শিরোনাম |
চিকিৎসা শাস্ত্রে কোনো ডিগ্রি নেই। তবুও দেদারসে দিয়ে যাচ্ছেন ‘চিকিৎসা’সেবা। গ্রামের সহজ সরল মানুষদের ভুল বুঝিয়ে এলাকায় বনে গেছেন ‘বড় ডাক্তার’।
যশোরের বাঘারপাড়ার আব্দুল আলীম নামে ওই ব্যক্তি স্থানীয়দের কাছে বড় ডাক্তার!
স্থানীয়রা জানান, ডিগ্রি ছাড়াই নামের পাশে ডাক্তার লিখে রীতিমতো ‘আদর্শ মেডিকেল হল’ বাঘারপাড়া, রায়পুর, মণিরামপুরের রাজগঞ্জ, যশোর শহরের শংকরপুর এলাকায় ‘মেসার্স আলীম ফার্মেসি’ নামে চেম্বার খুলে বসেছেন। দীর্ঘ ২-৩ বছর ধরে এভাবেই ‘চিকিৎসা’ দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজের নামে প্যাড করে রোগীদের বিভিন্ন টেস্ট দিচ্ছেন। রোগী দেখার পর প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লিখে
দিচ্ছেন।
শুধু তাই নয়, উপজেলায় প্রায়ই দেখা যায়, ঢাকঢোল পিটিয়ে মাইকিং করে বিভিন্ন অফারসহ তার নানা প্রচার। তার চেম্বারে রোগী দেখার দিন সময় লেখা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা আব্দুল আলীমের অপচিকিৎসায় যে কোনো বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন। তারা বলছেন, আব্দুল আলীম চিকিৎসার নামে মানুষকে ঠেলে দিচ্ছেন মৃত্যুঝুঁকিতে।
বুধবার দুপুরে বাঘারপাড়া উপজেলা সদরের পাশে মহিরণ (ব্র্যাক অফিসের দক্ষিণে) চেম্বারে গিয়ে দেখা যায়, চেম্বার নিয়ে বসে আছেন আব্দুল আলীম। সিরিয়াল দিয়ে তিনি রোগী দেখছেন। রোগীপ্রতি তিনি ভিজিট নেন ২০০ টাকা। বিভিন্ন জটিল রোগের টেস্ট লিখে দিচ্ছেন অবিরাম। ওষুধ লিখছেন ডিগ্রিধারী ডাক্তারদের মতো। এর আগে রায়পুর বাজারে চেম্বার খুলে দীর্ঘ ১বছর রোগী দেখেছেন তিনি।
চেম্বারে গিয়ে দেখা গেল টেবিলের উপর রোগী দেখার সরঞ্জাম, হারবাল জাতীয় নামহীন কিছু ওষুধ মুছাফফী, আরক নানখা, দীনার জন্ডিস কিউর, ক্যালফেন, ব্রেন কেয়ার রোগীদের ধরিয়ে দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অংকের টাকা। লাইন ধরে চেয়ারে বসে আছেন রোগীরা।
কয়েকজন রোগীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রেসক্রিপশনে টেস্টও দিয়েছেন তিনি। একটি প্রেসক্রিপশনে দেখা গেল কিছু টেস্টসহ ১৩ প্রকারের ওষুধ লিখেছেন। ওই রোগীর কাছ থেকে তিন হাজার পাঁচশ’ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন রোগী প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে বলেন, ‘আমি অনেক দিন ধরে এখানে চিকিৎসা নিচ্ছি। আমরা তো জানি তিনি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার। তার ডিগ্রি নেই এ থা তো জানতাম না’।
এ বিষয়ে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার অরুপ জ্যোতি ঘোষ জানান, ‘কোনো ডিগ্রি নেই এমন ব্যক্তি টেস্টসহ প্রেসক্রিপশন দিতে পারেন না। নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবেন না। আমি সিভিল সার্জন স্যারের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নিব’।
প্রেসক্রিপশন ও টেস্ট লিখতে পারেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আব্দুল আলীম বলন, ‘আমার ভুল হয়েছে’। ডিগ্রির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি কিছু দিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের কাছে ট্রেনিং নিয়েছি’।