gramerkagoj
রবিবার ● ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
gramerkagoj
Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)
এ যুগেও ‘মানুষ’ বেচা-কেনার হাট!
প্রকাশ : শুক্রবার, ১২ জুলাই , ২০২৪, ০৪:০২:০০ পিএম , আপডেট : শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর , ২০২৪, ০৪:২৬:৪৪ পিএম
কাগজ ডেস্ক:
GK_2024-07-12_6690ff27dc451.jpg

এক সময় মানুষ বেচা-কেনা হতো মধ্যযুগে। কিন্তু আধুনিকতার যুগেও পণ্যের মতো বিক্রি হয় মানুষ! কাক ডাকা ভোরে শরীয়তপুরের জাজিরার কাজির হাটে ঝুড়ি, কোদাল, সাবল, দা, কাস্তে নিয়ে হাজির হয় হাজারো শ্রমিক। অভাবের তাড়নায় দুমুঠো অন্ন যোগাতে নিজেকে বিক্রি করতে আসেন এই হাটে। আরেক শ্রেণির মানুষ এই হাটে আসেন শ্রম কিনতে। এই হাট ভোর থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত চলে। বিভিন্ন যায়গা থেকে এসে শ্রমিকদের দরদাম করে কাজের জন্য নিয়ে যায়। বছরের প্রায় ১০ মাস চলে এই হাট।
জানা যায়, এই শ্রমজীবী মানুষের হাট জাজিরা উপজেলার কাজিরহাট বাজারের পূর্ব পাশের ঢাকা-শরীয়তপুর প্রধান সড়ক জুড়ে বসে। প্রতিদিন এই হাটে অন্তত দেড় হাজার শ্রমজীবী মানুষ টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন জায়গায় কাজে গিয়ে থাকেন। জেলার জাজিরা উপজেলার পাশাপাশি বিভিন্ন উপজেলাগুলো থেকে এসে কাজের প্রয়োজনে শ্রমিকদের দরদাম করে নিয়ে যাওয়া হয়।
সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নরসিংদী, সাতক্ষীরা, গাইবান্ধা, রংপুর, জামালপুর, গোপালগঞ্জসহ অন্তত ২৫টি জেলার শ্রমিকরা কাজ করছেন শরীয়তপুরে। পাট কাটা, ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করা, মাটি কাটার কাজ করে থাকেন তারা। কাজের ধরন হিসেবে এসব শ্রমিকের দাম নির্ধারণ হয়ে থাকে ৫০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা পর্যন্ত।‌ বর্ষা মৌসুমে পাট কাটার কাজ বেশি থাকলেও মাটি কাটার কাজ কম থাকায় অনেক শ্রমিক বেকার বসে থাকেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা কাজের জন্য দীর্ঘ সারি ধরে অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ ডেকে ডেকে ক্রেতাদের তাদের পারিশ্রমিকের কথা বলছেন। ক্রেতারা এসে তাদের সাথে দামাদামি করছেন। মূল্য নির্ধারণ শেষে গন্তব্যস্থলে রওনা হচ্ছেন। যারা অবিক্রীত রয়ে যায় তারা বাসায় ফিরে যাচ্ছেন।
সমছের নামের এক শ্রমিক বলেন, আমাদের জেলার আম বাগানে কাজ শেষ হলে শরীয়তপুর জেলায় চলে আসি। এখানে প্রচুর কৃষি কাজ আছে। প্রতিদিন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার বিনিময়ে মানুষ আমাদের কৃষাণ দিতে কিনে নিয়ে যায়। নিজেদের খরচের পর বাকি যা থাকে তা পরিবারের জন্য পাঠাতে পারি।
কাসেম নামে এক ব্যক্তি বলেন, আমরা বছরের ৪ মাস শরীয়তপুরে কৃষাণের কাজ করার জন্য চলে আসি। পাট কাটি, রসুন-পেঁয়াজ লাগাই। যখন কাজের চাহিদা বেশি থাকে আমাদের চাহিদাও বেড়ে যায়। তবে কাজ কমে আসলে পারিশ্রমিক কম পাই। প্রতিদিনের টাকা প্রতিদিন পাই বলে ভালো লাগে।
শ্রমিক কিনতে আসা জুলহাস বলেন, শ্রমিকের এই হাটটি অন্তত ৩০ বছর ধরে এখানে চলমান আছে। আমার অনেক পাটের জমি আছে। এই মৌসুমে আমি পাট কাটার জন্য কৃষাণ নিতে কাজিরহাটে চলে আসি। দামদর করে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে শ্রমিক নিয়ে যাই।
অবিক্রীত শ্রমিক সুজন বলেন, আজ আমি কাজ পাইনি। তাই বাধ্য হয়ে বাসায় চলে যাচ্ছি। কাজ থাকুক আর না থাকুক প্রতিদিন খাবারের জন্য ২০০ টাকা আর থাকার জন্য প্রতিমাসে ৪০০ টাকা গুনতে হয়। কাজ কম থাকলে আমাদের অনেক সমস্যায় পড়তে হয়।
‘মানুষ’ কেনা-বেচা হাটের বিষয়ে কাজিরহাট বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক টেপা বলেন, আমাদের কাজিরহাটে অন্তত ৩০ বছর ধরে শ্রমিক কেনা-বেচা হয়ে থাকে। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা এখানে কাজের সন্ধানে আসেন। হাটে দালাল কিংবা তৃতীয় পক্ষ না থাকায় ক্রেতারা নিজে এসে দামদর করে শ্রমিকদের কিনে নিয়ে যায়। আমরা বণিক সমিতি সব সময় এ হাটের বিষয়ে খোঁজখবর রাখি।

আরও খবর

Ad for sale 225 x 270 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
🔝