gramerkagoj
শনিবার ● ১৭ মে ২০২৫ ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
gramerkagoj

❒ নিজেই অ্যানেসথেসিয়া দেন অধ্যাপক ডাক্তার নজরুল

পঙ্গুসেবা কেন্দ্রে পায়ের অপারেশনের পর রোগীর মৃত্যু, স্বজনদের হট্টগোল
প্রকাশ : বুধবার, ৩১ জুলাই , ২০২৪, ১২:১৩:০০ এএম
আশিকুর রহমান শিমুল:
GK_2024-07-31_66aa63863f32f.jpg

যশোর শহরের জেল রোডের পঙ্গু সেবা কেন্দ্রে অপচিকিৎসায় রসুল ওরফে রাসেল নামে এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি সদর উপজেলার হাশিমপুর গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে। এ ঘটনায় বুধবার বেলা ১২টার দিকে ওই প্রতিষ্ঠানে রোগীর স্বজনরা চড়াও হয়ে হট্টগোল করেন। পরে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীর কোনো বিল না নিয়ে তড়িঘড়ি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে রোগীকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
সূত্র জানায়, তিন মাস আগে একটি দুর্ঘটনায় রসুল ওরফে রাসেলের বাম পা ভেঙে যায়। এরপর সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে তিনি চিকিৎসা নিয়েছেন। সর্বশেষ কিছুদিন আগে পঙ্গু সেবা কেন্দ্রে আসলে অধ্যাপক ডাক্তার নজরুল ইসলাম তাকে অপারেশনের পরামর্শ দেন। ৩০ জুলাই বিকেল ৪টার দিকে রোগী অপারেশনের জন্য ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হন। রাতেই তার অপারেশন সম্পন্ন হয়। ৩১ জুলাই ভোর রাতেই তার মৃত্যু হয়। পায়ের সামান্য অপারেশনে রোগী মৃত্যুর ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার।
মৃতের স্বজনদের অভিযোগ, অপারেশনের আগে রোগীর কোনো শারীরিক সমস্যা ছিলনা। রোগী জ্ঞান ফেরার সাথে সাথেই ছটফট শুরু করেন। ওয়ার্ডে দায়িত্বরত সেবিকাদের একাধিকবার ডাক্তারকে ডাকতে অনুরোধ করেন তারা। কিন্তু, তারা কোনো গুরুত্ব দেয়নি। তাদের বলা হয়েছে ডাক্তার অপারেশন কক্ষে কাজ করছেন। এখন কোনো রোগী দেখতে আসতে পারবেন না। পরে রোগীর স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে সাব্বির হোসেন নাকে এক মেডিকেল অফিসার এসে রোগী দেখেন। এ সময় ওই ডাক্তার জানান রোগীর কোনো সমস্যা নেই। অপারেশনের পর জ্ঞান ফিরলে এমন হয়। কিছু সময় পর ঠিক হয়ে যাবে। এর কিছু সময় পর রোগীর মৃত্যু হয়। এ সময় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাদের হাসপাতাল ছাড়তে চাপ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারাই অ্যাম্বুলেন্স ডেকে নিয়ে এসে রোগীকে তাতে তুলে দেয়।
অপর একটি সূত্র জানায়, পঙ্গু সেবা হাসপাতালে কোনো অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার নেই। অধ্যাপক নজরুল ইসলাম নিজেই রোগীদের অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে থাকেন। এছাড়াও, তিনি হাত পা ভাঙা রোগীদের পুরাতন প্লেট লাগিয়ে দিয়ে আদায় করেন নতুন প্লেটের টাকা। অধ্যাপক ডাক্তার নজরুল ইসলামের মালিকানাধীন অপর একটি প্রতিষ্ঠান রোকেয়া ক্লিনিকে হাফিজা বেগম নামে একজর রোগী অপচিকিৎসার শিকার হন। একটি দুর্ঘটনায় ২৮ এপ্রিল হাফিজা বেগমের ডান হাত ভেঙে যায়। এ সময় ৩৫ হাজার টাকার বিনিময়ে অধ্যাপক ডাক্তার নজরুল তার অপারেশন করান। পরবর্তীতে সুস্থ হওয়ার পরিবর্তে তার হাতে পচন শুরু হয়। পরিবারের লোকজন তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করলে জানানো হয় অপচিকিৎসার শিকার হয়েছেন ওই নারী। তার হাত কেটে ফেলতে হবে। কারণ হাত ভাঙা জয়েন্টে নতুনের পরবির্তে অন্য রোগীর ব্যবহার করা পুরাতন প্লেট লাগানো হয়েছে। যার কারণে হাতে পচন ধরেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ছেলে আশিকুর রহমান সিভিল সার্জনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠান বা ডাক্তারের বিরুদ্ধে আজও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি স্বাস্থ্য বিভাগ। অধ্যাপক ডাক্তার নজরুল ইসলামের মালিকানাধীন পঙ্গু সেবা কেন্দ্র ও রোকেয়া ক্লিনিকে একাধিক রোগী হাফিজা বেগমের মতো অপচিকিৎসার শিকার হয়ে পাত-পা হারিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
রসুল ওরফে রাসেলের অপারেশনের সময় কোন অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার উপস্থিত ছিলেন জানতে চাইলে ডাক্তার নজরুল ইসলাম বলেন, তার প্রতিষ্ঠানে কোনো অ্যানেসথেসিয়া ডাক্তার নেই। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে তিনি অ্যানেসথেসিয়া দিয়ে আসছেন। রোগী মৃত্যুর ব্যাপারে জানতে চাইলে বলেন, রোগীর আর্থিক অবস্থা ভালো না, কিভাবে চিকিৎসা হবে এই টেনশনে মনে হয় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তিনি কোনো অপচিকিৎসা করেননি। কেননা, অপারেশনের পরও রোগী সুস্থ স্বাভাবিক ছিলেন।

 

আরও খবর

🔝