gramerkagoj
রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
অভিনেতা আমজাদ খানের মৃত্যুবার্ষিকী আজ
প্রকাশ : শনিবার, ২৭ জুলাই , ২০২৪, ১১:৫৭:০০ এএম
বিনোদন ডেস্ক:
GK_2024-07-27_66a48902c3998.jpg

হিন্দি সিনেমা জগতে এমন কয়েকজন অভিনেতা রয়েছেন যাঁরা মৃত্যুর পরেও জীবিত থাকবেন তাদের অসাধারণ সব চরিত্রের মধ্যে দিয়ে। ভারতীয় সিনেমা জগতের এমনই একজন কিংবদন্তি অভিনেতা হলেন আমজাদ খান। আজ এই অভিনেতার মৃত্যুবার্ষিকী। নিজের দীর্ঘ জীবনে দুর্দান্ত সব চরিত্রে অভিনয় করে হিন্দি চলচ্চিত্র শিল্পের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। তিনি ২০ বছরের কর্মজীবনে ১৩০-টির বেশি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন। হিন্দি ভাষার চলচ্চিত্রে তিনি মূলত খলনায়ক চরিত্রে অভিনয় করতেন।
ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়ানক খলনায়ক বোধহয় তিনিই ছিলেন। রমেশ সিপ্পি পরিচালিত ‘শোলে’ ছবিতে ডাকাত সর্দার গব্বর সিং চরিত্রে অভিনয় করে জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছন আমজাদ খান।
নাট্যদলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন রমেশ সিপ্পির বোন। তিনি দাদাকে একটি নাটক দেখার জন্য বম্বেতে আমন্ত্রণ জানান। সেই নাটকে এক আফ্রিকান চরিত্রে এক যুবককে অভিনয় করতে দেখেছিলেন রমেশ সিপ্পি। আর তখনই তাঁর মনে হয়েছিলো ‘শোলে’ ছবির ‘গব্বর সিং’ চরিত্রের জন্য এই যুবকই সেরা। সেই যুবকটি ছিলেন আমজাদ খান।
‘শোলে’-র চিত্রনাট্য শোনার পরে অমিতাভ বচ্চন এবং সঞ্জীবকুমার দু’জনেই চেয়েছিলেন ‘গব্বর’ চরিত্রে অভিনয় করতে। কিন্তু রমেশ সিপ্পি তাঁদের বদলে ‘গব্বর’ করেন আমজাদ খানকেই।
আমজাদ খান ১২ নভেম্বর, ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ ভারতের পেশোয়ারে জন্মগ্রহণ করেন। আবার অনেকের মতে, তিনি জন্মেছিলেন হায়দ্রাবাদে। পিতা জয়ন্ত খান অভিনয় করতেন সিনেমায়, ছেলেও বাবার পথেই হাঁটল। মাত্র ১১ বছর বয়সেই আমজাদ খান শিশুশিল্পী হিসেবে হাজির হলেন পর্দায়, সিনেমার নাম ‘নাজনীন’। এরপর থিয়েটারে ভর্তি হলেন, সঙ্গে চলছিল পড়াশোনাও।
১৯৭৩ সালে অভিনেতা হিসেবে ইন্ডাস্ট্রিতে অভিষেক হলো তাঁর, ‘হিন্দুস্তান কি কসম’ সিনেমায়। রাজ কুমার অভিনীত সেই চলচ্চিত্রে আমজাদ খান অভিনয় করেছিলেন পাকিস্তান এয়ারফোর্সের একজন পাইলট হিসেবে। কেউ মনে রাখেনি সে ছবি। আমজাদেরও ভাগ্য খোলেনি।
সব হিসেব বদলে দিল ১৯৭৫ সালে যখন ‘শোলে’ মুক্তি পেল। গব্বর সিং-এর মতো ভয়ংকর খলনায়ক চলচ্চিত্র জগত আগে দেখেনি। ভিলেন রোলে এমন অসাধারণ অভিনয়ও পর্দায় ফুটিয়ে তুলতে পারেননি কেউ, আমজাদ খান তাই অবিস্মরণীয়। যা দেখে চমকে গেছিল বলিউড-সহ তামাম ভারত। আজও হেমা মালিনী বলেন, তাঁর জীবনে কঠিনতম নাচের দৃশ্য গব্বরের ডেরায় বাসন্তীর নাচ।
আমজাদ খান একদম নিপাট ভদ্রলোক ছিলেন। ১৯৭২ সালে বিয়ে করেছেন শায়লাকে। শায়লার সঙ্গে আমজাদের বিয়ে সিনেমার লাভস্টোরির থেকে কম কিছু নয়। শায়লা ছিলেন আমজাদের প্রতিবেশী। আমজাদ তখন কলেজে আর শায়লা স্কুলে পড়া কিশোরী। শায়লা আমজাদকে দাদা বলে ডাকতেন, যা একদম পছন্দ ছিল না আমজাদের। কারণ তখন থেকেই শায়লার প্রেমে পড়েছিলেন আমজাদ। এর পরে একদিন বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে সরাসরি শায়লার বাড়ির দরজায় পৌঁছে যান আমজাদ। বিয়ে হয়।
আমজাদ ছিলেন অ্যাক্টরস গিল্ডের সভাপতি। সবাই দারুণ শ্রদ্ধা করত তাঁকে। ভিলেন হিসেবে আমজাদ জনপ্রিয় হলেও কখনও তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে জলঘোলা হয়নি মিডিয়ায় বা সিনেপত্রিকায়। সিনেমায় নায়িকাদের সঙ্গে ভিলেন রূপে জোর জবরদস্তি করলেও বাস্তবে কখনও বিবাহিত আমজাদের সঙ্গে নাম জড়ায়নি কোন অভিনেত্রীর।
তিন ছেলে মেয়ের বাবা তিনি। শোনা যায়, ছেলেমেয়েদের শরীর খারাপ হলে আমজাদের চোখে জল চলে আসত। আদতে এতটাই নরম মন ছিল দাপুটে ভিলেনের।
কিন্তু আমজাদের সংসার জীবন বেশিদিন সুখের হল না। ১৯৭৬ সালে তিনি যাচ্ছিলেন ‘দ্য গ্রেট গ্যাম্বলার’ সিনেমার শুটিংয়ের জন্য। গাড়িতে আমজাদের সঙ্গে ছিলেন তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রী। মুম্বই-গোয়া হাইওয়েতে চালককে বিশ্রাম দিয়ে নিজেই স্টিয়ারিং ধরলেন আমজাদ খান। গাড়িতে যেতে যেতে ইচ্ছে হল গান শোনার। ক্যাসেট বদলাতে গেলেন তিনি। সাময়িক চোখ সরেছিল রাস্তার দিক থেকে। ব্যস তখনই ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনা। তারপর চারিদিক অন্ধকার।
জ্ঞান যখন ফিরল তখন চারিদিকে রক্ত নদীর ধারা বয়ে যাচ্ছে। গুরুতর অসুস্থতার জন্য আমজাদ কোমায় চলে গেছিলেন। গাড়ির স্টিয়ারিং আমজাদের ফুসফুস ফুটো করে ঢুকে গেছিল। পাঁজরের তেরোটি হাড় ভেঙে গিয়েছিল। শায়লারও পাঁজরের হাড় ভেঙেছিল, থেঁতলে গিয়েছিল মুখ। তবে তাঁদের অনাগত সন্তানের কোনও ক্ষতি হয়নি। শায়লা সুস্থ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন।
শায়লা ক্রমশ সুস্থ হয়ে উঠলেও আমজাদের কোমা কাটতে অনেক সময় লেগেছিল। একের পর এক অস্ত্রোপচার আর কড়া ডোজের ওষুধের ফলে দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন আমজাদ। ওষুধের প্রভাবে তাঁর ওজন অত্যাধিক বেড়ে যাচ্ছিল। তার পরেও কাজে ফেরেন আমজাদ। কমেডিয়ান বা চরিত্রাভিনেতার রোলে কাজ শুরু করেন।
শারীরিক দুর্বলতার কারণে শরীরচর্চা ঠিকমতো করতে পারতেন না আর। ফিল্মের ধকলও তিনি নিতে পারতেন না। এদিকে ততদিনে অমরেশ পুরী ভিলেন হিসেবে বলিউডে তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তার করতে শুরু করেছেন। আমজাদের কাছে ছবির অফার আসাও কমতে শুরু করল।
তবুও ‘কিতনে আদমি থে?’, ‘ইয়ে হাথ মুঝে দে দে ঠাকুর’, ‘জো ডর গয়া, সমঝো মর গয়া’– এইসব কালজয়ী ডায়লগ দিয়ে আজীবন বেঁচে থাকবেন আমজাদ খান। ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দার’ থেকে সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’তে কাজ করে সুনাম অর্জন করেন আমজাদ খান। অনুসন্ধানে কালীরামের ফাটা ঢোল থেকে ‘লায়লা ম্যায় লায়লা’ গানের ড্রাম সবেতেই সেরা আমজাদ। একদম হার্ডকোর মুভি থেকে আর্ট মুভি সবেতেই ছিল তাঁর বিচরণ। তাই খলনায়ক হলেও গব্বর আজও নায়ক।
আজীবন চলতে থাকা স্টেরয়েড ওষুধের প্রভাবে আমজাদের স্থুলতা এতই বাড়তে থাকে, যে ১৯৯২ সালের ২৭ জুলাই মাত্র ৫১ বছর বয়সে হৃদরোগে মারা যান আমজাদ।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝