gramerkagoj
বৃহস্পতিবার ● ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১ ফাল্গুন ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে পুলিশের সংঘর্ষে নিহত ১৩
প্রকাশ : বৃহস্পতিবার, ১৮ জুলাই , ২০২৪, ০৭:৪৪:০০ পিএম
ঢাকা অফিস:
GK_2024-07-18_66991e54e98d8.JPG

কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশব্যাপী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেছে আন্দোলনকারীরা। এ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ঢাকাসহ সারাদেশ। এদিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (বিকেল ৬টা ) পর্যন্ত সংঘর্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে আহত হয়েছেন ৫ শতাধিক মানুষ।
নিহতদের মধ্যে রাজধানীর উত্তরা-আজমপুরে ৬ জন, বাড্ডা-রামপুরায় ২ জন এবং ধানমন্ডি, যাত্রাবাড়ী, সাভার, নরসিংদী ও মাদারীপুরে একজন করে মারা গেছেন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে দেশজুড়ে চলা ‘শাটডাউন’ কর্মসূচিতে রাজধানীর উত্তরা-আজমপুরে সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সংঘর্ষে আহত হয়ে শতাধিক ব্যক্তি চিকিৎসা নিতে এসেছিল। এদের মধ্যে চারজন মারা গেছে। ৭০ জন ভর্তি আছে। এছাড়া পাঁচজনকে অন্য হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। গুলিতে নিহতরা হলেন সামসুজ্জামানের ছেলে জাহিদুজ্জামান তানভির (২৫), আব্দুল জলিলের ছেলে সিরাজ (৩৫), মাহমুদের ছেলে আসিফ হাসান (২০) ও জসিম (৪৫)।
উত্তরায় অবস্থিতি বেসরকারি আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তিনি বেসরকারি নর্দান ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। হাসপাতালের প্রিন্সিপাল সাব্বির আহমেদ খান জানান, এই শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। পরে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত ১২০ জন এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে বলেও জানান তিনি।
অধ্যক্ষ আরও জানান, শতাধিক ছাত্র আহত অবস্থায় এ হাসপাতালে আসে। তাঁদের অনেককেই চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বেলা তিনটা পর্যন্ত হাসপাতালে প্রায় ৩০ জন আহত শিক্ষার্থী চিকিৎসাধীন ছিলেন। অধ্যক্ষ বলেন, আহতদের সংখ্যা এত বেশি যে হাসপাতালে স্থান দিতে তাঁদের সমস্যা হচ্ছে।
এদিকে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল হাসান সাংবাদিকদের বলেন, সেখানে ৪০০ জনের বেশি আন্দোলনকারী আহত হয়ে তাঁদের হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে একজন মারা গেছেন। তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। চিকিৎসক মাহমুদুল হাসান আরও বলেন, আহতদের মধ্যে ১০ থেকে ১২ জন চোখে আঘাত পেয়েছেন। তাঁদের বাংলাদেশ আই হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
রাজধানীর উত্তরায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও র‌্যাবের সংঘর্ষ শুরু হয় বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার পর থেকে।
ঘটনাস্থল থেকে জানা যায়, সকাল ১১টার দিকে স্থানীয় বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা উত্তরার জমজম টাওয়ারের সামনে জড়ো হন। পরে তাঁরা মিছিল নিয়ে মূল সড়কে উঠতে চাইলে পুলিশ ও র‌্যাব তাঁদের ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে। পরে সংঘর্ষ শুরু হয়।
রেসিডেনসিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী নিহত : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি চলছে। রাজধানীর ধানমন্ডিতে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী ফারহান নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) এ ঘটনা ঘটে। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থীর নিহতের ঘটনা নিশ্চিত করেছেন সিটি হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক ওসমান গণি।
বাড্ডা-রামপুরায় ২ জন নিহত : বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় পুলিশ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাতে একজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতের নাম দুলাল মাতবর। তিনি পেশায় ড্রাইভার। সংঘাতের সময় তিনি একটি হাইএস গাড়ি চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশংকাজনক অবস্থায় তাকে ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রুবেল হোসেন গণমাধ্যমকে নিহতের পরিচয় ও অন্যান্য তথ্য জানিয়েছেন। নিহতের মরদেহে বুকের কাছে একটি গোল ক্ষত চিহ্ন রয়েছে বলে তিনি জানান। তবে এটি বুলেটের ক্ষত কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। রুবেল জানান, আহত হয়ে হাসপাতালে প্রায় ১০০ জন পুলিশ ও শিক্ষার্থী এসেছেন। তাদের চিকিৎসা দিতে হাসপাতালের কর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন। আমাদের চিকিৎসক ও কর্মীরা আহতদের সারিয়ে তুলতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলেন তিনি।
এদিকে, রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় পুলিশ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে আরেকজন নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় সংঘর্ষে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টা পর্যন্ত দু’জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন শতাধিক।
নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম জিল্লুর রহমান। তিনি ইমরেপিয়াল কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার বাসা আফতাবনগরে। নিহত ওই শিক্ষার্থীর মরদেহ জাতীয় পতাকায় মুড়িয়ে তার বাড়ি আফতাবনগরে নিয়ে যায় ২৫০ থেকে ৩০০ জনের শিক্ষার্থীর একটি গ্রুপ।
নিহত জিল্লুরের চাচা মিসবাহ বলেন, আমার ভাতিজাকে নিথর অবস্থায় বাড়ি নিয়ে গেছি। এখন আমি বাড়িতে কি জবাব দেব?
যাত্রাবাড়ীতে একজন নিহত : রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সকাল থেকে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ চলে। সন্ধ্যার দিকে সেখান থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় এক রিকশাচালককে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান এক ব্যক্তি। পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত রিকশাচালকের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। তাঁর বয়স আনুমানিক ৩০ বছর।
সাভারে এমআইএসটি’র শিক্ষার্থী নিহত : কোটা সংস্কার আন্দোলনে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, নিহত ওই শিক্ষার্থী এমআইএসটিতে অধ্যয়নরত ছিলেন। সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসূফ আলী গণমাধ্যমকে বলেন, নিহত শিক্ষার্থীর শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তিনি বলেন, আহত আরও পাঁচ জনকে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পাকিজা এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা বাজার বাসস্ট্যান্ড অবরোধ করে পাকিজা এলাকার দিকে যান। সেখানে অবস্থান নেয় আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরা।
নরসিংদীতে স্কুলছাত্র নিহত : নরসিংদী সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে তাহমিদ তামিম (১৫) নামে এক স্কুলশিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে সদর উপজেলার ভেলানগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তাহমিদ তামিমের বাড়ি সদর উপজেলার চিনিশপুরে। সে নরসিংদী এন কে এম হোমস অ্যান্ড স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আরএমও মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, তার গায়ে রাবার বুলেটের চিহ্ন আছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৩টায় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নরসিংদীতে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে ৫০ জন আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
মাদারীপুরে কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু : মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে শকুনী লেকের পানিতে পড়ে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে ২৫ জন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি টিম। নিহত শিক্ষার্থী মাদারীপুর পৌর শহরের আমিরাবাদ এলাকার স্বপন দের ছেলে দীপ্ত দে। তিনি মাদারীপুর সরকারি কলেজের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়া এ ঘটনায় বিচ্ছিন্নভাবে ৮ জন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে সদর থানা পুলিশ।
জানা যায়, আন্দোলনকারীরা সকাল ১০টার দিকে ইউনাইটেড ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হয়। এ সময় প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে পৌর শহরের ডিসি ব্রিজ এলাকা দিয়ে পুরাতন কোর্টে দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। পরে সদর থানা পুলিশের সঙ্গে ছাত্রলীগ মিলিত হয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়। জবাবে শিক্ষার্থীও ধাওয়া দিলে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে প্রায় ২৫ শিক্ষার্থী আহত হয়। এক পর্যায়ে পুলিশের ধাওয়ার মুখে চার শিক্ষার্থী শকুনী লেকে লাফ দেয়। তাদের মধ্যে ৩ জন সাঁতরে পাড়ে উঠলেও দীপ্ত দে নিখোঁজ থাকেন। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন চেষ্টা চালিয়ে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকির বলেন, শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ একশ’ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। আর বিচ্ছিন্নভাবে ৮ জনকে আটক করেছে। সংঘর্ষের কারণে প্রায় দুই ঘন্টাব্যাপী সংঘর্ষে মাদারীপুর-শরীয়তপুর আঞ্চলিক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝