শিরোনাম |
বরেণ্য সংগীতশিল্পী, সুরকার ও স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক অজিত রায়ের মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি প্রথীতযশা কন্ঠ শিল্পী ও সঙ্গীতজ্ঞ হিসেবে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ভুবনে অত্যন্ত পরিচিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে চার দশক কালেরও অধিক সময় ধরে তার দৃপ্ত পদচারণায় মুখরিত ছিল সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল।
অজিত রায় ২৯ জুন, ১৯৩৮ সালে কুড়িগ্রাম জেলার সোনালুর কুঠি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার মায়ের নাম কণিকা রায়। বৈবাহিক সূত্রে বুলা রায় তার সহধর্মিনী। তাদের সংসারে শ্রেয়শী রায় মুমু নামে এক কন্যা এবং রোমাঞ্চ রায় নামে এক পুত্র সন্তান রয়েছে।
অজিত রায় ১৯৫৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পাশ করে রংপুর কারমাইকেল কলেজে ভর্তি হন। কৈশোরেই তবলা বাজানো শিক্ষা গ্রহণ করেন। পাশাপাশি, তাকে গানে হাতে খড়ি দিয়েছেন তার মা কণিকা রায়। গান শেখার প্রেরণা ছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন। এরপর ১৯৬৩ সাল থেকে রেডিওতে গান গাইতে শুরু করেন। পরে টেলিভিশন প্রচলনের পর থেকে সেখানেও গান গেয়েছেন তিনি। ষাটের দশকের মাঝামাঝি সময়কাল হতে প্রতি বছর ভাষা আন্দোলনের বিশেষ দিন হিসেবে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে স্মরণ করে একটি করে নতুন গান করে আসছিলেন। এই রকমই একটি গান হলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম রচিত বিদ্রোহী কবিতায় আলতাফ মাহমুদের সুর করা গান।
অজিত রায় ১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে ‘চ’ গীতিনাট্যে আনন্দর ভূমিকায় অভিনয় করে ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন। ১৯৭১ সালে তিনি স্বাধীনবাংলা বেতারে যোগ দেন। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ বেতারে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৯৬ সালে অবসর নেন। বেতারে গান গেয়ে, শিখিয়ে ও শ্রেষ্ঠ গায়কদের দিয়ে বিশুদ্ধরূপে রেকর্ড করিয়ে, চলচ্চিত্রে বিন্যাসসহ সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে প্রয়াস পেয়েছেন।
তাঁর উল্লেখযোগ্য গানগুলো হলো ‘একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার’, ‘আমি যুগে যুগে আসি’ ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে’ প্রভৃতি। সঙ্গীতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে পেয়েছেন ‘বেগম রোকেয়া পদক’, ‘সিকোয়েন্স পদক’, ‘শব্দসৈনিক পদক’, ‘ঋষিজ পদক’, ‘রবিরশ্মি পদক’ সহ অনেক পুরস্কার।
অজিত রায় ১৯৮৭ সালে বিশ্বভারতী আয়োজিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১২৫তম জন্মজয়ন্তীতে আমন্ত্রিত হয়ে তিনি কলকাতায় সংগীত পরিবেশন করেন। তারই উদ্যোগে ১৯৯০ সালে ঢাকায় শুদ্ধ সংগীতচর্চার সংগঠন ‘অভ্যুদয় সংগীত অঙ্গন’ যাত্রা শুরু করে। তিনি ২০০০ সালে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত হন। এছাড়া তিনি দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে পুরস্কার পান।
অজিত রায় বেশ কিছুদিন ধরে ফুসফুস সংক্রমণ ব্যাধিতে ভুগছিলেন। ঢাকার বারডেম হাসপাতালে ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১১, রোববার দুপুর ১:০৫ মিনিটে তিনি শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।