gramerkagoj
রবিবার ● ১৩ জুলাই ২০২৫ ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
gramerkagoj

❒ যশোরে মোড়ে মোড়ে সতর্ক অবস্থানে পুলিশ

লাঠিচার্জ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ পন্ড আহত ১০, আটক ৭
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ১ আগস্ট , ২০২৪, ১২:০২:০০ এএম
দেওয়ান মোর্শেদ আলম:
GK_2024-07-31_66aa5d1c9deeb.jpg

চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ৯ দফা দাবিতে বুধবার যশোরে চলা শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ থেকে যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য মোড়ে মোড়ে কঠোর সতর্কাবস্থানে ছিল পুলিশ। মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ পালনের সময় তারা ব্যারিকেড ভেঙে এগুতে চাইলে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে কমপক্ষে ১০ জন শিক্ষার্থীকে আহত করেছে। তবে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে লাঠিচার্জ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আন্দোলনকারীদের।
এতে আহত ৫ জন শিক্ষার্থীকে যশোর জেনারেল হাপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। এছাড়া আন্দোলন কর্মসূচি থেকে একজন সমন্বয়কারীসহ ৭ জনকে আটক করা হয়েছে বলেও অভিযোগ তাদের। আটককৃতরা হচ্ছেন আমান উল্লাহ নামে যশোর সরকারি এমএম কলেজের একজন সমন্বয়ক, সরকারি সিটি কলেজসহ অপর একটি কলেজের ছাত্র রনি, আকাশ, রানা, তৌহিদুল, রিয়াজুল ও ইব্রাহিম। আর পুলিশের লাঠিচার্জে আহত সিনথিয়া, কান্তা, মাহমুদা আক্তার, মুন্নী যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।
যদিও যশোরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলমের দাবি, যশোরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ সত্য নয়, পুলিশ কারো উপর লাঠিচার্জ করেনি। আর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান জানিয়েছেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উপরোক্ত কয়েকজনকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলা, হত্যা, গণগ্রেফতার, ঢাকায় সমন্বয়কারীদের আটক, মামলা, গুম এবং অব্যাহত খুনের প্রতিবাদে ও জাতিসংঘের তদন্তপূর্বক বিচারসহ ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। প্রথমে ১৬ জুলাই থেকে কয়েকদিন সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। এরপর ১৯ জুলাই সারা দেশে ঘটে যায় নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। অসংখ্য হতাহত ও ব্যাপক নাশকতার ঘটনাও ঘটে। এরপর জারি হয় কারফিউ। কারফিউ শিথিলের সময়ে সারা দেশে দাবি আদায়ের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে ছাত্ররা। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ৩১ জুলাই যশোরে ছিল শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন-বিক্ষোভ। ছাত্র সমাজের এই ৯ দফা দাবি আদায়ে সকাল থেকে যশোর শহরের বিভিন্নস্থানে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকেন। আর এই মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে যেনো কোনো অপ্রীতিকর ও কিংবা অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে সে জন্য যশোর শহরের মোড়ে মোড়ে ব্যাপক পুলিশের উপস্থিতি চোখে পড়ে। শহরের প্রবেশ পথগুলোসহ অর্ধশত মোড়ে কঠোর সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ। এদিন যশোর শহরের আইনজীবী ভবন মোড়, সার্কিট হাউস মোড়, গরীবশাহ রোডের বকুলতলা, এসপি অফিস, চুয়াডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, বিমান অফিস মোড়, বিমানবন্দর, শিক্ষা বোর্ড, যশোর জেনারেল হাসপাতাল, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রেল স্টেশন, দড়াটানা, নিউমার্কেট, মণিহার এলাকা, চাঁচড়া চেকপোস্ট, ধর্মতলা, আরবপুর মোড়, পালবাড়ী মোড়, মুজিব সড়ক, গাড়ীখানা রোড, এম. কে. রোড, আর এন রোড, রেলরোড, সদর হাসপাতাল রোড, চিত্রামোড়, জর্জ কোর্ট মোড়, জেলখানা মোড়, কাঠেরপুল-বড়বাজার এলাকাসহ আরও কয়েকটি এলাকায় পুলিশের ব্যাপক উপস্থিতি ও টহল চোখে পড়ে। পুলিশ ছাড়াও বিজিবি র‌্যাবের টহল ছিল শহর ও শহরতলীতে।
সতর্কতার অংশ হিসেবে এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে যশোর পৌরসভার সামনে জড়ো হয়ে মিছিলের চেষ্টা করলে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয় পুলিশ। এরপর শহরের ঈদগাহ মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দিকে অগ্রসর হয়। এ সময় পুলিশ বাধা দিলে তারা উপেক্ষা করে মিছিল নিয়ে এগুতে থাকেন। একপর্যায়ে যশোর পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে চার রাস্তার মোড়ে মিছিলটি পৌঁছায়। সেখানে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্য ও ডিবি পুলিশের সদস্যরা তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করে দেন।https://gramerkagoj.com/uploads/article/2024/7/31/multiple/GK_2024-07-31_66aa5ce167c1c.jpg
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের যশোরের সমন্বয়ক রাশেদ খান জানিয়েছেন, পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এরমধ্যে শহরের ঈদগাহ মোড় এলাকা থেকে রনি, আকাশ, রানা, তৌহিদুল, রিয়াজুল ও ইব্রাহিম নামে ৬ শিক্ষার্থীকে আটক করে পুলিশ।
তিনি জানান, আন্দোলনে, মানববন্ধনে এবং বিক্ষোভে বাধা দিয়ে আটক করে তাদের আন্দোলন প্রতিহত করা যাবে না। তারা রাজপথে ছিলেন আছেন এবং থাকবেন।
এদিকে, কোটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে সহসমন্বয়ক যবিপ্রবির ছাত্র সজীব হোসেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী স্বার্থক, কাইউমসহ অনেকে অভিযোগ করেছেন, যশোরে কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে। এসপি অফিসের সামনের রাস্তায় বেলা সাড়ে ১২ টার পরে এ ঘটনা ঘটে। লাঠিচার্জের পর শিক্ষার্থীরা শহরতলির ধর্মতলায় জড়ো হয়। ওই মিছিলে অভিভাবকরাও অংশ নেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এছাড়া মানববন্ধন ও বিক্ষোভে অংশ নেয়া আরো অনেকে জানিয়েছেন, প্রথমে বেলা ১১ টায় তারা শান্তিপুর্ণভাবে মানবন্ধন করতে প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন। সেখানে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ ঘটনায় বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে তারা মিছিল নিয়ে পৌরপার্কের সামনের সড়ক দিয়ে এসপি অফিসের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিছুদূর যাওয়ার পর পুলিশ মিছিলে বাধা দেয়। তখন তারা বাধা উপেক্ষা করে এসপি অফিসের সামনে গেলে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ সময় মিছিলটি ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। পরে শহরের পালবাড়ি মোড়ে আবার সংঘবদ্ধ হয়ে মিছিল করলে সেখানেও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এরপর শহরতলির ধর্মতলায় শিক্ষার্থীরা জড়ো হলে সেখানেও পুলিশ তাদের লাঠিচার্জ করে।
আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, পুলিশের লাঠিচার্জে তাদের ২০ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে সিনথিয়া, কান্তা, মামুদ আক্তার, মুন্নী জখম হন। এসময় একজন ছাত্রীর মাকেও পুলিশ লাঞ্ছিত করে বলেও তাদের অভিযোগ। যশোর কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক নিজেও লাঠিচার্জ করেছেন বলেও তাদের দাবি।
লাঞ্ছিত ওই নারী অভিভাবক জানিয়েছেন, লাঠিচার্জের সময় কোনো নারী পুলিশ সদস্য ছিলেন না। পুরুষ পুলিশ সদস্যরা মেয়ে শিক্ষার্থী ও নারী অভিভাবকের উপর লাঠিচার্জ করেছেন যা খুবই দৃষ্টি কটু। এর সুষ্টু বিচার দাবি করেছেন তিনি।
সহ সমন্বয়ক সজীব হোসেন আরো জানিয়েছেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করার সময় পুলিশ বারবার তাদের বাধা দেয়। এসময় আমান উল্লাহ নামে যশোর সরকারি এমএম কলেজের একজন সমন্বয়কসহ ৪ জনকে আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ।
এদিকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা নারী শিক্ষার্থীরা দাবি করেছেন, পুলিশ অকারণে তাদের লাঠিপেটা করেছে। মিছিলে অংশ নেয়া কয়েক নারী অভিভাবককেও পুলিশ লাঠিচার্জ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা।


দুপুরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শিক্ষার্থীদের সাথে আসা আন্দোলনকারীরা নানা শ্লোগান তুলে অনাকাঙ্খিত নানা ঘটনার প্রতিবাদ জানান। তারা বলেন শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ অপকান্ডে লিপ্ত হয়েছে। এতে ছাত্রসমাজসহ দেশবাসী চরমভাবে সংক্ষুব্ধ। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের গতিবেগ এখন সর্বত্র জেগে উঠেছে।
তারা সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, অবিলম্বে ঘটনায় জড়িতদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবি মেনে নিতে হবে। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের ওপর পুলিশ, বিজিবি নামানো ও ন্যাক্কারজনক হামলা এবং খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করার দাবি জানান মিছিল থেকে।
এদিকে যশোরে শিক্ষার্থী আন্দোলন ও তাদের উপর লাঠিচার্জের অভিযোগের ব্যাপারে কথা হয় যশোরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলমের সাথে। ঘটনার ব্যাপারে তিনি দৈনিক গ্রামের কাগজকে জানিয়েছেন, যশোর জেলা পুলিশের শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছিল শহরে। যাতে কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যশোরে ঘটতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে পুলিশ। তবে শিক্ষার্থীদের সাথে দমন পীড়ন করে নয়। বরং তাদের সাথে কয়েক দফা কথা বলেছেন যশোর পুলিশের উর্ধবতনদের। সতর্কতার সাথে পুলিশে অনেকগুলো টিম মাঠে ছিল। যশোরে চলমান আন্দোলনে আইনশৃংখলা সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন কর্মসূচিতে পুলিশ লাঠিচার্জ করেনি। অন্তত যশোরে এটা হয়নি, হবে না বলতে পারেন। পুলিশ লাঠিচার্জ করে শিক্ষার্থীদের আহত করেছে এমন অভিযোগ সত্য নয়।

আরও খবর

🔝