শিরোনাম |
বৃহস্পতিবার থেকে কমপ্লিট শার্টডাউন শুরু। শুক্রবার ছিল সাপ্তাহিক ছুটির দিন। শনিবার, রোববার ও সোমবার কারফিউ। পাঁচদিন পর মঙ্গলবার দুপুর ১২ টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত যশোর শহরের বড়বাজারসহ বিভিন্ন বাজারের দোকানপাট খোলা হয় ঠিকই; কিন্তু ক্রেতা ছিল না। ছয় ঘণ্টা দোকান খোলা রেখে অনেক দোকানিই একটি পণ্যও বিক্রি করতে পারেননি। আবার কেউ কেউ সামান্য বেচাকেনা করলেও দোকান ভাড়াতো দূরের কথা, কর্মচারীদের খরচও ওঠাতে পারেননি।
মঙ্গলবার যশোরের বড় বাজার, কালেক্টরেট মার্কেট, সিটি প্লাজা, জেস টাওয়ার, পুলিশ প্লাজা, মুজিব সড়কের কয়েকটি দোকান ঘুরে এ চিত্র দেখা যায়। দোকান মালিকদের সাথে কর্মচারীরাও পড়েছেন মহাবিপদে। মালিকরা গচ্চা দিয়ে চলতে পারলেও কর্মচারীদের বেতন বন্ধ হয়ে পথে বসার উপক্রম হয়েছে। এসব বিষয়ে দুঃখকষ্ট নিয়ে জীবনযাপন করছেন তারা।
মঙ্গলবার বিকেল যশোর শহরের বড় বাজারে গিয়ে দেখা যায় অধিকাংশ দোকানই ক্রেতা শূন্য। ক্রেতার আশায় পথ চেয়ে বসে আছেন বিক্রেতারা।
লিবার্টি সু’র কর্মচারী আরিফ হোসেন বলেন, পাঁচদিন পর দোকান খুলেছেন। তাদের যে কয়জন কর্মচারী রয়েছেন সে কয়টা জুতাও বিক্রি করতে পারেননি। বেতন নেই তাদের। কীভাবে আগামীকাল চলবেন তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তিনি।
পাশের দোকানের আরেক কর্মচারী এসে তার সাথে দুঃখের কথা যোগ করে বলেন, মালিকদের লাখ লাখ টাকা লোকসান হচ্ছে তারপরও তারা চলতে পারছেন। কিন্তু কর্মচারীদের অবস্থা বেহাল। পরিবার নিয়ে পথে বসার মতো উপক্রম বলে দাবি করেন তিনি।
এ সময় পাশে লতিফ ক্লথ স্টোর, এইচএম ক্লথ স্টোর, বাটা শোরুম ও লোটো শোরুম ঘুরে একই চিত্র উঠে আসে।
কালেক্টরেট মার্কেটে গিয়ে দেখা যায় সব দোকান খোলা থাকলেও দু’টি দোকানে চার-পাঁচজন কাস্টমার রয়েছে। অন্যরা সবাই অলস সময় কাটাচ্ছেন।
নবীন গার্মেন্টসের মালিক মাইনুল হাসান বলেন, বড় আশা করে দোকান খুলেছিলেন তিনি। কিন্তু বিক্রি করেছেন একটি প্যান্ট।
পাশের দোকানি বড় কষ্ট নিয়ে বলেন,‘দোকান না খুললেই ভালো হতো।’
শহরের দড়াটানা পুলিশ প্লাজায় গিয়ে দেখা যায় একই চিত্র। কসমেটিক্স দোকানি রবিউল ইসলাম, সাজ্জাদ, গার্মেন্টস ব্যবসায়ী শহিদ ও নান্টু জানান, ১২ টা থেকেই দোকান খুলে রেখেছেন। কিন্তু একটি টাকাও বেচাকেনা করতে পারেননি। তারা পুলিশ প্লাজায় থাকেন। এখন তাদের খাওয়ার টাকাও নেই। বড় বিপদের মধ্যে দিনযাপন করছেন তারা।
শহরের মুজিব সড়কের দোকানগুলোতে গিয়েও দেখা মেলে একই চিত্র। দোকানিদের দাবি, দোকান খুললে প্রতিদিন যে টাকা তাদের খরচ হয় তার অর্ধেক টাকাও বিক্রি হয়নি।
সিটি প্লাজার দোকানিদের হাল ছিল বেহাল। নিউতনা টেলিকমের স্বত্বাধিকারী কামাল হোসেন বলেন, তার এক টাকার পণ্যও বিক্রি হয়নি। একই কথা বলেন আরও কয়েকজন দোকানি।
বিভিন্ন বাজার ঘুরে কথা হয় ক্রেতাদের সাথে। তারা জানান, বাইরে বের হতে ভয় লাগছে তাদের। অতি প্রয়োজন ছাড়া কেউই বের হচ্ছেন না। তাদের মধ্যে শরিফুল নামে একজন বলেন, বাড়ি থেকে জুতা চুরি হয়েছে। এ জন্যই বাজারে এসেছেন। অন্যথায় তিনি আসতেন না।
এ বিষয়ে যশোর বড় বাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মীর মোশারফ হোসেন বাবু বলেন,‘পাঁচদিন বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীদের যে ক্ষতি হয়েছে তা অপূরণীয়। কীভাবে তারা এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠবে তা নিয়ে সন্ধিহীন। তিনি আরও বলেন, মূলত বেচাকেনার বড় অংশ হয় বিকেল থেকে শুরু হয়ে রাত আটটা সাড়ে আটটা পর্যন্ত। এ সময় দোকানপাট খুলে রাখার ব্যবস্থা করলে কিছুটা হলেও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য,আজ থেকে যশোরে দোকানপাট সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত চালু থাকার ঘোষণা এসেছে।