gramerkagoj
রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
রজনীকান্ত সেনের জন্মবার্ষিকী আজ
প্রকাশ : শুক্রবার, ২৬ জুলাই , ২০২৪, ১০:১০:০০ এএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2024-07-26_66a321b9e6410.jpg

‘কান্তকবি’ নামে খ্যাত রজনীকান্ত সেনের জন্মবার্ষিকী আজ। রজনীকান্ত সেন ছিলেন বাঙালি কবি, গীতিকার ও সঙ্গীতশিল্পী।
রজনীকান্ত ২৬ জুলাই, ১৮৬৫ সালে পাবনা জেলার ভাঙ্গাবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা গুরুপ্রসাদ সেন ছিলেন একজন সঙ্গীতজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। মা মনমোহিনী দেবীও ছিলেন সঙ্গীতানুরাগী। মা-বাবার অনুপ্রেরণায় মাত্র পনেরো বছর বয়সে কালীসঙ্গীত রচনা করে কবিত্বশক্তির পরিচয় দেন তিনি।
তিনি হিরন্ময়ী দেবী নাম্নী এক বিদূষী নারীকে ১৮৮৩ সালে (৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১২৯০ সালে) বিবাহ করেন। হিরন্ময়ী দেবী রজনী'র লেখা কবিতাগুলো নিয়ে আলোচনা করতেন। কখনো কখনো তার কবিতার বিষয়বস্তু সম্পর্কে মতামত ও সমালোচনা ব্যক্ত করতেন। তাদের সংসারে পাঁচ পুত্র - শচীন্দ্র", "জ্ঞানেন্দ্র", "ভুপেন্দ্র, "ক্ষিতীন্দ্র" ও শৈলেন্দ্র এবং চার কন্যা - শতদলবাসিনী, শান্তিবালা, "প্রীতিলতা" ও "তৃপ্তিবালা" ছিল। কিন্তু পুত্র ভুপেন্দ্র ও কন্যা শতদলবাসিনী খুব অল্প বয়সেই মারা যায়। রজনী দুঃখ-ভারাক্রান্ত মনে এবং ঈশ্বরের উপর অগাধ আস্থা রেখে পরদিনই রচনা করেন -
তোমারি দেওয়া প্রাণে তোমারি দেওয়া দুখ,
তোমারি দেওয়া বুকে, তোমারি অনুভব৷
তোমারি দুনয়নে তোমারি শোক-বারি,
তোমারি ব্যাকুলতা তোমারি হা হা রব৷
‘পঞ্চকবি’দের একজন রজনীকান্ত সেন। পঞ্চকবির অন্যরা হলেন- রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, দ্বিজেন্দ্রলাল রায়, অতুল প্রসাদ সেন। এছাড়া মহানায়িকা সুচিত্রা সেন তাঁর নাতনি। তবে সবকিছু ছাড়িয়ে রজনীকান্ত স্বমহিমাতেই চির ভাস্বর, বাংলা সাহিত্য ও সঙ্গীতের আকাশের অন্যতম নক্ষত্র।
রজনীকান্ত শৈশবে খুবই দুষ্টপ্রকৃতির অধিকারী ও সদা-সর্বদাই খেলাধূলায় ব্যস্ত থাকতেন। কিন্তু তার নৈতিক চরিত্র সকলের আদর্শস্থানীয় ছিল। তিনি পড়াশোনায় কিঞ্চিৎ সময় ব্যয় করার সুযোগ পেতেন। তারপরও পরীক্ষায় আশাতীত ফলাফল অর্জন করতে পারতেন তিনি। পরবর্তীকালে এ বিষয়ে তিনি তার দিনপঞ্জী বা ডায়রীতে উল্লেখ করেছেন-
আমি কখনও বইপ্রেমী ছিলাম না। অত্যন্ত কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্যে ঈশ্বরের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।
বিদ্যালয় অবকাশকালীন সময়ে প্রতিবেশীর গৃহে সময় ব্যয় করতেন। সেখানে রাজনাথ তারকরত্ন মহাশয়ের কাছ থেকে সংস্কৃত ভাষা শিখতেন। এছাড়াও, গোপাল চন্দ্র লাহিড়ীকে তিনি তার শিক্ষাগুরু হিসেবে পেয়েছিলেন। রজনীকান্ত বোয়ালীয়া জিলা স্কুলে (বর্তমান রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল) ভর্তি হন। ১৮৮৩ সালে কুচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে ২য় বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করেন। এরফলে তিনি প্রতিমাসে দশ রূপি বৃত্তি পেতেন। পরবর্তীতে ১৮৮৫ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ২য় বিভাগে এফ.এ পাশ করে সিটি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৮৮৯ সালে বি.এ পাশ করে করেন। অতঃপর একই কলেজ থেকে ১৮৯১ সালে পরিবারকে সহায়তা করার জন্য আইন বিষয়ে বি.এল ডিগ্রী অর্জন করেন রজনীকান্ত সেন।
রজনীকান্ত শৈশবকাল থেকেই তিনি স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও স্বাবলীল ভঙ্গীমায় বাংলা ও সংস্কৃত - উভয় ভাষায়ই কবিতা লিখতেন। তিনি তার রচিত কবিতাগুলোকে গান আকারে রূপ দিতে শুরু করেন। পরবর্তীতে বাদ্যযন্ত্র সহযোগে গান পরিবেশন করতেন। রজনী'র কবিতাগুলো স্থানীয় উৎস, আশালতা প্রমূখ সংবাদ-সাময়িকীতে অনেকবার প্রকাশিত হয়েছিল। কলেজ জীবনের দিনগুলোতে তিনি গান লিখতেন। অভিষেক অনুষ্ঠান ও সমাপণী বা বিদায় অনুষ্ঠানেই গানগুলো রচনা করে গাওয়া হতো। তিনি তার অতি জনপ্রিয় গানগুলো খুবই স্বল্প সময়ের ব্যবধানে রচনা করতে সক্ষমতা দেখিয়েছিলেন। তেমনি একটি গান রাজশাহী গ্রন্থাগারের সমাবেশে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে রচনা করেছিলেন-
তব, চরণ নিম্নে, উৎসবময়ী শ্যাম-ধরনী সরসা;
ঊর্দ্ধে চাহ অগণিত-মনি-রঞ্জিত নভো-নীলাঞ্চলা
সৌম্য-মধুর-দিব্যাঙ্গনা শান্ত-কুশল-দরশা৷
১৫ বছর বয়সে কালীসঙ্গীত রচনার মাধ্যমে তার অপূর্ব কবিত্বশক্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটে। আইন পেশার পাশাপাশি তিনি সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে বিশেষতঃ সঙ্গীত, সাহিত্য, নাটকে অভিনয় ইত্যাদিতে গভীরভাবে মনোঃসংযোগ ঘটান। এরই প্রেক্ষাপটে রাজশাহীতে অবস্থানকালে তার বন্ধু ও বিখ্যাত ঐতিহাসিক অক্ষয়কুমার মৈত্রেয় মহাশয় এবং স্ত্রীর কাছ থেকে বেশ সক্রিয় সমর্থন পান।
রজনীকান্ত ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে এতো বড় অভিঘাতেও সামান্য বিচলিত হতেন না। পরম প্রিয় ঈশ্বরের কাছে জানালেন সুস্থতার আবেদন। কিন্তু সে আবেদন গ্রাহ্য না হলেও এতটুকু খেদ নেই বিধাতার প্রতি। তাঁর বরং মনে হলো, এসব দুঃখ-বেদনার মধ্যে দিয়ে ঈশ্বর তাকে পরিশুদ্ধ করছেন। জীবনের শেষ দিনগুলোতে নিদারুণ কষ্ট ও শোকের মধ্যে কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে গেলেও তিনি নির্বাক অবস্থায় ক্রমাগত লিখে চলছিলেন নানান নীতি কাব্যগাথা আর ভক্তিমূলক সঙ্গীত।
এ সময় তিনি রবীন্দ্রনাথকে একবার দেখতে চান। হাসপাতালের বাজে পরিবেশে রবীন্দ্রনাথের ছিল চরম অস্বস্তি। তা সত্ত্বেও রজনীকান্তের অনুরোধ জানতে পেরে তাঁকে দেখতে হাসপাতালে যান রবীন্দ্রনাথ। সেখানে রবীন্দ্রনাথ নিজে হারমোনিয়াম বাজান আর গান ধরেন রজনীকান্তের সন্তান ক্ষিতীন্দ্র ও শান্তিবালা। রবীন্দ্রনাথের বিদায়ের পর এই অনুভূতির প্রেক্ষিতেই তিনি রচনা করেন-
‘আমায় সকল রকমে কাঙ্গাল করেছে, গর্ব করিতে চুর,
তাই যশ ও অর্থ, মান ও স্বাস্থ্য, সকলি করেছে দূর।
ঐগুলো সব মায়াময় রূপে, ফেলেছিল মোরে অহমিকা-কূপে,
তাই সব বাধা সরায়ে দয়াল করেছে দীন আতুর।’
সাহিত্য সাধনা এবং আরাধনামূলক অসাধারণ সঙ্গীত সৃষ্টিকারী কবি রজনীকান্ত সেন মাত্র ৪৫ বছর বয়সে কলকাতা মেডিকেল কলেজের কটেজ ওয়ার্ডে ১৯১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। ক্যান্সারের মতো দূরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েও ঈশ্বরের প্রতি নিজেকে সমর্পণ করে দিয়ে যেসব অশ্রুতপূর্ব গান রচনা, সেগুলোই ছিল তাঁর শেষ দিনগুলোর অনিঃশেষ প্রাণশক্তির উৎস।
তাঁর গান যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে দেশকে প্রবলভাবে ভালোবাসার প্রেরণা জোগায়।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝