শিরোনাম |
ভারী বর্ষণে তলিয়ে গেছে খুলনা শহরের অধিকাংশ সড়ক ও নিম্নাঞ্চল। নগরীর অনেক সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। আজ শুক্রবার (১১ জুলাই) ভোররাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি একনাগাড়ে সকাল ১০টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। ভারী বর্ষণে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষ।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, মৌসুমি বায়ুর কারণে বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় খুলনা শহরে ৯৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। যার মধ্যে আজ শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৬৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজ সারাদিন বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এখন থেমে থেমে হলেও বিকেলের পর ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বৃষ্টিতে খুলনা নগরীর খালিশপুর মুজগুন্ন, বাস্তুহারা কলোনি, হাউজিং এলাকা, ফুলবাড়ী গেট, রেলগেট, মহেশ্বরপাশা, দৌলতপুর, নতুন রাস্তার মোড়, আলমনগর, নেভি চেকপোস্ট, রায়েরমহল, বয়রা বাজার, গল্লামারি, ময়লাপোতা, রয়েল মোড়, টুটপাড়া জোড়া কল বাজার, মহির বাড়ির খালপাড়, রূপসা ঘাট, নতুন বাজারসহ আরও কিছু এলাকা বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অল্প বৃষ্টিতেই নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে ৯টা পযর্ন্ত তীব্র বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন মোড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রায় তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে নগরীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির বিষয়টি নতুন নয়। গত কয়েক বছর ধরেই এমনটি দেখা যাচ্ছে। যেসব সড়কে উন্নয়ন কাজ চলছে সেসব সড়কে চলাচলে অতিরিক্ত দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ পলিথিনসহ নানারকম ময়লা, আবর্জনায় নালা-নর্দমার মুখগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ রকম ছোট ছোট সমস্যা বড় হয়েই বিভিন্ন সড়কের জলাবদ্ধতার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন নিয়মিতভাবে ড্রেন পরিষ্কার করে না। দায়সারা ড্রেন পরিষ্কার করলে এই পরিস্থিতিই হয়। পরিকল্পিত উপায়ে ড্রেনগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হলে এই জলাবদ্ধতা দূর করা যেত।
নগরীর মুজগুন্নী পার্ক এলাকার এক বাসিন্দা জানান, গতকাল বিকেলের বৃষ্টিতেই মুজগুন্নী মহাসড়ক ও আশপাশের সড়কগুলো তলিয়ে যায়। আজ ভোরে ধুম বৃষ্টি শুরু হয়। বৃষ্টিতে সড়কে হাঁটু সমান পানি হয়েছে। অনেকে নিচু এলাকায় মাছও ধরছে। সড়ক দিয়ে চলাচলে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। একই অবস্থা বাস্তুহারা কলোনিসহ শহরের বিভিন্ন এলাকার। সামান্য বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট। বাড়িতেও উঠে গেছে পানি।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) সূত্র জানিয়েছে, খুলনা সিটি কর্পোরেশন এলাকার মধ্যে সড়ক আছে প্রায় এক হাজার ২১৫টি, যার দুই-তৃতীয়াংশই বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশন জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পের আওতায় গত ছয় বছরে ১০৪টি ড্রেন পুনর্নির্মাণ করেছে। ময়ূর নদসহ সাতটি খাল পুনরায় খনন ও ৩২টি ড্রেনের সংস্কার চলছে। এতে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৫০২ কোটি টাকা।
খুলনা মহানগরের জলাবদ্ধতা দূরীকরণে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন নামে একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায় ২০১৮ সালের জুলাইয়ে। প্রকল্প ব্যয় ছিল ৮২৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের প্রথম ধাপের কাজ শুরু হয় ২০২০ সালের অক্টোবরে। নতুন প্রকল্পে এসব ড্রেনের কাভার দেওয়ার ফলে নগরবাসী খোলা ড্রেনে আর ময়লা ফেলতে পারছে না। কিন্তু আধুনিক ময়লা পরিষ্কার করার যন্ত্র না থাকায় এসব ড্রেনের ভেতর পানির প্রবাহে বয়ে আসা পলিথিন, চিপসের প্যাকেটসহ অন্যান্য ময়লা জমে ভরাট হয়ে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে নিম্নাঞ্চলের পানি অপসারণ হতে সময় লাগছে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের প্রধান কনজারভেন্সি অফিসার আনিসুর রহমান বলেন, আমরা নিয়মিত ড্রেন পরিষ্কার করি। তাছাড়া ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নে চলমান প্রকল্পগুলো এবং খাল খননের কাজ শেষ হলে এই জলাবদ্ধতার সমস্যা আর থাকবে না।