শিরোনাম |
❒ যশোরে যানবাহন চলাচল বন্ধ এক সপ্তাহ
❒ গাড়ি চালানোর বিষয়ে আজ সিদ্ধান্ত
যশোরে বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের ২০ হাজার শ্রমিকের পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে। এক সপ্তাহ ধরে বাস-ট্রাক স্ট্যার্ট করতে না পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। চলমান কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হওয়ার দু’-তিনদিন পর সারাদেশে একের পর এক সহিংস ঘটনা ঘটতে থাকে। যদিও যশোরে বিচ্ছিন্ন দু’ একটি ঘটনা ছাড়া তেমন কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি। তারপরও যশোরে বাস-ট্রাকসহ অন্যান্য যানবাহন চলাচল করেনি।
যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা জানিয়েছেন, এখান থেকে ১৮ টি রুটে বাস চলাচল করে। একইভাবে চলাচল করে ট্রাকসহ অন্যান্য বাহনও। বাস, ট্রাক, মাইক্রো, প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য বাহন মিলিয়ে প্রতিদিন ২০ হাজার গাড়ি চলাচল করে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা। এই ২০ হাজার গাড়ি ঘিরে প্রতিদিন কাজ করেন ৩০ হাজারের বেশি শ্রমিক। এরমধ্যে চালক, সুপারভাইজার, হেলপার, কলারম্যান, কাউন্টারম্যানসহ অন্যান্য দায়িত্বের লোকজন রয়েছেন।
যশোর মিনিবাস ও বাস মালিক সমিতির সভাপতি মুসলিম আলী বলেন, ‘যশোর থেকে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ বাস, মিনিবাস চলাচল করে। প্রতিটি বাসে থাকেন চারজন করে শ্রমিক। প্রতিদিন প্রতিটি বাস থেকে মালিকরা সর্বনিম্ন দু’হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত পান। গড়ে ছয় হাজার টাকা করে হলেও প্রতিদিন তিন লাখ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছেন মালিকরা। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শ্রমিকরাও।’
তবে, ভিন্ন চিত্র শ্রমিকদের ক্ষেত্রে। ২০ হাজারের বেশি শ্রমিকের পরিবারের সদস্যরা অর্ধাহারে-অনাহারে দিন পার করছেন। না খেয়ে আছেন অনেক হেলপার। তাদেরকে যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানো হয়েছে।
যশোর জেলা পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা হোসেন বলেন, ‘আন্দোলনের পর থেকে যশোরে তিনটি ইউনিয়নের কমপক্ষে দশ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। অর্ধাহারে অনাহারে পার করছে তাদের পরিবার। স্ট্যান্ডে থাকা হেলপাররা না খেয়ে থাকছে। তাদের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। বাধ্য হয়ে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার খিচুড়ি রান্না করে হেলপারদের খাওয়ানো হয়েছে।’
বাস চলাচল শুরু হয়েছে কিনা জানতে চাইলে মোর্তজা বলেন, ‘মঙ্গলবার পর্যন্ত কোনো বাস চলাচল শুরু করেনি। আজ বুধবার থেকে সিদ্ধান্ত। এই ক’দিনে লাখ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মালিকরা যেরকম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন শ্রমিকরাও।’
তবে, ক্ষতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি বলে দাবি করেছেন যশোর জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, ‘এখনো পর্যন্ত সবকিছু বন্ধ। বাস, মিনিবাস, ট্রাক, মাইক্রো, প্রাইভেটকারসহ অন্যান্য মিলিয়ে যশোরে প্রতিদিন ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। প্রতিটি গাড়ি থেকে যদি এক হাজার করেও আয় হয় তাহলেও প্রতিদিন দু’কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সেইসাথে শ্রমিকরাও আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বেশিরভাগ শ্রমিকের প্রতিদিনের আয় থেকে সংসার চলে। তাদের পরিবারের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।’
বাস, ট্রাক, মাইক্রো, প্রাইভেটকারসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহনের চাকার সাথে জড়িয়ে আছে যশোরের কমপক্ষে ২৫ হাজার মানুষের ভাগ্য। চাকা ঘুরলেই সচল থাকে তাদের পরিবার-সংসার। গাড়ির স্টিয়ারিং ঠিক থাকলেই হাসি থাকে ওইসব পরিবারের সদস্যদের। এ কারণে নির্বিঘ্নে যানবাহনের চাকা সচল করতে চাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।