gramerkagoj
বুধবার ● ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২ মাঘ ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
চিত্রশিল্পী মুস্তফা মনোয়ারের জন্মবার্ষিকী আজ
প্রকাশ : রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর , ২০২৪, ১১:৫৭:০০ এএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2024-09-01_66d3ffecdcf47.jpg

প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের জন্মদিন আজ। চারুশিল্পী, নাট্যনির্দেশক, শিল্প গবেষক- একসঙ্গে তিনি অনেক গুণের অধিকারী। সৃজনকর্মে গোটা দেশকেই ‘গৌরবান্বিত’ করেছেন সব্যসাচী এই শিল্পী। বাংলাদেশে পাপেট চর্চার অন্যতম প্রাণপুরুষ মুস্তাফা মনোয়ার।
মুস্তাফা মনোয়ার ১ সেপ্টেম্বর, ১৯৩৫ সালে মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার অন্তর্গত নাকোল গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈত্রিক নিবাস ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা থানার মনোহরপুর গ্রামে। তাঁর বাবা প্রয়াত কবি গোলাম মোস্তফা এবং মায়ের নাম জমিলা খাতুন। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে মুস্তাফা মনোয়ার সবার ছোট। ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রামের মেয়ে মেরীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।
মুস্তফা মনোয়ার শিল্পকলার উদার ও মহৎ শিক্ষক হিসেবে নিজেকে মেলে ধরা, দ্বিতীয় সাফ গেমসের মিশুক নির্মাণ এবং ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনের লালরঙের সূর্যের প্রতিরূপ স্থাপনাসহ শিল্পের নানা পরিকল্পনায় তিনি বরাবর তাঁর সৃজনী ও উদ্ভাবনী প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন।
মুস্তাফা মনোয়ার প্রথম ভর্তি হয়েছিলেন কলকাতার শিশু বিদ্যাপীঠে। পরবর্তী সময়ে নারায়ণগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন এবং কলকাতায় গিয়ে স্কটিশ চার্চ কলেজে ভর্তি হন। কিন্তু সেখানে তিনি পড়াশোনা না করে কলকাতা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে কলকাতা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় থেকে ফাইন আর্টসে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন। পরবর্তীতে তাঁর বাবা হুগলি থেকে বাকুড়া হয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
দেশে আসার পর প্রথমে ফরিদপুর তারপর স্থায়ীভাবে ঢাকার শান্তিনগরে বাড়ি কিনলেন। মুস্তফা মনোয়ার মাতৃহীন ছিলেন বলে নারায়ণঞ্জে মেজ বোনের বাড়িতে আশ্রয় গাড়েন। নারায়ণগঞ্জ স্কুলে নবম শ্রেণীতে পড়াকালীন তিনি বাংলাদেশের ভাষা আন্দোলনের কথা শোনেন।
ঢাকায় গুলি হয়েছে, বাঙালি শহীদ হয়েছে, পাকিস্তানিরা বাংলা ভাষা বন্ধ করে দিতে চায়। এই প্রেক্ষাপটে ছবি আঁকতে শুরু করেন এবং সেই ছবি বন্ধুদের সঙ্গে সারা নারায়ণগঞ্জ শহরের দেয়ালে দেয়ালে সেঁটে দেন। যার ফলে পুলিশ এসে তাঁর দুলাভাইসহ তাঁকে বন্দী করে ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে পাঠিয়ে দেয়।
দেশের চিত্রশিল্পে স্বতঃস্ফূর্ত পদচারণা রয়েছে মুস্তাফা মনোয়ারের। বাংলাদেশে পাপেটের বিকাশ ও টেলিভিশন নাটকে তার কৃতিত্ব অতুলনীয়। ছবি আঁকার কারণে কিশোর বয়সে কারাবরণ করতে হয়েছিল তাকে। পরে এই ছবি আঁকাকেই জীবনের ধ্যান-জ্ঞানে পরিণত করেছেন তিনি।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি ভারতে অবস্থানকালীন বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ প্রবাসী সরকারের সাংস্কৃতিক দলের নেতৃত্ব দেন এবং স্বাধীনতার স্বপক্ষে জনমত গঠনে কাজ করেন।
ভিন্ন চিন্তা ও সৃজনকর্মে অজন্ম তিনি সাধনা করে চলেছেন। যা শিল্প-সৃজনে নতুন এক মাত্রা প্রতিষ্ঠা করেছে। তাঁর হাত দিয়ে ক্যানভাসে যে তুলির আঁচড় পড়েছে, তাও হয়েছে প্রশংসিত। কলকাতা আর্ট কলেজের কৃতী এই ছাত্র সঙ্গীতেও সমান পারদর্শী।
দ্বিতীয় সাফ গেমসের মিশুক নির্মাণ এবং ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পেছনের লাল রঙের সূর্যের প্রতিরূপ স্থাপনসহ শিল্পের নানা শাখায় সৃজনশীলতার স্বাক্ষর রেখেছেন তিনি। টেলিভিশনে নতুন ধরনের অনুষ্ঠান নির্মাণেও মুস্তাফা মনোয়ার অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৭২ সালে বিটিভি থেকে প্রচারিত শিশু প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে জনপ্রিয় ‘নতুন কুঁড়ি’র রূপকার তিনি।
মুস্তাফা মনোয়ার বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপ-মহাপরিচালক, শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক, জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিভিশন, ঢাকা’র জেনারেল ম্যানেজার এবং এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি জনবিভাগ উন্নয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান এবং এডুকেশনাল পাপেট ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
সেই ছাত্রজীবন থেকে পুরস্কার পাওয়ার যে শুরু, তা জীবনভর চলে। ১৯৫৭ সালে কলকাতার অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস আয়োজিত নিখিল ভারত চারু ও কারুকলা প্রদর্শনীতে গ্রাফিক্স শাখায় শ্রেষ্ঠ কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে স্বর্ণপদক লাভ করেন তিনি। ১৯৫৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র চারুকলা প্রদর্শনীতে তেলচিত্র ও জলরঙ শাখার শ্রেষ্ঠ কর্মের জন্য দুটি স্বর্ণপদক পান। চারুকলার গৌরবময় অবদান ও কীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০৪ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক-এ ভূষিত হন তিনি। ১৯৯০ সালে টিভি নাটকের ক্ষেত্রে অবদানের জন্য টেনাশিনাস পদক লাভ করেন।
চিত্রশিল্প, নাট্য নির্দেশক এবং পাপেট নির্মাণে অবদানের জন্য শিশুকেন্দ্র থেকে ২০০২ সালে বিশেষ সম্মাননা লাভ করেন। ১৯৯২ সালে চারুশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৯৯ সালে শিশু শিল্পকলা কেন্দ্র কিডস কালচারাল ইন্সটিটিউট, চট্টগ্রাম কর্তৃক কিডস সম্মাননা পদক-১৯৯৯-এ ভূষিত হন। ২০০২ সালে চারুকলা ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ঋষিজ শিল্পী গোষ্ঠী কর্তৃক ঋষিজ পদক-২০০২-এ ভূষিত হন। এছাড়া তিনি আরও বহু পুরস্কার-সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝