শিরোনাম |
❒ সাধারণ সম্পাদক হাসান আলীর আত্মীয়করণ!
❒ পদত্যাগ করতে পারেন অনেকে
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের মেয়াদোত্তীর্ণ নেতারা করলেন পূর্ণাঙ্গ কমিটি।
কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার উদ্যোগ নেওয়া হয় দুই সদস্যের কমিটির মেয়াদকাল সাড়ে চার বছরের মাথায় এসে। পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশের পর শুরু হয় নানা বিতর্ক। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে পদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী তার ছেলে ও তিন শ্যালককে দিয়েছেন বড় বড় পদ। একইসাথে পদ বন্টনেও মানা হয়নি সিনিয়র-জুনিয়র। মঙ্গলবার রাতে এই কমিটি প্রকাশ করা হয়।
কমিটিতে স্থান পাওয়া বেশ কয়েকজন নেতা অসন্তোষ প্রকাশ করে পদত্যাগ করার কথা ভাবছেন।
দীর্ঘ ১৫ বছর পর ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে সাবেক সংসদ সদস্য রণজিত কুমার রায়কে পূনরায় সভাপতি ও আগের কমিটির যুগ্ম সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা হাসান আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে আংশিক কমিটি ঘোষিত হয়। সে সময় নবনির্বাচিত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ১৫ দিন সময় বেধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে নির্দেশনা মানেননি কেউই। জেলা কমিটি বারবার তাগিদ দিলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ব্যর্থ হন সভাপতি-সম্পাদক।
এর আগে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই রাতে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন স্বাক্ষরিত বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করা হয়। যেখানে স্বাক্ষর ছিল না জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিতর্কের ঝড় উঠলে দুইদিন পর ২ আগস্ট দলের কেন্দ্রীয় কমিটির খুলনা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হকের ধানমন্ডির অফিসে আহূত এক জরুরি সভায় কথিত ওই কমিটি বাতিল করা হয়।
এদিকে অভিযোগ উঠেছে আগে কখনো আওয়ামী লীগ করেননি, কিংবা বাঘারপাড়ার রাজনীতিতে কখনো দেখা মেলেনি; এমন ব্যক্তিকে সহসভাপতিসহ সম্পাদকীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে।
সেক্রেটারি হাসান আলীর ছেলে এনামুল কবীর লিটনকে দেওয়া হয়েছে কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক। দুই পক্ষের দুই শ্যালক মারুফ হোসেনকে সহসভাপতি ও শ্যালক মনিরুজ্জামান তরুণকে দেওয়া হয়েছে দপ্তর সম্পাদকের পদ। অপর শ্যালক কবীর খান জামান পেয়েছেন ২ নম্বর সহসভাপতির পদ। এনামুল কবীর লিটন, মারুফ হোসেন ও কবীর খান জামান আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কখনোই সক্রিয় ছিলেন না।
এদিকে, পূর্ণাঙ্গ এ কমিটি গঠনে মানা হয়নি সিনিয়র-জুনিয়র। সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে জহুরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দিলু পাটোয়ারিকে। রাজনীতিতে দিলুর চেয়ে অনেক সিনিয়র উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রউফ মোল্যাকে দেওয়া হয়েছে ২ নম্বর যুগ্ম সম্পাদকের পদ।
এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে আব্দুর রউফ মোল্যা বলেন, ‘আমাকে অসম্মান করা হয়েছে। জুনিয়র একজন ছেলেকে ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে আমাকে ২ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায়না। এই কমিটিতে থাকবো, নাকি থাকবো না-সে ব্যাপারে আমার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানাবো’।
এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা হাসান আলীর শ্যালক মনিরুজ্জামান তরুণকে দপ্তর সম্পাদকের পদ দিয়ে সহ-দপ্তর সম্পাদক করা হয়েছে অপেক্ষাকৃত সিনিয়র নেতা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দুর্দিনের নেতা নজরুল ইসলামকে।
এ প্রসঙ্গে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে এটা একটা পকেট কমিটি। এই কমিটির প্রথম বর্ধিত সভায় সবার সামনে আমি পদত্যাগ পত্র জমা দেবো’।
আগের কমিটি সাংগঠনিক সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক নজরুল ইসলামকে দেওয়া হয়েছে ৮ নম্বর সহ-সভাপতির পদ। অথচ ৭ নম্বর সহ-সভাপতি করা হয়েছে সেক্রেটারি হাসান আলীর শ্যালক মারুফ হোসেনকে। বাঘারপাড়ার রাজনীতিতে মারুফ হোসেনকে কোনদিন দেখা যায়নি’।
নজরুল ইসলাম অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘ত্যাগীদের মূল্যায়ন করা হয়নি। একইসাথে সিনিয়রদের অসম্মান করা হয়েছে’।
এদিকে পদ দেওয়া হয়নি অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব বীরমুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ কুমার অধিকারীসহ বেশ কয়েকজন সাবেক ছাত্রনেতাকে।
অথচ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন এক সময়ের বিএনপির তুখোড় নেতা, বীরমুক্তিযোদ্ধা খন্দকার সহিদুল্লাহ। খন্দকার সহিদুল্লাহর আপন ভাই খন্দকার আসাদুজ্জামান ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি ও আপন ভাতিজা খন্দকার মেহেদী হাসান পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক।
রাজনীতিতে সক্রিয় উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নাজমুল হুসাইন নান্নু এই কমিটিতে স্থান পাননি। অথচ লন্ডন প্রবাসী মেহেদী হাসান টিটোকে দেওয়া হয়েছে শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদকের পদ।
এ প্রসঙ্গে নাজমুল নাজমুল হুসাইন নান্নু বলেন, ‘ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে যাদের নেতা বানিয়েছি তাদের মধ্যে কেউ কেউ উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। অথচ আমি পাইনি। আমি টাকা দিতে পারিনি, তাই হয়তো নাম রাখেননি কমিটিতে। এখন থেকে আর দলীয় প্রোগ্রামে উপস্থিত হব না’।
উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ৯০ দশকের ছাত্রনেতা আলমগীর সিদ্দিকীকে রাখা হয়েছে ৩৩ নম্বর সদস্য পদে। অথচ বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক পদে বসানো হয়েছে মুকুল রেজাকে। মুকুল যশোরের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। জন্মস্থান বাঘারপাড়া উপজেলায় হলেও স্থানীয় রাজনীতিতে কখনো দেখা যায়নি তাকে।
সাবেক ছাত্রনেতা আলমগীর সিদ্দিকী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাকে অসম্মান করা হয়েছে। সেক্রেটারি হাসান আলী এই কমিটি গঠনে আত্মীয়করণ করেছেন। একইসাথে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে অপরিচিত ও জুনিয়রদের বড় বড় পদ দিয়েছেন’। পদত্যাগ করার আভাস দেন সাবেক এই তুখোড় ছাত্রনেতা।
এ ব্যাপারে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বীরমুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অর্থের বিনিময়ে কমিটিতে নাম লেখানোর বিষয়টি সত্য নয়। আত্মীয়করণ নয়, যোগ্যতা অনুযায়ী কমিটিতে নাম দেয়া হয়েছে’।