শিরোনাম |
অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ার শঙ্কায় ভুগছেন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের অন্তর্ভুক্ত দলগুলোর নেতারা। জোটের প্রধান দল আওয়ামী লীগের বিপর্যয় ও অস্তিত্বহীন পরিস্থিতি তাদেরকে ভয়, আতঙ্ক ও হতাশার মধ্যে নিয়ে গেছে। বর্তমানে এই দলগুলোর নেতা কর্মীরা কেউ দলীয় কার্যালয়ে যান না। আত্মরক্ষার পাশাপাশি নিজেদের দলের ভবিষ্যৎ কী হবে, অস্তিত্বে ফিরে আসা সম্ভব হবে কিনা বা কত দিনে সেটা সম্ভব হবে সেটাই এখন এই জোটের দলগুলোর নেতাদের প্রধান ভাবনা।
এই জোটের অন্যতম দুই দলের দুই শীর্ষ নেতা রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করছেন। ফলে তাদের মধ্যে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।
জোটের শরিক দলগুলোর একাধিক সূত্র জানায়, গত ৫ আগস্টের পর থেকে এখনও এ দলগুলোর অনেক নেতা আত্মগোপনে রয়েছেন ৷ বিশেষ করে যারা ১৪ দল এবং নিজ নিজ দলের রাজনীতিতে সক্রিয় ও সামনের সারিতে ছিলেন ৷ অনেকে চুপচাপ থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন ৷ আবার অনেকে মামলায় জড়িয়ে পড়ার ভয়ে আছেন ৷
কারণ, ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে একাধিক মামলায় ১৪ দলের তিন নেতাও রয়েছেন।
তারা হলেন - ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদের সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি।
রাশেদ খান মেনন ও হাসানুর হক ইনু এখন গ্রেপ্তার হয়ে রিমান্ডে আছেন। সাবেক মন্ত্রী, এমপি ও নেতাদের নামে মামলা দেওয়া অব্যাহত রয়েছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও উপদেষ্টারা গত শনিবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। ওই বৈঠকে ১৪ দলের অন্তর্ভুক্ত কোনো দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
এই প্রতিকূল পরিস্থিতি দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কী হবে, দল কীভাবে টিকবে বা এই রাজনৈতিক সংকটপূর্ণ মুহূর্তে দলের নেতাকর্মীদের ভূমিকা কী হবে সে বিষয়ে এ দলগুলোর নেতারা কেউ কিছু বলতে পারছেন না ৷ ওই সব নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগও করা সম্ভব হচ্ছে না ৷ দু-একজনের সঙ্গে কথা হলেও তারা নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারছেন না বা প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছেন না ৷ তবে এই মুহূর্তে চুপ থাকাই ভালো বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেন ৷ আবার এই মুহূর্তে চুপ থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখার কৌশলও নিয়েছেন অনেকে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ ও দেশ ছেড়ে ভারতে যাওয়ার পর আওয়ামী লীগের মতো এ জোটভুক্ত দলগুলোও এখন মারাত্মক সংকটে পড়েছে। প্রায় এক মাস অতিবাহিত হওয়ার পর বর্তমান প্রেক্ষাপটে জোটের দলগুলোর নেতাকর্মীরা আত্মোপলব্ধি করতে শুরু করেছেন ও নিজেদের দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা-ভাবনায় আছেন।
ভবিষ্যতে দল অস্তিত্ব নিয়ে উঠে দাঁড়াতে পারবে কি না কোনো কোনো দলের নেতাকর্মীদের সেই আশঙ্কাও রয়েছে।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদের (পূর্ণাঙ্গ) ও চতুর্থ মেয়াদের ৭ মাসের সরকারের প্রথম দুটিতে জোটের কয়েকটি দলের নেতারা মন্ত্রীসভায় ছিলেন। প্রথম সরকারের মন্ত্রী হয়েছিলেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, দ্বিতীয় সরকারের মন্ত্রীসভায় ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন, জাসদের হাসানুল হক ইনু, জাতীয় পাটির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
এই জোট থেকেই নির্বাচন করে রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সংসদ সদস্য হন। এছাড়া জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার, ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারিসহ এই দলগুলো থেকে আরও কয়েক জন নবম, দশম ও একাদশ সংসদে এমপি হয়েছিলেন।
মঞ্জু ছাড়া এরা সবাই আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। ন্যাপ ও গণতন্ত্রী পার্টি থেকে একজন করে সংরক্ষিত মহিলা আসনেরর সদস্য করা হয় নবম সংসদে।
সদ্য বিলুপ্ত দ্বাদশ সংসদে রাশেদ খান মেনন, জাসদের রেজাউল করিম তানসেন এমপি ছিলেন। আর সংরক্ষিত মহিলা আসনে গণতন্ত্রী পার্টির এক জন এমপি ছিলেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হাসানুর হক ইনু, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ফজলে হোসেন বাদশা জোট থেকে অংশ নিলেও নির্বাচিত হতে পারেননি।
একসঙ্গে আন্দোলন, নির্বাচন ও সরকার গঠনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গত ২০০৫ সালে ১৪ দলের যাত্রা শুরু হয়। দলগুলোর নেতাকর্মীরা মনে করছেন এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ বা দলটির সরকারের ব্যর্থতার দায় এ দলগুলোকেও বহন করতে হচ্ছে।