পেয়েছে ভারপ্রাপ্ত ভিসি মুহসীন উদ্দিন।
বিএম কলেজ অধ্যক্ষ আমিনুল হক ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত ভিসি মুহসীন উদ্দিনের যৌথ স্বাক্ষরিত একটি বিবৃতি বুধবার সকাল ৮টায় সাংবাদিকদের কাছে আসে।
সেখানে উল্লেখ করা হয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি বিএম কলেজে যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সে সকল ব্যয় তারা বহন করবে এবং বিএম কলেজ কর্তৃপক্ষ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় শিক্ষার্থীকে বুঝে নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই ছয় শিক্ষার্থী বিএম কলেজে হামলা করতে গিয়ে বিএম কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছে আটক হয়। তাদের কলেজের কেন্দ্রীয় মসজিদে রাতভর আটকে রাখা হয়, পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝