gramerkagoj
রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
বিটিভির কন্ট্রোল রুম দখল নিতে চেয়েছিলো দুর্বৃত্তরা

❒ নাশকতাকারীদের লক্ষ্য ছিলো ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা

প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই , ২০২৪, ০১:১১:০০ পিএম
কাগজ সংবাদ:
GK_2024-07-25_66a1f7eb3050f.jpg

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ছাড়া আর কখনোই বিটিভি এভাবে আক্রান্ত হয়নি। যেমনটি আক্রান্ত হয়েছে গত ১৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে। ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে পুরো বিটিভি ভবনে। আর এই ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে সক্রিয় ক্যাডারসহ একদল উগ্রবাদী, যারা সশস্ত্র ছিলো। তাদের লক্ষ্য ছিলো বিটিভির কন্ট্রোলরুম দখলে নিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারফিউ ঘোষণার সিদ্ধান্তসহ তড়িৎ কিছু পদক্ষেপে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো ছাড়া উগ্রবাদীদের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভর করে ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার পরিকল্পনা ছিল একটি মহলের। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েসহ সব প্রবেশপথ বন্ধ করে দিতে পরিকল্পনা ছিল তাদের। আর এতে মুখ্য ভূমিকা পালনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল শিবিরের ঢাকা জেলা দক্ষিণ শাখাকে।
সংগঠনটির বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারের পর তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের টেলিগ্রাম অ্যাপ থেকে পাওয়া তথ্যে এমনটা জানা গেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জেলার সরকারি, বেসরকারি স্থাপনায় আগুন, অসংখ্য যানবাহন পুড়িয়ে দেয়াসহ সরকারি স্থাপনায় হামলার ঘটনা পরিকল্পিত ছিল বলে এতে প্রমাণ মিলেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্যমতে, কোটা আন্দোলন চলাকালে কারফিউ জারির পর ঢাকা থেকে পালিয়ে আশপাশের এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে চলে যায় সহিংসতাকারীরা। এ অবস্থায় কেরানীগঞ্জের হাসনাবাদ এলাকায় শিবিরের একটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এদের মধ্যে ঢাকা জেলা দক্ষিণের ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিজ্ঞান ও পাঠচক্র বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কাদের জিলানী, মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক নাজমুল হোসেন ও বেশ কয়েকজন কর্মী রয়েছেন।
পুলিশ বলছে, দীর্ঘদিন ধরে এই আস্তানাটি শিবিরের ঢাকা জেলা দক্ষিণের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার হতো। ওই বাসা থেকে উদ্ধার হয়েছে শিবিরের বিভিন্ন লিফলেট ও পুস্তিকাও।
ঢাকার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, গ্রেফতারকৃতদের জব্দ করা মোবাইল ও বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে তথ্য প্রমাণ অনুযায়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনে ভর করে সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল শিবিরের। স্বপ্নচারী, কাশফুল, বাঁশের কেল্লাসহ বেশকয়েকটি টেলিগ্রাম গ্রুপে এসব প্রমাণ মিলেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে দফায় দফায় হামলা হয়েছে বিটিভির সদর দপ্তরে। গত ১৮ জুলাই দিনভর ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর পাশাপাশি এর নিয়ন্ত্রণ কক্ষেরও দখল নেওয়ার চেষ্টা করেছিল হামলাকারীরা।
সহিংসতায় ঢাকার রামপুরায় বিটিভি কার্যালয়ের মুজিব কর্নার এবং ঢাকা কেন্দ্রের নিরাপত্তা গেইট, অভ্যর্থনা কক্ষসহ অন্তত আটটি স্থানে আগুন দেওয়া হয়েছে। গত ১৮ জুলাই আন্দোলনের মধ্যে কয়েক দফায় চালানো হামলায় বিটিভিতে নেমে আসে বিভীষিকা, যার চিহ্ন এখন এর পুরো প্রাঙ্গণে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে বৃহস্পতিবার কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচির দিন বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিন দফায় হামলার পর ৭টা ৪ মিনিটে সম্প্রচার বন্ধ এবং বিটিভি শাটডাউন করে স্টেশন ত্যাগ করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। রাত সাড়ে ৮টার দিকে চতুর্থ দফা হামলা চালায় নাশকতাকারীরা। হামলায় ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের পাশাপাশি ব্যাপক লুটপাটও চালানো হয়। এতে ২২ ঘণ্টা সম্প্রচার বন্ধ ছিল রাষ্ট্রায়ত্ত এই টিভি স্টেশনটির।
বিটিভির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন মিডিয়ার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত চার দফা হামলা হলেও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিটিভিতে প্রবেশ করতে পারেনি। রাত ১০টার দিকে বাহিনীর সদস্যরা বিটিভির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং রাত ১২টায় ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। তবে এর আগেই আগুনে পুড়ে যায় গুরুত্বপূর্ণ কক্ষ, যন্ত্রপাতি, সম্প্রচারসামগ্রী ও গাড়ি।
কর্মকর্তারা বলেন, হামলাকারীরা ১৭টি গাড়িতে আগুন দেয় এবং ৯টি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। ২ ও ৩ নম্বর গেইট সম্পূর্ণ ভেঙে ফেলেছে। সদর দপ্তরের প্রথম থেকে ষষ্ঠতলা পর্যন্ত লুটপাট ও ভাঙচুর চালায়।
বিটিভির মহাপরিচালক মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, এটি এখনই বলা সম্ভব নয়। মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে। বিটিভি থেকেও আমরা একটি কমিটি করেছি। বিটিভি থেকে মামলাও করা হয়েছে। যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণ করতে অনেক সময় লাগবে। তদন্ত প্রতিবেদন আসার পর বলা যাবে।’
বিটিভির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী সেদিনের ঘটনা তুলে ধরেন বলেন, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিটিভি ভবন এলাকায় ধাওয়া, পাল্টা ধাওয়ার পর পুলিশের কিছু সদস্য বিটিভির গেইট দিয়ে প্রবেশ করে অন্য গেইট দিয়ে বেরিয়ে যান।
পুলিশ সদস্যরা ভেতরে অবস্থান করছেন মনে করে বিটিভির গেইটে এসে ধাক্কাধাক্কি শুরু করে কিছু লোক। বেলা ১১টার দিকে বিটিভির ৪ নম্বর গেইট ভেঙে হামলাকারীরা ভেতরে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্থান ও কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করে। তবে প্রথম দফায় হামলাকারীরা সংখ্যায় কম থাকায় বিটিভির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একজোট হয়ে তাদের প্রতিরোধ করতে সক্ষম হন।
দ্বিতীয় দফায় হামলা হয় বেলা ২টার দিকে। এ সময় হামলাকারী যারা এসেছিলেন, তাদের মধ্যে অনেক মধ্যবয়স্ক লোক ছিল জানিয়ে বিটিভির সহ-সম্পাদক মোহাম্মদ আজিম আনোয়ার বলেন, ‘হামলাকারীদের মধ্যে শিশুরাও ছিল। হামলাকারী সবাই ছাত্র ছিল না। নানা বয়সের লোক ছিল।’
বিটিভির মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘সকালে প্রথম দফা হামলায় ভাঙচুর করে, পরে ২টার দিকে এসে ভাঙচুরের পাশাপাশি গোডাউনে আগুন দেয়। এ সময় হামলাকারীদের মধ্যে কেউ কেউ বলছিলেন, কন্ট্রোল রুম কোন দিকে? কন্ট্রোল রুমে ওরা ঢুকে পড়তে পারে, সেই শঙ্কা থেকে আমাদের কর্মীরা কন্ট্রোল রুমের দরজার সামনে পরিত্যক্ত আলমারি এবং কিছু আবর্জনা রেখে দেয়, যাতে ওরা কন্ট্রোল রুমের দরজা খুঁজে না পায়। কন্ট্রোল রুম দখল নিলে তো তারা যে কোনো ঘোষণা দেওয়ার জন্য আমাদের কর্মীদের বাধ্য করে ফেলত।’ বিটিভি মহাপরিচালক অনুরূপ বক্তব্য একটি টিভি চ্যানেলের টক শোতেও দিয়েছেন।
তা-বের সেই দিনে বিকেল ৬টার দিকে আবারও যখন হামলাকারীরা আসে, তখন বিটিভির মহাপরিচালক শাটডাউনের সিদ্ধান্ত নেন জানিয়ে বলেন, ‘প্রথম হামলার পরপরই আমরা নিরাপত্তা বাহিনী এবং আমাদের বিভিন্ন দপ্তর-সংস্থাকে অবহিত করেছি। ফায়ার সার্ভিসকে জানিয়েছি। কিন্তু তারা আসতে পারেনি। দুপুরের পর থেকে আমাদের কিছু কর্মী প্রাণের ভয়ে স্টেশন ত্যাগ করেন। আবার কিছু কর্মী আমার সঙ্গে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার প্রাণপণ চেষ্টা করেন। যখন সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছিল, পরিস্থিতি আমরা আর সামাল দিতে পারছিলাম না। তখন আমাদের কর্মীদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নেই শাটডাউন করার। কারণ ৬টার দিকে যখন হামলকারীরা আসে, তারা ‘বিটিভি এখনও চলছে কেন?’ চিৎকার করে বলছিল। আমরা বুঝতে পারছিলাম, তারা কন্ট্রোল রুমের দিকে যেতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের কর্মীরা তখন পুরো বিটিভির লাইট নিভিয়ে দেয়, কন্ট্রোল রুম তালা দিয়ে দরজার সামনে আবর্জনার স্তূপ রেখে দেয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে দুজন ম্যাজিস্ট্রেট ও বিজিবি সদস্যরা আসেন। তারা আমাকে বলেন, তারা আমাদের নিরাপদে বের করে নিয়ে যেতে এসেছেন। তখন আমরা বিটিভি থেকে বেরিয়ে যাই।’
বিটিভির কর্মীরা স্টেশন ত্যাগ করার পরও হামলাকারীরা ফের ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর করে। তাদের আবার আগুন দিতে দেখেছেন বিটিভির একাধিক কর্মী। রাস্তা থেকে সেই দৃশ্য দেখেছেন তারা।
তবে ৯টার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিটিভির নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং বর্তমানে সেনা সদস্যরা নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন।
এদিকে, ঢাকা অচল করে দেয়ার পরিকল্পনায় আন্দোলনকে উসকে দেয়ার মতো অসংখ্য অডিও বার্তাও এসেছে পুলিশের হাতে। একটি অডিও বার্তায় সিয়াম, প্রবেশমুখ বন্ধ করে ঢাকা অচল করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সঙ্গে সমন্বয় করে বড় একটি আন্দোলন করার পরিকল্পনাও ছিল তাদের।
পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান আরও বলেন, শুধু সহিংসতা, অগ্নিসন্ত্রাস এবং আন্দোলন উসকে দেয়া নয়, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার দখলেরও পরিকল্পনা ছিল শিবিরের। পুরো ঢাকাকে সারাদেশের সঙ্গে বিচ্ছিন করার পরিকল্পনা ছিল তাদের।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝