gramerkagoj
রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒ দুই পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার

ঢাকায় গুলিতে নিহত সাব্বির ও রাকিবের মায়েদের কান্না থামছেই না
প্রকাশ : শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ০৯:২০:০০ পিএম
টিপু সুলতান, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ):
GK_2024-07-27_66a510736d8a8.jpg

সাব্বির হোসেন (২৩) ও প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের (২৯) মায়েদের কান্না যেন থামছেই না। ছেলে হারানোর শোকে তাদের চোখে নিদ্রা নেই। প্রতিটা রাত যেন দুই পরিবারের কাছে অবসানহীন অপেক্ষার প্রতিচ্ছবি। সারাক্ষণ তারা নিহত ছেলেদের স্মৃতি নিয়ে আহাজারি করছেন।
দুজনই বেসরকারি চাকরিজীবী ছিলেন। কোটা আন্দোলনের সময় ঢাকায় পৃথক স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন তারা।
শৈলকুপা উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের আমোদ আলীর ছেলে সাব্বির হোসেন গত ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় ওষুধ কিনতে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। পরদিন ১৯ জুলাই সাব্বিরের মরদেহ সকাল ১০টার দিকে মির্জাপুর গ্রামে দাফন করা হয়। সাব্বিরের চাচাতো ভাই তরিকুল জানান, উত্তরার ১৩ নম্বর সেক্টরে অর্গান লিমিটেড কেয়ার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন সাব্বির। ঘটনার সময় তিনি ওষুধ কিনতে বের হয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। তিনি আরও জানান, সাব্বির ছিলেন তাদের সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম মানুষ।
একমাত্র বোন সুমাইয়া খাতুন বলেন, পরিবারের বড় সন্তান হিসেবে সাব্বির সংসারের হাল ধরেছিলেন। সাব্বিরের মৃত্যুতে গোটা পরিবার এখন অসহায়।
পিতা আমোদ আলী বলেন, তার ছেলে কোনো রাজনীতি করতেন না। বাঁচার জন্য ঢাকায় গিয়েছিলেন চাকরি করতে। সেখানেও সাব্বির কোন মিছিল-মিটিংয়ে যাননি। জ্বর হওয়ায় অসুস্থ শরীরে ওষুধ কিনতে বাইরে যান। তিনি তো আন্দোলনে ছিলেন না। তাকে কেন গুলি করে মারা হলো?
এদিকে, ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ার সাবেক বিমান বাহিনীর মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিকীর ছেলে প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান ১৯ জুলাই শুক্রবার রাতে গুলিতে নিহত হন। ঘটনার দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে মিরপুর ১০ নম্বর সেক্টর এলাকায় পথচারী এক নারীকে বাঁচাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। মিরপুর-৬ এলাকায় ডাক্তার আজমল হাসান হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাকিব লন্ডনভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি টাইগার রিস্ক ম্যানেজমেন্টে চাকরি করতেন
শনিবার ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ায় প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় সুনশান নীরবতা। রাকিবুলের ব্যবহারিক জিনিসপত্র নিয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত মা হাফিজা খাতুন কান্না করছেন। পিতা আবু বকর বিমান বাহিনীর সাবেক মাস্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিক বাকরুদ্ধ। বড় ভাইয়ের ছেলে শিশু রাফসান ‘ছোট বাবা, ছোট বাবা’ বলে সারা ঘর খুঁজে বেড়াচ্ছেন চাচাকে। মৃত্যুর কিছুক্ষণ আগে রাকিবের সঙ্গে ভাতিজা রাফসানেরও কথা হয়েছিল। নিহত হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে প্রকৌশলী রাকিবুল হাসানের সঙ্গে কথা হয় মা হাফিজার। বলেছিলেন তিনি একটি গ্যারেজের মধ্যে বসে আছেন। রাত সাড়ে ৯টার মধ্যে খেয়ে ঘুমিয়ে পড়বেন। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তার ছেলে চিরঘুমে চলে যান। শুক্রবার এশার নামাজ পড়ে ফোন দেন পিতা আবু বকর। কিন্তু ফোন বাজলেও আর কেউ ধরেনি। রাত ১১টার দিকে ছেলের ফোন থেকে কেউ একজন মৃত্যুর খবর জানান। ভোর রাতে রাকিবের বন্ধু ফয়সাল ও পিয়াস মরদেহ ঝিনাইদহের বাড়িতে পৌঁছে দেন।
মা হাফিজা বেগম জানান, তার ছোট ছেলেকে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিল। মা বাবাকে কাছে রাখার জন্য ঢাকায় বড় ফ্ল্যাট নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে।
প্রতিবেশি তাছলিম উদ্দীন জানান, নিহত রাকিব এলাকায় খুবই ভদ্র হিসেবে পরিচিত। তিনি জীবনে কোন সংগঠন করেছেন কিনা তা মহল্লাবাসির জানা নেই। একটি ভদ্র পরিবারের সন্তান হিসেবে সবাই রাকিবকে চিনতেন। রাকিবের মৃত্যুতে শহরের চাকলাপাড়া ও হরিণাকুন্ডু উপজেলার বাসিদেবপুর গ্রামের মানুষ শোকে স্তদ্ধ হয়ে আছেন। মৃত্যুর আটদিন পরও সরকারিভাবে পরিবারটির কেউ খোঁজ নেননি বলে জানান রাকিবের পিতা আবু বকর।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝